পার্লামেন্টে পিপিপি-পিএমএল (এন) তুমুল হৈচৈ : সীমান্ত পেরিয়ে হামলা বরদাশত করবে না পাকিস্তান - কায়ানি

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানি বলেছেন, তার দেশের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান থেকে হামলা চালানো হচ্ছে। তবে এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলা বেশিদিন সহ্য করা হবে না বলে সতর্ক করে দেন তিনি। উল্লেখ্য, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে মার্কিন বিশেষ দূত মার্ক গ্রোসম্যান গতকাল দুই দেশের শীর্ষ রাজনীতিক এবং সামরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। গ্রোসম্যান পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আশফাক কায়ানির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। উভয় কর্মকর্তা হাক্কানি নেটওয়ার্ক এবং অন্য নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠককালে কায়ানি মার্কিন বিশেষ দূতকে বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।


কায়ানি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সীমান্ত অতিক্রম করে কোনো হামলা বরদাশত করা হবে না। পাকিস্তানি সেনাপ্রধান পারস্পরিক সহযোগিতায় আরও ভালো দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। সেনাপ্রধান আরও বলেন, তার দেশ পাক-আফগান সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাসীদের আসা-যাওয়া বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি ত্রিদেশীয় কমিশন জোরদার করার আহ্বান জানান। বৈঠককালে গ্রোসম্যান বলেন, দুই মিত্র দেশের সম্পর্কের টানাপড়েন অস্থায়ী। উভয় দেশকে সম্পর্ক ভালো করার জন্য চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলে পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশ সন্ত্রাসী হুমকির মধ্যে রয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র চায় পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। গ্রোসম্যান প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খারের সঙ্গেও দেখা করেছেন। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপজাতীয় এলাকায় মার্কিন পাইলটবিহীন বিমান বা ড্রোন হামলায় হাক্কানি নেটওয়ার্কের এক কমান্ডারসহ অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ খবর নিশ্চিত করেছেন। গতকাল উত্তর ওয়াজিরিস্তানের দান্দে দারপা খেল এলাকায় মার্কিন ড্রোন বিমান থেকে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হাক্কানি নেটওয়ার্কের অন্যতম কমান্ডার ৩৩ বছর বয়সী জলিল হাক্কানি নিহত হয়েছেন। জলিল হাক্কানি নেটওয়ার্কের অপারেশন ও সমন্বকের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন বলে পশ্চিমা গণমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে।
মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি মার্ক গ্রোসম্যান যখন পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাজধানী ইসলামাবাদে আলোচনা করছেন, তখন এ হামলা চালানো হলো। হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসাজশ রয়েছে—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামাবাদ এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে তীব্র টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে পাকিস্তান সফর করছেন মার্ক গ্রোসম্যান।
এদিকে ১২ অক্টোবর ছিল সেনা অভ্যুত্থান দিবস। এ উপলক্ষে গতকাল পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে ক্ষমতাসীন পিপিপি এবং বিরোধী দল পিএমএল-এন যৌথভাবে ১৯৯৯ সালের ওই সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানায়। তবে বিতর্কের একপর্যায়ে উভয়পক্ষ সামরিক একনায়ককে সমর্থন দেয়ার জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করা শুরু করে। এ ঘটনার সূত্রপাত হয় পিএমএল-এন সদস্যরা সাবেক সামরিক একনায়কের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার দাবি এবং বর্তমান শাসকদের বিরুদ্ধে তাকে গুপ্ত চুক্তির আওতায় রক্ষা করার অভিযোগ করলে। পিএমএল-এন এমপি আহসান ইকবাল, ক্যাপ্টেন (অব.) মোহাম্মদ সফদার এবং খাজা সাদ রফিক কঠোর ভাষায় কেবল জেনারেল মোশাররফের নীতি নয়, সেই সঙ্গে বর্তমান পিপিপি সরকারকেও তার জেনারেল মোশাররফের সম্মানজনক দেশত্যাগের সমালোচনা করে। তারা অভিযোগ করেন, পাকিস্তান বর্তমানে যে সঙ্কটের মুখোমুখি তার জন্য মোশাররফই দায়ী। তারা তার ফাঁসির দাবি জানান।
প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির সামনেই প্রবল বিরোধপূর্ণ ওই বিতর্ক হয়। পিপিপির নাদিম আফজাল বলেন, তারা এবং এমনকি বিচারকরা পর্যন্ত কেন একজন উর্দি পরিহিত ব্যক্তিকে সংবিধান নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মাহমুদের পুনর্বহালের বিষয়টি পিএমএল-এন নিজেদের কৃতিত্ব বলে দাবি করতে পারবে না। আইএসআইর হস্তক্ষেপে তার পুনর্বহাল কাজ সম্পন্ন হয়। তাদের লংমার্চের সুফল নয় এটা। বিরোধী লংমার্চ কেবল নাটক ও প্রহসন।

No comments

Powered by Blogger.