ফুলঝুরি পাখি by মিজানুর রহমান খবির

পাখির গানে সদা মুখরিত আমাদের এই সোনার বাংলাদেশে বাস করে হাজারো পাখি। এদের কেউ কেউ গান গায়, আবার কেউ গায় না। আমরা সর্বসাকুল্যে কতগুলো পাখির নাম জানি বা চিনি তার হিসাব কখনো করে দেখি না। আর দেখি না বলেই ছোট ছেলে মেয়েদের পরিচয় করিয়ে দিতে পারি না অনেক সাধারণ পাখির সঙ্গেও। যেমন_ আমাদের বাড়ির আশপাশেই ঝোপের কাছাকাছি ঘুরে বেড়ায় আকারে ছোটখাটো চড়ূই বা টুনটুনির মতো এক দুষ্ঠু পাখি, আমরা অনেকেই যার নাম জানি না।

দ্রুতগতিতে উড়তে পারা এ পাখিটির নাম ফুলঝুরি। লম্বায় ৮-১০ সে.মি. পর্যন্ত হয়। বেশির ভাগ প্রজাতির গায়ের রং সাধারণত উজ্জ্বল। সামান্য কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে যাদের পালক হালকা ও ফ্যাকাশে বণরাউর। পুরুষ পাখির গায়ের রং অপেক্ষাকৃত বেশি উজ্জ্বল। শুধু তাই নয়, পালকের বিভিন্ন স্থানে চটকদার নকশার মতো গাঢ় লাল ও চকচকে নীল কালো রঙের নকশা দেখা যায়, যা এর সৌন্দর্যকে করছে আরো আকর্ষণীয়। ডানাগুলো তুলনামূলক দীর্ঘ ও সুচালো, লেজ মোটা ও খাটো পালকে গঠিত। ঠোঁটের আকৃতি মোচার মতো, তবে লম্বায় ছোট। সুমিষ্ঠ স্বরে ডেকে ওঠে। গবেষকরা একে গায়ক পাখির দলে ঠাঁই দিয়েছেন। খাবারে বেশ রুচিশীলতা আছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। কেননা শুধু কীটপতঙ্গই এদের খদ্যো নয়, নানা রকম ফল আর মধুও রয়েছে এদের খাবারের তালিকায়। বাসা বানানোর ক্ষেত্রে সুবিধাবাদী অবস্থানের পরিচয় মেলে। যেসব গাছ থেকে এরা খদ্যো পায় সেসব গাছ কিংবা কাছাকাছি গুল্ক্ম বা চা গাছে পাতার আড়ালে বাসা বানায়। বাসাগুলো ঝুলন্ত। বাইরের দিকটা চমকপ্রদ, বুনন কৌশলে খড়-কুটা, ঘাস-বিচালি দিয়ে কাঠামো বানিয়ে ভেতরে তুলা ও আঁশ জাতীয় নরম বস্থু ঠেসে দেয়। ডালের সঙ্গে শক্ত হয়ে লেগে থাকে, পাতার আড়ালে বলে তেমন একটা নজরেও পড়ে না। তাই নিশ্চিনেস্ন ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে। বাংলাদেশে এর প্রজাতি সংখ্যা ৭টি।
প্রজাতি ভাগ করা হয়েছে পুরু ঠোঁট, পেছনের দিকে হলদু, মসৃণ রং দেহ, পশ্চাৎ দিক টুকটুকে লাল, পরজীবী স্বভাব, পেটের দিক কমলা রঙের ও হলদু বণরাউর। পালকের ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়া, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় এদের ৫৫টি প্রজাতি রয়েছে। চিরসবুজ বনাঞ্চল, সুন্দর বনের গরান অঞ্চলসহ দেশের প্রায় সর্বত্রই এদের দেখা মেলে।

No comments

Powered by Blogger.