ব্যর্থ লোকদের ফর্মুলায় নয়, আওয়ামী লীগ চলবে নিজস্ব ধারায়- সপ্তমবার সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত শেখ হাসিনা

 সর্বস্তরের মানুষের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত সপ্তমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেউ কেউ আজ ফর্মুলা দেন। তবে ব্যর্থ লোকদের ফর্মুলা দিয়ে আওয়ামী লীগ চলবে না। গণতন্ত্রও সুরক্ষিত হবে না। কারও ফর্মুলায় নয়, আওয়ামী লীগ চলবে নিজস্ব গতিধারায়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে দেয়া ফর্মুলার সমালোচনা করে কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করায় অনেকে একটি নির্বাচন পর্যন্ত দিতে পারেননি। নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। অনেক মোটা তাজা মানুষ দল করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। দল করতে পারেননি। তাদের ফর্মুলা চাই না।
রবিবার দিনভর নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের পুনর্বার নির্বাচিত সভাপতি শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত সপ্তমবারের মতো ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক দলটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। শনিবার ১৯তম জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে কাউন্সিলররা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করেন।
সকাল থেকে রাত অবধি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারী বাসভবন গণভবনে সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলর-ডেলিগেটরা উপস্থিত হয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনাকে। সম্মেলন সফল হয়েছে দাবি করে নবনির্বাচিত দলীয় সভাপতি তৃণমূল নেতাদেরও অভিনন্দন জানান। পরে গণভবনে উপস্থিত সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। এ সময় উপস্থিত তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা জেলার নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ করে বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে যে সব জেলার সম্মেলন হয়নি সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। সম্মেলনের কাজ যেন দ্রুত শেষ হয়। সম্মেলন শেষ হলেই বর্ধিতসভা হবে। আমরা নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তাই বর্ধিতসভা করে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করব।
তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকের নিজ নিজ এলাকার জনগণ ও ভোটারদের দিকে নজর রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। এ সময় মিডিয়ার কিছুটা সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘টক শো’ ও মিডিয়া এবং পত্রিকার সংবাদ দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন না। পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকদের অনেক টাকা। অনেক কিছু চায়। না দিলে নাখোশ হয়। তারপরই লেখা শুরু করে। নিজেরা (নেতাকর্মী) একেকটা পত্রিকা হয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার করতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগের অত টাকা নেই।
তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যেক জেলায় নিজস্ব কার্যালয় করার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, জেলায় জেলায় দলের নিজস্ব অফিস করা অত্যন্ত জরুরী। যেনতেন নয়, আধুনিক অফিস করতে হবে। এ জন্য কেন্দ্র থেকে সহযোগিতা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটা প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী লীগের সংগ্রহশালা করা হবে ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক এলাকায় প্রবীণ লোক রয়েছে। তাদের কাছে দুর্লভ ছবি ও বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে। এগুলো সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহশালা করতে কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক ধারায় চলছে দাবি করে তিনি বলেন, সে ভাবেই সম্মেলন হচ্ছে। অত্যন্ত সফল হয়েছে সম্মেলন। ঘন কুয়াশা ও শীত উপেক্ষা করে সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসাতে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে দলীয় প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা লক্ষ্মীর ভা-ার। আপনারা এসেছেন কুয়াশা কেটে আলো ফুটে উঠেছে।
পরে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে সপ্তমবার দলীয় সভাপতি হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। এরপর ক্রমান্বয়ে সিলেট জেলা, শ্রমিক লীগ, বগুড়া জেলা, নোয়াখালী জেলা, সৈয়দপুর জেলা, ফেনী জেলাসহ আওয়ামী লীগের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। শেখ হাসিনার সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মাহবুব উল আলম হানিফ, আহমদ হোসেন, কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, মেজবাহউদ্দিন সিরাজ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, সৈয়দা জেবুন্নেসা হক। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি।

No comments

Powered by Blogger.