পাঠকের মন্তব্য- রাজনীতির স্বার্থে তুচ্ছ মানবতা!

অনলাইনে প্রথম আলো (prothom-alo.com) পড়া হয় ১৯০টি দেশ থেকে। পাঠকেরা প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত দেন। তাঁদের এ মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের।
গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।

আরও হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি
সোনালী ব্যাংকে অভিনব উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। আবার নথিতে নাম পরিবর্তন করে অন্য নাম বসিয়ে ব্যাংকের কর্মকর্তারাও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ নিয়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন পাঠকেরা। এ বিষয়ে আবদুস সালাম লিখেছেন: নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে এখানে ক্ষমতাসীন দলের রাঘব বোয়ালেরা এই চুরির সঙ্গে জড়িত। প্রশ্ন হলো, তারা কার টাকা চুরি করল? টাকা তো কোনো দলের নয়। এ টাকা হলো সমাজের সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত আয়ের একাংশ, যা তারা ব্যয় না করে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করেছে। এই সাধারণ মানুষের জমানো টাকা চুরি মানে তাদের স্বপ্ন চুরি, তাদের ভবিষ্যৎ চুরি। তাই সুষ্ঠু তদন্ত করে (যদিও আশা করা যায় না) দোষীদের গ্রেপ্তার করা হোক। তাদের প্রাপ্য শাস্তি কী হতে পারে, এ ব্যাপারে জনমত যাচাই করা হোক। যেহেতু জনগণের টাকা, তাই জনগণের রায় মেনেই শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে, এমনটাই আশা করছি।
শাহীন জাহাঙ্গীর আলম: প্রতিবেদনটি খুবই ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক। ভাবতে অবাক লাগে, কীভাবে ব্যাংকের টাকা লোপাট হয়েছে? হরিলুট হয়েছে ব্যাংকের পবিত্র তহবিল। কেউ কি দেখার নেই? দেশে কি সরকার নেই? তারা কি এসব দেখছে না? জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা, এমনকি ব্যাংক কর্মকর্তারাও। এটা তো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জানতে ইচ্ছে করে, ব্যাংকের এই কোটি কোটি টাকা কি জনগণের আমানত, নাকি ভূতের টাকা? আমার কিঞ্চিৎ সঞ্চয় এখন আর ব্যাংকে রাখা নিরাপদ মনে করি না।
রাজি হাসান: অবাক হতে হতে অবাক হওয়া ভুলে গেছি।
সিরাজ: যে দেশে ঘুষ, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি করলে বিচার বা শাস্তি হয় না, সেখানে এর চেয়ে বেশি আশা করা যায় না।

জাতিকে মেধাশূন্য করার কৌশল!
দেশে প্রচলিত জিপিএ পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ। এ সম্পর্কে মো. নুরুজ্জামান লিখেছেন: স্যার, খুবই সুন্দর ও যৌক্তিক কথা লিখেছেন। আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা গুটিকয়েক পাঠ্যপুস্তক ও কোচিং সেন্টারের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। আমাদের জ্ঞান শুধু তাত্ত্বিক বিষয়ে সীমিত এবং তা-ও অপ্রতুল। ব্যবহারিক বিষয়ে আমাদের দখল খুবই দুর্বল। এ অবস্থা শুধু মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে সীমাবদ্ধ নয়, তার প্রভাব স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীতেও উল্লেখযোগ্য। উচ্চশিক্ষায় বিদেশে আসার আগে আমার মনে হতো, হয়তো অর্থের অভাবে বাস্তব (প্রাকটিক্যাল) অভিজ্ঞতা বেশি নেই, তবে আমাদের তাত্ত্বিক জ্ঞান অনেক ভালো। কিন্তু এখানে এসে দেখি, আমার তাত্ত্বিক জ্ঞান অনেক সীমাবদ্ধ। শিক্ষার বিকাশ ও প্রয়োগের বিষয়ে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা না হলে উন্নত বিশ্বের ছাত্রদের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতায় অনেক পিছিয়ে পড়ব।
খন্দকার নজরে মওলা: ফেল পদ্ধতিটি আমি সমর্থন করি না। কারণ, পেশাগত জীবনে আমাদের তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যকর থাকে না। তাই একজন ছাত্রকে স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অকৃতকার্য হওয়াটা সময়ের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই না। আর উন্নত প্রতিষ্ঠানগুলো তো ভালো ছাত্র ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই করে নিতেই পারে। তাই ফেল পদ্ধতি না থাকাই ভালো।
অধীর দত্ত: গ্রেডিং পদ্ধতি ঠিক আছে। শুধু নেই স্কেলিং। রাজনৈতিক সুবিধার জন্য যদি শিক্ষকদের বলা হয় নম্বর দাও, তাহলে এফডিসিবি থাকার দরকারই নেই। এ তো হচ্ছে ‘সর্প হইয়া দংশন করো ওঝা হইয়া ঝাড়ো’র মতো। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষক-দক্ষতা বনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-দক্ষতা। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দেখিয়ে দিলেন, তাঁরাই সেরা। আর মাঝখান থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের মেধার স্ফুরণের কোনো ব্যাখ্যা সারা জীবন ধরেও পাবে না।
শেখ মোহাম্মদ: আমি গ্রেডিং পদ্ধতির বিপক্ষে নই। আমি মনে করি, খাতা ঠিকমতো মূল্যায়ন করা উচিত। যা লেখা হয়েছে, সেই অনুসারে মূল্যায়ন করা উচিত। একটা সময় ছিল যখন কোনো একটা প্রশ্নের উত্তরে কেউ দশে নয় পাওয়ার উপযুক্ত হলে, তাকে দশে সর্বোচ্চ ছয় বা সাত দেওয়া হতো। কিন্তু এখন কেউ দশে পাঁচ পাওয়ার উপযুক্ত হলে তাকে দেওয়া হয় নয়। দোষটা গ্রেডিং পদ্ধতির নয়, দোষ হচ্ছে খাতা মূল্যায়নকারীর; আরও বিস্তারিতভাবে বললে সরকারের। সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে সফলতা দেখানোর জন্য পরীক্ষকদের বেশি করে নম্বর দেওয়ার নির্দেশ দেয়, যাতে পাসের হার বেশি হয়। ফলে খাতা অতিমূল্যায়ন হয়, আর আমরা পাই ঝাঁকে ঝাঁকে জিপিএ-৫।

গোলাম আযমদের ‘ফাঁসি’ না দিতে তুরস্কের আবদার
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে এই অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। এ বিষয়ে অভিমত জানিয়ে কাউসার লিখেছেন: তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল জানেন, কোন ‘অপরাধের’ বিষয়ে আবদার করছেন? আমাদের দুঃসময়ে ‘এরা’ কী করেছিল; সেই বিভীষিকাময় ঘটনাগুলো জানলে তিনি ‘এ’ অনুরোধ করতেন না।
মো. রাশেদ আলম: তুরস্ক আমেরিকার দালালি করে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়ে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ সৃষ্টি করেছে। প্রতিদিন তাদের উসকানিতে হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা করা হচ্ছে। মুসলিম রাষ্ট্র হয়েও ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নেয়। আসলে জামায়াতে ইসলামী যেমন এত মানুষ হত্যা করেও বড় গলা করে, হরতাল আন্দোলনের নামে শত শত গাড়ি পোড়ায় অথচ ন্যূনতম দুঃখ প্রকাশ করে না। আবার মার্কিন দূতাবাসের গাড়িতে হামলার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে চায়। সে জন্য তুরস্ক বলেন, আর জামায়াত বলেন, এরা সব সময়ই মানবসভ্যতার জন্য অভিশাপ।

জবানবন্দির সঙ্গে ময়নাতদন্ত মিলছে না
পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তার সঙ্গে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের প্রতিবেদনের মিল নেই। এ সম্পর্কে জাকির লিখেছেন: এখন কোনো কিছুই মিলবে না। কারণ, সংবাদমাধ্যম আর জনগণ যখন গাছের ডালে উঠেছে, তখন সরকার পাতায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আর যখন জনগণ পাতায় উঠেছে, তখন সরকার পুরো গাছই কেটে ফেলতে চাইছে। কিছুদিন পর ময়নাতদন্তের কথা বলে পুরো হত্যাকাণ্ডকে রূপকথার গল্প বানিয়ে ছেড়ে দেবে।
বিপ্লব রায়: ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে এভাবেই হয়তো প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ওপর থেকে চাপ ছিল। নয়তো কোনোভাবেই এমন প্রতিবেদন কেউ দিতে পারেন না। রাজনীতিকেরা জানেন, কীভাবে অপরাধীকে বাঁচাতে হয়। কীভাবে সবার সামনে লম্বা গলায় বক্তব্য দিতে হয়। রাজনীতির খাতিরে মনুষ্যত্ব, মানবতা—সবকিছুই তুচ্ছ। কারণ, তাঁরাই দেশের শাসক।
সাকী রহমতুল্লাহ: এ মামলাটি নিয়ে প্রথম আলো যে জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। এই খুনিদের কিছুই হবে না। বিকাশদের মতো এরা বড় কোনো গডফাদারের হাত ধরে জেল থেকে বের হয়ে এসে মি. ক্লিন কিংবা দেশপ্রেমিকের সনদ নিয়ে জনসেবায় (খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, হল দখল, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি) মগ্ন হবে। ধন্য আমরা এ দেশে জন্মে।
মাহাদি সিকদার: যখন ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল তখন ‘বিশ্বজিৎ হত্যা’ এত বড় ইস্যু ছিল না। তাই ময়নাতদন্তকারী কোনো রকম দায়সারা তদন্ত করেছিলেন। এখন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মাকসুদুর রহমান ফাঁপরে পড়ে গেছেন। তবে এই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে তেমন বেগ পেতে হবে বলে মনে হয় না।
(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন (prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.