শামীম ওসমান পেলেন আ. লীগের সমর্থন by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য ও দিলীপ কুমার মণ্ডল

ব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমানকেই সমর্থন দিল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার শামীম ওসমানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন তিন সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ। তাঁরা নির্বাচনী কার্যালয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে শামীম ওসমানের নাম ঘোষণা করেন।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আহমদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা নারায়ণগঞ্জে গিয়ে শামীম ওসমানকে দলের পক্ষ থেকে সমর্থন দিয়ে এসেছি। তিনিই আওয়ামী লীগের প্রার্থী।'


এর আগে গতকালই ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় ফোরামে বৈঠক করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ করণীয় ঠিক করবে।গত রাতে শহরের ২ নম্বর রেলগেটে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, 'নির্বাচনী আচরণ মানতে গিয়ে অনেক কিছুই বলতে পারছি না।' মিডিয়াকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'এখানে কেন এসেছি, তা সহজেই অনুমান করতে পারছেন।' সাংবাদিকদের বুদ্ধিজীবী সম্বোধন করে তিনি বলেন, 'বুদ্ধিমানরা সহজেই সব কিছু বুঝতে পারেন।' তিনি আরো বলেন, 'জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জের তৃণমূল আওয়ামী লীগের মতামতকে সম্মান জানিয়েছেন। এ সম্মানের ফল যেন নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারেন, সেই দায়িত্ব নারায়ণগঞ্জবাসীর ওপর দিয়ে গেলাম।'আহমদ হোসেন বলেন, 'শেখ হাসিনার ডান হাত নারায়ণগঞ্জ আর বাম হাত হচ্ছে গাজীপুর।' শামীম ওসমানকে বিজয়ী করে এ হাতকে আরো শক্তিশালী করতে তিনি নারায়ণগঞ্জের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান।
সভায় আবু সাঈদ এমপি বলেন, 'আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার মেসেজ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে এসেছি। সব গুজব আর মিথ্যাচারকে উড়িয়ে দিয়ে আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, এ মুহূর্ত থেকে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একমাত্র সমর্থিত প্রার্থী জননেতা এ কে এম শামীম ওসমান।' তিনি আরো বলেন, 'শেখ হাসিনার জন্য শামীম ওসমান জীবন বাজি রেখে রাজনীতি করছেন। নারায়ণগঞ্জের যত বড় উন্নয়ন, তা শামীম ওসমানের আমলেই হয়েছে।' আরো উন্নয়নে শামীম ওসমানকে দেয়ালঘড়ি প্রতীকে সবাইকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, 'যে শামীম ওসমানের রাজনীতি ছাত্রলীগ দিয়ে শুরু, যিনি বারবার জনগণের সেবা করতে গিয়ে জেল-জুলুম, অত্যাচার, হত্যার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন; যিনি শেখ হাসিনার কাছে পোড় খাওয়া নেতা হিসেবে আস্থা লাভ করেছেন, সেই শামীম ওসমানকে আমরা মেয়র পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থন দিয়ে গেলাম। আশা করি, আজকের পর থেকে আর কোনো দ্বিধা বা সংশয় থাকবে না।'
আবদুল্লাহ আল কায়সার এমপি শামীম ওসমানকে সমর্থন করে তাঁকে আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থী হিসেবে সবাইকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় শামীম ওসমান বলেন, 'আমরা নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই, কেননা তিনি তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করেছেন। তিনি মেয়র পদপ্রার্থী আইভীকে আবারও বোন সম্বোধন করে বলেন, আসুন, আগামী দিনে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি।' তিনি আইভীকে প্রথম আলো পত্রিকার সংবাদে বিভ্রান্ত না হয়ে উন্নত নারায়ণগঞ্জ গড়তে ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেয়ালঘড়ি প্রতীকে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করেন।
এদিকে সেলিনা হায়াত আইভীর প্রার্থিতা এখনো বহাল থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।' আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, 'তিন সাংগঠনিক সম্পাদক কিভাবে শামীম ওসমানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন, জানি না। কারণ দল এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমার জানা নেই। যেহেতু এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়তে হয় না, তাই আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।'
এ ব্যাপারে ঢাকা থেকে যোগাযোগ করা হলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁরা নারায়ণগঞ্জ গেছেন শামীম ওসমানের প্রচারের কাজ তদারক করতে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শামীম ওসমানকে বিজয়ী করার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের মানুষ তাদের জয়ের ধারা অব্যাহত রাখবে।
আওয়ামী লীগে সেলিনা হায়াত আইভীর অবস্থান এবং নারায়ণগঞ্জে তাঁর জনপ্রিয়তার কথা বিবেচনায় রেখেই এত দিন দলের পক্ষ থেকে কাউকে সমর্থন না দিয়ে কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত শামীম ওসমানকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল।
১০ দিন ধরে দফায় দফায় বৈঠক, দুই প্রার্থীকে দলীয় পদ দেওয়া, প্রতিমন্ত্রী কিংবা সংসদ সদস্য বানানোর মতো নানা ফর্মুলায় গিয়েও শেষ পর্যন্ত শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভীর মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সমঝোতায় পেঁৗছাতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মতে, দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানকে প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনে বিজয়ের কৌশলগত সুবিধার জন্য ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর নাম বিবেচনায় এসেছিল। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছিল আওয়ামী লীগ। আবার এ দুই নেতার একজনকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে আনতে না পারলে ফলাফল দলের বিপক্ষে চলে যেতে পারে_এমন আশঙ্কাও রয়েছে দলের নীতিনির্ধারকদের।
এ ব্যাপারে মতামত জানতে সেলিনা হায়াত আইভীর মোবাইল ফোনে গত রাতে অনেকবার কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
জানা গেছে, দলীয় কার্যালয়ে গতকালের সভায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার (তাঁর নির্বাচনী এলাকা সাবেক সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা সিটি করপোরেশনভুক্ত), শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, সিদ্ধিরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মুজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম সাগর, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ সাইফ উল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলীসহ জেলা, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী।
শামীম দেয়ালঘড়ি আইভী দোয়াত-কলম তৈমূর আনারস

No comments

Powered by Blogger.