দলে গতিশীলতা আসবে কি?- আওয়ামী লীগের কাউন্সিল

ক্ষমতায় থাকতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকে, গত শনিবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে তা যথেষ্টই ছিল। শহরজুড়ে রঙিন পোস্টার, ফেস্টুন আর ব্যানারেরও আধিক্য ছিল।
কিন্তু সারা দেশ থেকে দলীয় কাউন্সিলর ও প্রতিনিধিরা যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এসেছিলেন, তার কতটা পূরণ হয়েছে, সেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অনেক কাউন্সিলরের মুখে হতাশার কথাও শোনা গেছে। মন্ত্রী-নেতাদের সঙ্গে কর্মীদের দূরত্বের কথাও বলেছেন কেউ কেউ। একটি দলের কাউন্সিল কেবল নেতা-কর্মীদের সমাবেশ নয়, নেতৃত্বের সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসাব নিকাষও বটে। অতীতের ভুলত্রুটি পর্যালোচনা করে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারলেই কেবল দলে গতিশীলতা আসতে পারে।
এবারের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সপ্তম ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দ্বিতীয়বারের মতো যথাক্রমে দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা তাঁদের অভিনন্দন জানাই। বরাবরের মতো কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য পদ পূরণের দায়িত্ব দলীয় সভানেত্রীকেই দেওয়া হয়েছে। দলে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সর্বময় দায়িত্ব একজনের ওপর অর্পণের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উপজেলা-জেলা কমিটি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটির সব পদই নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ হওয়া উচিত।
গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, তিন বছর পর পর নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সম্মেলন করার কথা। কিন্তু বাস্তবে কম দলই তা মেনে চলে। বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ অনেক দলের কমিটির মেয়াদ তিন বছর পার হলেও সম্মেলন করার উদ্যোগ নেই। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ কাউন্সিল করলেও এর আগে জেলা ও উপজেলা সম্মেলন শেষ করার যে বিধান ছিল, তা পুরোপুরি অনুসৃত হয়নি। মাত্র কয়েকটি জেলায় সম্মেলন হয়েছে, অনেক জেলা চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। কেন্দ্রীয় কাউন্সিল থেকে দুই মাসের মধ্যে যে জেলা কমিটিগুলোর সম্মেলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাকে গণতন্ত্রের উল্টো পিরামিড বলে অভিহিত করা যায়। নিম্নপর্যায়ের কমিটি থেকে উচ্চপর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করার কথা।
আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগঠনকে আরও সংগঠিত ও গতিশীল করে ভবিষ্যতে নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ওপর জোর দেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে তিনি যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, তার সঙ্গেও দ্বিমত করার কিছু নেই। সবাই চান, দ্রুত এ বিচার-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মেয়াদের চার বছর পর এসে দলে সুবিধাবাদীরা অনুপ্রবেশ করেছে বলে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে নেতৃত্বের ব্যর্থতাই প্রকাশ পেয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের শুরুতে অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে সাবধানবাণী উচ্চারণ করলে হয়তো কাজ হতো। চার বছর পর দলে কারা অনুপ্রবেশকারী আর কারা খাঁটি কর্মী, তা বিভাজন করা অসম্ভব বলেই মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.