দুই কম্পানির গণশুনানি-বিদ্যুতের দাম আরো প্রায় ৫% বৃদ্ধির প্রস্তাব

চলতি সরকারের আমলে সপ্তমবারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া হিসেবে এ খাতের মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গতকাল রবিবার রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি বিতরণ কম্পানি- ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) গণশুনানি করে।
শুনানিতে ওজোপাডিকোর বিদ্যুতের ৪.১৫ শতাংশ এবং পিডিবির বিদ্যুতের ৪.৮৪ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। গতকাল কমিশন কার্যালয়ে এ গণশুনানি হয়। এর আগে সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যুতের দাম খুচরা প্রায় ১৫ শতাংশ এবং পাইকারি পর্যায়ে ১৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। তবে বিইআরসির কাছে পিডিবি ১২ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির দাবি, খুচরা পর্যায়ে প্রায় ৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করলে পিডিবি তার লোকসানি কাটিয়ে উঠতে পারবে।
শুনানিতে পিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়, দাবি ১২ শতাংশ মূলবৃদ্ধি না হলে এ বছর তাদের লোকসান হবে ৫১৬ কোটি টাকা। চূড়ান্ত দাম বৃদ্ধির ঘোষণা বিইআরসিই শিগগিরই দেবে।
পিডিবি আরো জানায়, সেপ্টেম্বরের পর থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ছয় টাকা করে আদায় হচ্ছে। অথচ এ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ খরচ পড়ছে ছয় টাকা ৭২ পয়সা। ফলে প্রতি ইউনিটে তাদের ঘাটতি থাকছে ৭২ পয়সা। এতে তাদের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৫১৭ কোটি টাকা। গত ২ ডিসেম্বর খুচরা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় পিডিবি।
অন্যদিকে ওজোপাডিকো ৯.৫৯ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিল বিইআরসির কাছে। বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ওজোপাডিকোর বিদ্যুতের দর ৪.১৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে।
এর আগে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে (আরইবি) গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গত ২৭ ডিসেম্বর গণশুনানি হয়। এরপর কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। কমিটির এমন মতের কারণে বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ইমদাদুল হক আজ সোমবারের মধ্যে আরইবিকে পূর্ণাঙ্গ কাগজপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেন। আরইবির কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
গণশুনানিতে অংশ নিয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, 'সরকারের শেষ সময়ে এসে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া বিদ্যুতের দাম আরেক দফায় বাড়লে বিভিন্ন সেবা ও পণ্যের দাম বাড়বে। এতে প্রভাব পড়বে সরাসরি ভোক্তাদের ওপর। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়লে জনগণ বিদ্যুতের বিল জমা দেওয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।'
লোকসান কমাতে অধ্যাপক শামসুল আলম ব্যয় ও মুনাফার মধ্যে ঘটতি থাকলে দাম না বাড়িয়ে 'অন্য কোনো পদ্ধতিতে' সমাধানের প্রতি জোর দিতে বলেন।
গণশুনানিতে অংশ নেন বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ইমদাদুল হক, কমিশনের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ ও দেলোয়ার হোসেন।
এর আগে চলতি সরকারের মেয়াদে ছয়বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। সরকারের উপর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চাপ রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.