সুন্নাহর ভিত্তিতে জীবন পরিচালিত হোক by জহির উদ্দিন বাবর

পাক-ভারত উপমহাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে দাওয়াতুল হকের কার্যক্রম আস্তে আস্তে বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে দাওয়াতুল হককে তাবলিগ জামাতের পর সবচেয়ে বড় দাওয়াতি কাফেলা হিসেবে গণ্য করা হয়
নবীজির (সা.) কথা, কাজ, আদেশ-নিষেধ তথা জীবনের প্রতিটি পর্যায় অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে একজন মুমিনের সফলতা। রাসূল (সা.) বলেছেন, 'আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ তোমরা তা আঁকড়ে রাখবে ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না_ ১. আল্লাহর কিতাব, ২. নবীজির (সা.) সুন্নত।'
নবী করিম (সা.) দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পরও তাঁর কথা, কাজ ও জীবনাচার প্রতি মুহূর্তে চর্চিত হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে। এটা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সুন্নাহর চর্চা ও অনুশীলনের গতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নবীদের উত্তরসূরি খ্যাত ওলামায়ে কেরামের ওপর। সাধারণ মুসলমানকে পুরোপুরি সুন্নাহর ওপর চলতে সাহায্য করার দায়িত্ব আলেমের। প্রকৃত আলেম তিনিই যিনি নিজে সুন্নাহর ওপর পুরোপুরি অবিচল থাকেন এবং অন্যকে সুন্নতের ওপর আমল করতে সহায়তা করেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের এ যুগে ওলামায়ে কেরামের খুব কম সদস্যই সুন্নাহর চর্চা ও বিকাশে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করছেন। বর্তমানে মুসলমানদের অধঃপতনের অন্যতম কারণ এটাও যে, তারা আজ সুন্নতে নববী থেকে অনেক দূরে। আলহামদুলিল্লাহ! পুরোপুরি সুন্নতে নববীর আলোকে জীবনযাপনের জন্য ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত কিছু প্রয়াস এখনও কার্যকর আছে। মজলিসে দাওয়াতুল হক এর অন্যতম। মুসলিম উম্মাহ যখন ক্রমেই সুন্নতে নববীর মূলধারা থেকে সরতে শুরু করেছে, তখন এ দাওয়াতি সংগঠনটি প্রতিটি মুসলমানকে সুন্নতের ওপর টিকে থাকার তালকিন দিয়ে যাচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি সুন্নত সহীহ তরিকায় পালনের জন্য দাওয়াতুল হকের কর্মীরা নিরলস ও নিঃস্বার্থ শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। এটি গতানুগতিক কোনো সংগঠন বা সংস্থা নয়। বৈষয়িক কোনো প্রাপ্তির জন্য দাওয়াতুল হক কাজ করে না। এর নামটিতে যে স্পিরিট লুকিয়ে আছে_ 'হকের দাওয়াত', সে দাওয়াতি কার্যক্রমই চালিয়ে যাচ্ছে দাওয়াতুল হক। দাওয়াতুল হক মূলত হাকিমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সুন্নাহ প্রতিষ্ঠার একটি বিপল্গবী আন্দোলন। যুগের সংস্কারক হজরত থানভি (রহ.) যখন দেখলেন মুসলমানদের মধ্যে সুন্নতের প্রতি গাফলত সৃষ্টি হয়েছে এবং সুন্নাহর ওপর আমল না থাকার কারণে পুরো দ্বীন থেকেই তারা ছিটকে পড়ছে, তখন তিনি দাওয়াতুল হক নামে একটি দাওয়াতি কার্যক্রম হাতে নেন। তাঁর এই ইলহামি উদ্যোগে থানভি সিলসিলার প্রত্যেক বুজুর্গ আন্তরিকভাবে যুক্ত হন। পাক-ভারত উপমহাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে দাওয়াতুল হকের কার্যক্রম আস্তে আস্তে বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে দাওয়াতুল হককে তাবলিগ জামাতের পর সবচেয়ে বড় দাওয়াতি কাফেলা হিসেবে গণ্য করা হয়।
হাকিমুল উম্মতের খলিফা হজরত শাহ আবরারুল হক হারদুঈ (রহ.) ছিলেন দাওয়াতুল হকের কার্যক্রমে নিবেদিত একজন মহান বুুজুর্গ। আপাদমস্তক তিনি ছিলেন সুন্নতে নববীর বাস্তব উদাহরণ। তিনি বারবার বাংলাদেশে এসেছেন এবং এ দেশের ওলামায়ে কেরামকে উদ্বুদ্ধ করেছেন দাওয়াতুল হকের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতে। হারদুঈ হজরতের বিশিষ্ট খলিফা হজরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান বর্তমানে বাংলাদেশে দাওয়াতুল হকের আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন। দাওয়াতুল হকের কার্যক্রম আজ দেশের আনাচেকানাচে বিস্তৃত। এ সংগঠনের উসিলায় কত বিপথগামী মুসলমান যে সুন্নতে নববীর আলোকবিভায় উদ্ভাসিত হচ্ছেন এর কোনো ইয়ত্তা নেই।
সুন্নাহ মানুষকে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও আলোকিত করে। সুন্নাহর এই সুস্মিত ধারা বাংলার জমিনকে হেদায়েতের আলোকশিখায় উদ্ভাসিত করে। আর সে লক্ষ্যেই জামিয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ীতে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় দাওয়াতুল হকের মারকাজি ইজতেমা। এই মারকাজি ইজতেমার উসিলায় ও মেহনতে সুন্নতে নববীর আলো দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ূক_ সে প্রত্যাশা সবার।
zahirbabor@yahoo.com
 

No comments

Powered by Blogger.