মার্শ পরিবারের গল্প by সামীউর রহমান

কাল দেখেই নাকি বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। খুদে শন ও মিচেলকে দেখে জিওফ মার্শ কি বুঝতে পেরেছিলেন? ছোটবেলাতেই নাকি বাবার ড্রেসিংরুমে ঢুকে যেতেন অস্ট্রেলিয়ার এই দুই ভবিষ্যৎ তারকা। যদিও 'ভবিষ্যৎ' শব্দটার ব্যবহার এখন না করলেও বোধহয় চলে। শন মার্শ তো আইপিএলে সর্বোচ্চ রান, অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি_এমন অনেক কীর্তি গড়ে তারকাখ্যাতি কিছুটা হলেও অর্জন করেই ফেলেছেন। ছোটভাই মিচেলও কম যান না, অধিনায়ক হিসেবে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপটা অস্ট্রেলিয়ায় ফিরিয়ে এনেছেন আট বছর পর। আলো ছড়িয়েছেন অভিষেক টোয়েন্টি-টোয়েন্টিতেও।


ছোটবেলায় বাবার বোলিং মেশিনে বল ভরে দেওয়ার কাজটা করতে করতে ক্রিকেটের প্রেমে মজে যাওয়া মার্শ ভাইদের গল্পটা এমনই। কম নন তাঁদের বোন মেলিসাও। নিজে পেশাদার বাস্কেটবলে নাম লেখালেও তাঁর মনের মানুষ ঠিকই ক্রিকেটের!
বাবা জিওফ মার্শ অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট কিংবদন্তিদের একজন। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ও তুখোড় ফিল্ডার, ৫০ টেস্ট ও ১১৭ ওয়ানডের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা সাফল্যে মোড়ানো। ১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন জিওফ। বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সেঞ্চুরি আছে তাঁর, লর্ডসের 'অনার্স বোর্ডে'ও নাম লিখিয়েছেন সেঞ্চুরি করে। খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর জাতীয় দলের কোচ ও নির্বাচকের দায়িত্বেও ছিলেন। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে টানা ৭ ওয়ানডে জিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া অস্ট্রেলিয়া দলের কোচ ছিলেন, জিম্বাবুয়ের কোচ ছিলেন ২০০১ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত। এ তো গেল ক্রিকেটার জিওফের কথা। ক্রিকেটে আসার আগে বেশ কিছুদিন অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবলও খেলেছিলেন জিওফ! তবে শেষ পর্যন্ত নাম লেখান ব্যাট-বলের খেলাতেই। বাবার এই স্বভাবটাই পেয়েছেন মিচেল। সেন্টার হাফ হিসেবে ফুটবল খেলা মিচেল সুযোগ পেতে পারতেন অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবলের প্রাদেশিক দলে। কিন্তু বাবার মতো তিনিও বেছে নিয়েছেন ক্রিকেট।
শন মার্শ অবশ্য ফুটবল ও ক্রিকেটের দোটানায় পড়েননি। ছোটবেলা থেকেই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান ক্রিকেট। বাবার মতোই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান শন। তবে বাবা জিওফ ছিলেন ডানহাতি আর শন ব্যাট করেন বাঁ হাতে। শন যে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একদিন খেলবেন, খুব অল্প বয়স থেকেই তা বেশ বোঝা যাচ্ছিল। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে তাঁর ঝুড়ি ঝুড়ি রান, দুবার খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। তখন থেকেই মাইকেল ক্লার্ক, শেন ওয়াটসন, মিচেল জনসন, ক্যামেরন হোয়াইটরা তাঁর বন্ধু ও সতীর্থ। বোঝাই যাচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়ার অনেক নতুন তারকার জন্ম দেবে এই প্রজন্ম। ছোট ভাইয়ের মতো শন মার্শও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্য। ঘরোয়া ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অনেক রান করলেও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিতিটা ঠিক সেভাবে ছড়াচ্ছিল না। সেই মওকাটা আসে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের প্রথম আসরে। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে টুর্নামেন্টের প্রথম চার ম্যাচ না খেলেও আসর শেষে সর্বোচ্চ রান তাঁর! তারপর ইনজুরির বাধা হয়ে দাঁড়ানোর সময়টুকু ছাড়া আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হয়নি তাঁকে। জাতীয় দলে অভিষেক টোয়েন্টি-টোয়েন্টি দিয়ে, ওয়ানডে অভিষেকে খুব কাছাকাছি গিয়েও পাওয়া হয়নি সেঞ্চুরির দেখা। তবে ৯৭ বলে ৮১ রানের ইনিংসের জন্য প্রথম ওয়ানডেতেই ম্যাচসেরা হয়েছিলেন শন। টেস্ট ম্যাচে অবশ্য এই আক্ষেপ থাকেনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টেই করেছেন সেঞ্চুরি। দর্শকের আসনে বসে সেটা দেখেছেন গর্বিত পিতা জিওফ।
সবচেয়ে মজার ব্যাপারটা হচ্ছে, বাবা জিওফ কিন্তু কখনোই ছেলেদের ক্রিকেট খেলার জন্য জোর করেননি! বছরদুয়েক আগে আইপিএল খেলতে ভারতে এসে স্থানীয় একটি পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই কথাই বলেছিলেন শন, ছোটভাই মিচেল তখনো ফুটবল নিয়েই ব্যস্ত, 'তিনি আমাদেরকে আমাদের মতো করেই বড় হতে দিয়েছেন। কখনো নিজের চিন্তাভাবনা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেননি।' সাক্ষাৎকার দেওয়ার কদিন আগেই মিচেল রাজ্য দলের একটি ট্রায়াল ম্যাচে ৮ গোল করেন। মিচেল ফুটবলে আসবেন না ক্রিকেটে_এই নিয়েও কোনো সিদ্ধান্ত পরিবার থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি, 'তার পথটা সে-ই খুঁজে নেবে' বাবা হিসেবে জিওফ এ কথাই বলেছিলেন বলে জানান শন মার্শ। মিচেল অবশ্য পথটা খুঁজে পেয়েছেন ক্রিকেটেই। তাই অস্ট্রেলিয়ার চলতি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ভাইয়ের সঙ্গে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। অভিষেক টোয়েন্টি-টোয়েন্টিতে দলকে জেতাতে না পারলেও ব্যাট হাতে খেলেছিলেন ২১ বলে ৩৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। একজন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান, অন্যজন অলরাউন্ডার। শুরুতে অস্ট্রেলিয়া দলে স্টিভ ও মার্ক ওয়াহ'র পরিচয়টা তো এমনই ছিল! মার্শ ভাইয়েরাও যে একদিন ওয়াহ ভাইদের মতো অস্ট্রেলিয়া দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে যাবেন, সেই সম্ভাবনা কিন্তু অনেকটাই স্পষ্ট।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার নর্থামের মার্শ পরিবারের গল্পটা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে শন ও মিচেলের বোন মেলিসার কথাটা একেবারেই না বললে। ক্রিকেট ফুটবল নয়, মেলিসা খেলেন বাস্কেটবল। অস্ট্রেলিয়ার মহিলা বাস্কেটবল লিগের ওয়েস্ট কোস্ট ওয়েভস দলে খেলেন ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা মেলিসা। তবে মন কিন্তু দিয়েছেন এক ক্রিকেটারকেই। বাবা জিওফ যখন জিম্বাবুয়ের কোচ, তখন শন আরভিনের সঙ্গে পরিচয়। জিম্বাবুয়ের এই শ্বেতাঙ্গ অলরাউন্ডারের সঙ্গে পরিচয়টা বদলেছে পরিণয়ে। বাবা, দুই ভাই, তারপর স্বামীও ক্রিকেটের মানুষ। নিজে বাস্কেটবল খেললে কী হবে, মেলিসার সঙ্গে ক্রিকেটের সম্পর্কটাও তো অবিচ্ছেদ্য! ঘ

জিওফ মার্শ ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের কোচও ছিলেন সাবেক এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। বর্তমানে কাজ করছেন শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে।

জিওফ মার্শ ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের কোচও ছিলেন সাবেক এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। বর্তমানে কাজ করছেন শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে।

পারিবারিক প্রথায় ২২ গজে না এসে মেলিসা মার্শ খেলছেন বাস্কেটবল। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ওয়েভস দলে খেলেন মার্শ তনয়া। তবে মন দিয়েছেন এক ক্রিকেটারকেই, বাবার চাকরিসূত্রে জিম্বাবুয়েতে থাকার সময় অলরাউন্ডার শন আরভিনের সঙ্গে গড়ে ওঠা প্রেম গড়িয়েছে বিয়েতে।

পারিবারিক প্রথায় ২২ গজে না এসে মেলিসা মার্শ খেলছেন বাস্কেটবল। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ওয়েভস দলে খেলেন মার্শ তনয়া। তবে মন দিয়েছেন এক ক্রিকেটারকেই, বাবার চাকরিসূত্রে জিম্বাবুয়েতে থাকার সময় অলরাউন্ডার শন আরভিনের সঙ্গে গড়ে ওঠা প্রেম গড়িয়েছে বিয়েতে।

No comments

Powered by Blogger.