সারওয়ানের পথ ধরে সিমন্স by সামীউর রহমান

দুজনেই ডানহাতি ব্যাটসম্যান, এ ছাড়া আর কোনো মিল নেই রামনরেশ সারওয়ান ও লেন্ডল সিমন্সের মধ্যে। সারওয়ান গায়ানার আর সিমন্স এসেছেন ত্রিনিদাদ থেকে। প্রথমজন ব্যাট করেন মিডল অর্ডারে, অন্যদিকে সিমন্স পুরোদস্তুর ওপেনার। বাংলাদেশ সফরের দলে নেই সারওয়ান, সিমন্স আছেন। কিন্তু না থেকেও যেন স্মৃতিতে ফিরে এলেন এ গায়ানিজ, বাংলাদেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেউ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেলে যে তাঁর কথাই বড় বেশি মনে হয়!২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ভারত হয়ে। ভারতে খেলা ৭ ওয়ানডে আর ২ টেস্টে বেশ কয়েকবারই সেঞ্চুরির খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন সারওয়ান, একবার তো ৯৯ রানে ছিলেন অপরাজিত।


কিন্তু তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার তাঁর জন্য থেকে গিয়েছিল অধরাই। সেই অতৃপ্তি ঘুচেছিল ঢাকার মাঠে, টেস্ট এবং ওয়ানডে দুই ঘরানার ক্রিকেটেই সেঞ্চুরি। লেন্ডল সিমন্সের গল্পটাও এমনি। দেশের মাটিতে পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে শুরুটা ভালোই করছিলেন এ ডানহাতি, কিন্তু থেমে যাচ্ছিলেন মাঝপথে। সবশেষ ৯ ইনিংসের ৬টিতেই হাফ সেঞ্চুরি করেছেন সিমন্স, পাকিস্তান সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে হয়তো সেঞ্চুরিও করে ফেলতেন। কিন্তু প্রথমে ব্যাট করে ১৩৯-এর বেশি করতে না পারা পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০ উইকেটে জয়ের ম্যাচে অপরাজিত ৭৭ রানেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল সিমন্সকে। এত দিন ধরে এই রানটাই হয়েছিল তাঁর ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ, গতকাল সেই অপরাজিত ৭৭কে পাশ কাটিয়ে করেছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। ২৬ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে এত দিন শতরানের ঘরটা ছিল ফাঁকা, ওয়াল্টন ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেই শূন্যস্থানটাও পূরণ করে নিলেন সিমন্স। টেস্ট সিরিজের দলে অবশ্য জায়গা হয়নি তাঁর। তাই টেস্টে এখনো হাফ সেঞ্চুরি করতে না পারা সিমন্স সুযোগটা পাচ্ছেন না সারওয়ানের মতো একই সফরে টেস্ট ও ওয়ানডের প্রথম শতক করার।
চ্যাম্পিয়নস লিগ টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর হয়ে খেলে উপমহাদেশের উইকেটের সঙ্গে বেশ খানিকটা অভ্যস্তই হয়ে গিয়েছেন সিমন্স। যদিও ফতুল্লার প্রস্তুতিমূলক ওয়ানডে ও টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে সেই ছাপটা ছিল না। ওয়ানডেতে করেছিলেন মাত্র ৪ আর টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে ১২। সফরের একমাত্র আন্তর্জাতিক টোয়েন্টি টোয়েন্টিতেও বড় কোনো সংগ্রহ ছিল না তাঁর, মাত্র ২৩ রান করেই ফিরেছিলেন ডাগআউটে। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও শুরুতে ছিলেন সাবধানী, তবে ধীরে ধীরে উইকেটের গতি ও বাউন্সের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পর মেলে ধরেছেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি। প্রথম বাউন্ডারি সপ্তম ওভারে, ৫৪ বলে ৫০ রানে পেঁৗছাতে তাঁর বাউন্ডারি মাত্র চারটি। ধীরে ধীরে ইনিংসের গতি বাড়ানো সিমন্সের কোপটা সবচেয়ে বেশি টের পেয়েছেন আবদুর রাজ্জাক ও শফিউল ইসলাম। তাঁর দুটি ছক্কাই রাজ্জাকের বলে, লং অন দিয়ে। শতরান করার পর ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে শফিউলের এক ওভারেই চারবার বল পাঠিয়েছেন সীমানা দড়ির ওপারে। আর তাঁর ১২২ রানের ইনিংসের ইতিটা হয়েছে খানিকটা দৃষ্টিকটুভাবেই। রুবেল হোসেনের বলে হাঁটু মুড়ে শর্ট ফাইন লেগে খেলার চেষ্টায় ক্যাচ দিয়েছেন অলক কাপালির হাতে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে ছয়-চারের বৃষ্টি ঝরানো ক্রিস গেইল নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে। তাঁর জায়গায় ইনিংসের সূচনা করতে নামা সিমন্সের ছায়া লড়াইটা তাই গেইলের সঙ্গেই। তাঁর মতো আতঙ্ক হয়তো ছড়াতে পারছেন না সিমন্স, তবে আস্থার জায়গাটায় কিন্তু জ্যামাইকান বাঁহাতির চেয়ে খুব বেশি দূরে নেই তিনি।

No comments

Powered by Blogger.