আওয়ামী লীগের সম্মেলন-দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা হোক

নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের জাতীয় সম্মেলন শেষ করেছে। সারা দেশ থেকে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের অংশগ্রহণে মুখরিত ছিল সমাবেশস্থল। সম্মেলনে নতুন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আগের মতোই শেখ হাসিনা দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দলের কাঠামোতে বা নেতৃত্বে তেমন কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত আপাতত নেই। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই শীর্ষ নেতা বা নেত্রীনির্ভর। দলের শীর্ষ নেতার নির্দেশ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা কতটুকু হয়, এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ আছে। দলগুলোর মধ্যে যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই, এটাও নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নেতৃত্বের কোন্দল সর্বত্র। প্রায় সব রাজনৈতিক দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত কোন্দল আছে। যেকোনো নির্বাচন এলে একাধিক প্রার্থী বা বিদ্রোহী প্রার্থীর আধিক্য থেকেই উপলব্ধি করা যায়, দলে কোন্দল প্রকট। আওয়ামী লীগ যে তাদের জাতীয় কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি, তার কারণ হিসেবে কেউ শীর্ষ নেতৃত্বের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি উল্লেখ করলে খুব কি বাড়িয়ে বলা হবে?
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর জাতীয় সম্মেলন করা বাধ্যতামূলক। দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলোসহ অন্যান্য দলের সম্মেলনের প্রস্তুতি দেখলে মনে হয়, কেবল নিয়ম রক্ষার জন্যই একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কোনো রাজনৈতিক দলের সম্মেলনেই নিয়মতান্ত্রিক কোনো নির্বাচন হয় না। অনেক রাজনৈতিক দলের জাতীয় সম্মেলন হয়ে যায় জেলা বা উপজেলা সম্মেলনের আগে। এই নিয়ম রক্ষার সম্মেলন দেশের রাজনীতিতে কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। দলীয় নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তন সূচিত না হলে দলের গণতন্ত্র বিঘ্নিত হতে পারে। কোনো দলে যদি গণতন্ত্র না থাকে তাহলে সেই দল দেশের গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারে না।
কাজেই দেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু নিয়ম রক্ষার সম্মেলন করলে তাতে মাত্র নিয়মই রক্ষা করা হবে, কিন্তু ব্যাহত হবে গণতান্ত্রিক চর্চা। এতে দেশের গণতান্ত্রিক চর্চাও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হবে।

No comments

Powered by Blogger.