বেলুচিস্তানে গাড়িবোমা হামলায় নিহত ২০- পাকিস্তানি তালেবান অপহূত ২১ সেনাকে হত্যা করেছে

পাকিস্তানের পেশোয়ারে আধা সামরিক বাহিনীর ২১ সদস্যকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করেছে তালেবান। গতকাল রোববার পেশোয়ারের হাসানখেল এলাকা থেকে তাঁদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একই দিন বেলুচিস্তানে শিয়া তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন।
পেশোয়ারের পুলিশ ও স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা জানান, গত বৃহস্পতিবার পেশোয়ার শহরের অদূরে আধা সামরিক বাহিনীর তিনটি তল্লাশিচৌকিতে হামলা চালান তালেবানের সদস্যরা। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে আধা সামরিক বাহিনীর দুই সদস্য নিহত হন। পরে ২৩ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তালেবান। পুলিশ জানায়, তালেবানের সদস্যরা নিরাপত্তা বাহিনীর পোশাকে ছিলেন। হামলায় তাঁরা রকেটচালিত গ্রেনেড ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করেন।
সরকারি কর্মকর্তারা জানান, অপহূত ২৩ জনের মধ্যে দুজন পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। তাঁদের একজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যজন সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরেছেন।
স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা নাভেদ আকবর জানান, তাঁরা গুলিবিদ্ধ ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। শনাক্ত করার পর তাঁদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কাজ চলছে। গুল শেহজাদ নামের আরেক সরকারি কর্মকতা জানান, তাঁরা গত শনিবার দিবাগত রাতে খবর পান, হাসানখেল এলাকায় আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ঘটনাস্থলে যান। তিনি জানান, মরদেহ উদ্ধারের সময় দেখা যায়, নিহত ব্যক্তিদের হাত রশি দিয়ে বাঁধা।
হামলা ও অপহরণের ঘটনার পর দারা আদামখেল এলাকার তালেবানের মুখপাত্র মোহাম্মদ আফ্রিদি এর দায় স্বীকার করেন। পাকিস্তানি তালেবানের নেতা হাকুিমল্লাহ মেহসুদ গত বুধবার এক ভিডিওবার্তায় অস্ত্রবিরতির জন্য আলোচনার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন। এর পরদিনই ওই হামলা ও অপহরণের ঘটনা ঘটে।
অপহরণের পর সরকারের পক্ষ থেকে আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের উদ্ধারে শীর্ষ পর্যায়ের আদিবাসী নেতাদের সহায়তা চাওয়া হয়। শনিবার পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আদিবাসী নেতারা তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তাঁরা অপহূত ব্যক্তিদের মুক্তির বিষয়ে সমঝোতা করতে কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু গতকাল তাঁদের মরদেহ পাওয়া গেল।
এদিকে বেলুচিস্তানের কোয়েটা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে মাসতাঙ্গ শহরে শিয়া তীর্থযাত্রীদের গাড়িবহরে গাড়িবোমা হামলা চালানো হয়। তীর্থযাত্রী হুসেইন আলী জানান, তাঁরা ইরানে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই তিনি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। তিনি বাস থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। সহযাত্রীদের বাঁচাতে এগিয়ে গেলেও প্রচণ্ড তাপের কারণে তাঁদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
তাৎক্ষণিকভাবে এ হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। স্থানীয় একটি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গাড়িবোমা হামলায় ২০ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হন। আহত অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) তথ্যমতে, পাকিস্তানে এ বছর অন্তত ৩২০ জন মুসলিম শিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তান সরকার এসব ঘটনায় হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করে সংগঠনটি। রয়টার্স, এএফপি ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.