গ্রামীণ ব্যাংকের স্থিতিশীলতা রক্ষায় হিলারিকে দীপু মনির আশ্বাস

নগণের কাছে করা বাংলাদেশ সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এবং উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। আগামী বছর বাংলাদেশ সফরে আসার বিষয়ে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গত বুধবার বিকেলে (বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ১টায়) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে পররাষ্ট্র দপ্তরে হিলারির সঙ্গে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি তাঁকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।দুই বছরেরও বেশি সময় পর হিলারি ক্লিনটন ও ডা. দীপু মনি বৈঠক করেন।


সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রায় ৪৫ মিনিটব্যাপী বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করার লক্ষ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যুগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার প্রশংসা করেন হিলারি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার প্রসঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বিচারের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেন। দীপু মনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে হিলারি আগামী বছর বাংলাদেশে আসার কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকেও বাংলাদেশ সফরে আসার আমন্ত্রণ জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ এরই মধ্যে অন্যদের কাছে অনুকরণীয় দেশ (মডেল) হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন। যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ কো-অপারেশনের (এমসিসি) আওতায় সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের অনুরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে।
উল্লেখ্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের পর যুক্তরাষ্ট্র এমসিসির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত সাহায্য দেওয়া স্থগিত করে। বাংলাদেশ ওই সাহায্য পাওয়ার যোগ্য বলে উল্লেখ করে ডা. দীপু মনি সাহায্য দিতে হিলারি ক্লিনটনকে অনুরোধ জানান।
এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রসঙ্গে আলোচনার সময় হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধবিষয়ক বিশেষ দূত (অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ) স্টিফেন জে র‌্যাপের বৈঠকগুলো নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। হিলারি আশা করেন, ওই বিচার আন্তর্জাতিক মানের হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে বাণিজ্য খাতেও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের স্থিতিশীলতা রক্ষার অঙ্গীকার : আগামী দিনগুলোতে গ্রামীণ ব্যাংকের স্থিতিশীলতার বিষয়ে হিলারি ক্লিনটন জানতে চাইলে ডা. দীপু মনি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংকটির স্থিতিশীলতা, সুষ্ঠু কার্যক্রম এবং সাফল্য রক্ষায় সরকারের অঙ্গীকারের কথা জানান। তিনি বলেন, ঋণগ্রহণকারীদের কল্যাণের স্বার্থে সরকার গর্বের সঙ্গে ওই অঙ্গীকার করেছে।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত পাঠানোর অনুরোধ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি হিলারি ক্লিনটনকে বলেন, অপরাধের ৩৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যের খুনিদের বিচার বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ফেরারি ছয় খুনির মধ্যে এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে লেখা এক চিঠির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিচার সমুন্নত রাখতে আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশে ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় হিলারি ক্লিনটন জানান, বিষয়টি বিচারিক প্রক্রিয়ায় আছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এ বিষয় দেখবে বলে তিনি দীপু মনিকে আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দাবি : দীপু মনি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাক প্রবেশের ক্ষেত্রে অত্যধিক শুল্ক আরোপ করা হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি বদলানোর জন্য তিনি হিলারি ক্লিনটনকে অনুরোধ জানান।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে বৈঠকে সহযোগিতা করেন দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেক।
স্বাধীন গণমাধ্যম বাংলাদেশের গর্ব : যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সে দেশের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ও ব্লেক গত বুধবার ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলে ''মিট বাংলাদেশ : এ 'নেঙ্ট ইলাভেন' ইমার্জিং ইকোনমি অ্যান্ড এ ইউএস স্ট্র্যাটেজিক অ্যালাই ইন সাউথ এশিয়া" শীর্ষক ব্র্যান্ডিং অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে শক্তিশালী গণমাধ্যম ও কার্যকর গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে তাঁর দেশের প্রত্যাশার কথা জানান। বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম ও ইউএস বাংলাদেশ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের যৌথ আয়োজনে ওই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিও উপস্থিত ছিলেন।
ব্লেক বলেন, প্রগতিশীল সুধী সমাজের মতো ৩০০-এরও বেশি সংবাদপত্র, অসংখ্য রেডিও, টেলিভিশন ও ওয়েবসাইট তথা মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম বাংলাদেশের গর্ব। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অপরিহার্য। গণমাধ্যমকে অবশ্যই আরো শক্তিশালী হতে এবং গণমাধ্যমের বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে।
ব্লেক আরো বলেন, সুধী সমাজ এবং বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকের অংশগ্রহণ না থাকলে বাংলাদেশ এত কিছু অর্জন করতে পারত না।
ব্লেক বলেন, বাংলাদেশ ২০১৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের একটি অন্যতম দেশ হবে। এ দেশটি 'নেঙ্ট-১১' হিসেবে বেশ সুবিধাও পাবে।
'প্রবৃদ্ধির অংশীদার' কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা : যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) প্রশাসক ড. রাজীব শাহ বলেছেন, ইউএসএআইডির 'প্রবৃদ্ধির অংশীদার' কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। আর তা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারসহ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবে। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে এক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে তিনি এ কথা জানান।

No comments

Powered by Blogger.