চিড় ধরা বন্ধুত্ব জোড়া দেওয়ার অঙ্গীকার যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের

পাকিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় মার্কিন চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) হামলায় হাক্কানি নেটওয়ার্কের সামরিক শাখার কমান্ডার জামিল হাক্কানিসহ কমপক্ষে ১০ জঙ্গি নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার উত্তর ওয়াজিরিস্তানের ডান্ডি ডারপাখেল গ্রামে ও উত্তর ওয়াজিরিস্তানের বিরমাল এলাকায় পৃথক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাঁরা নিহত হন।একই দিন চিড় ধরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মেরামতের মাধ্যমে জোরদার করার অঙ্গীকার করেছে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র। গতকালের ড্রোন হামলার কয়েক ঘণ্টা পর রাজধানী ইসলামাবাদে মার্কিন বিশেষ দূত মার্ক গ্রসম্যান ও পাকিস্তানি নেতৃত্বের মধ্যে বৈঠক থেকে দুই দেশের সম্পর্ককে জোরদার করার ঘোষণা আসে।


এর আগে গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন প্রথমবার প্রকাশ্যে স্বীকার করে, পাকিস্তানে জঙ্গিবিরোধী 'যুদ্ধে' লিপ্ত হয়েছে তারা। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেট্টার এ ঘোষণার দুদিন পর হাক্কানি নেটওয়ার্কের শীর্ষস্থানীয় নেতা ড্রোন হামলায় নিহত হলেন।
বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ওয়াশিংটনে বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, প্রতিবেশী আফগানিস্তানে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে পাকিস্তানের সঙ্গে একযোগে কাজ করার বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিকল্প নেই। তবে হিলারি স্বীকার করেন, দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক 'খুবই জটিল' ধরনের। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স (আইএসআই) সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে_সম্প্রতি প্রকাশ্যে ওয়াশিংটনের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন করে টানাপড়েন দেখা দেয়। এর পর হিলারি দুই দেশের সম্পর্কের জটিলতার ব্যাপারে প্রথম মুখ খুললেন।
জামিল হাক্কানিসহ ১০ জঙ্গি নিহত হওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানি এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ডান্ডি ডারপাখেল গ্রামে জামিলের ঘাঁটি লক্ষ্য করে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এতে জামিলসহ চারজন নিহত হয়। মিরানশাহ শহরের উত্তরে সংঘটিত এ হামলার ব্যাপারে পাকিস্তানি গোয়েন্দা কার্যালয়ও নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, 'হাক্কানি নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ আফগান কমান্ডার জামিল হাক্কানিকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় এবং এতে তিনি মারা যান।' বিরমাল এলাকায় ড্রোন হামলার ব্যাপারে ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, 'সেখানে ড্রোন থেকে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এতে ছয় জঙ্গি মারা যায়।' এই বিরমাল এলাকাটি আফগান সীমান্তের খুব কাছে।
গতকাল ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মার্কিন দূত গ্রসম্যান ও পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানী খার বৈঠক করেন। বৈঠকে উভয় পক্ষের স্বার্থে দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত কৌশলগত আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হন তাঁরা। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গ্রসম্যান বলেন, 'বৈঠকে আমরা ভবিষ্যতের ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করার চেষ্টা করেছি। কৌশলগত আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও একমত হয়েছি।' পাকিস্তান ও আফগানিস্তানবিষয়ক মার্কিন এ বিশেষ দূত বলেন, 'পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারি_এমন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় চিহ্নিত করতে পরিকল্পিত পথে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি।'
হিনা রাব্বাবি বলেন, 'দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের ব্যাপারে দুই পক্ষের অবস্থান এক। তাই দুই দেশের সম্পর্ক বৈশ্বিক পর্যায়েও গুরুত্বপূর্ণ।' তিনি বলেন, 'কেবল দুই পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এ অঞ্চলসহ পুরো বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে, তার ভিত্তিতে ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্ককে তৈরির ব্যাপারে উভয় পক্ষ কাজ করবে।'
আগামী ২ নভেম্বর ইস্তাম্বুলে শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর পর ৫ ডিসেম্বর বনে এ সম্মেলন হওয়ার কথা। এ দুই সম্মেলনে এ অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা হবে। সূত্র : এএফপি, এপিপি, ডন।

No comments

Powered by Blogger.