সাম্প্রদায়িকতা বঙ্গবন্ধুকে স্পর্শ করতে পারেনি ॥ by আনিসুজ্জামান

 বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সাম্প্রদায়িকতা কখনও স্পর্শ করতে পারেনি। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি ধর্ম দেখে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন না। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভাগের সময় তিনি মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
রবিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে এ সব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ব্যানারে আয়োজিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী : বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবি’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের প্রথম ৩৫ বছরের আত্মজীবনী এই বইটিতে লিখে গেছেন। আমাদের দেশে হিন্দু- মুসলমানের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল তিনি তাঁর বইতে তা তুলে এনেছেন। কলেজে পড়া অবস্থায় অনেক হিন্দু ছাত্রকে তিনি রায়টের সময় তাদের বাসায় এগিয়ে দিয়ে আসতেন।
বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিকাশের জন্য এটি একটি অনন্য গ্রন্থ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য বেবী মওদুদ বলেন, ‘বেগম বুজিবের উৎসাহে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আত্মজীবনী লিখেছেন। বেগম মুজিব বিভিন্ন সময়ে জেলে গিয়ে তাঁকে খাতা কলম দিয়ে আসতে কিছু লেখার জন্য। তিনি তাঁকে উৎসাহ দিয়ে প্রায় সময়ই বলতেন, বসেই তো আছ কিছু লেখ। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে তাঁর বাড়ি বেশ কয়েকবার লুট হয়েছে কিন্তু তাঁর এ বইগুলো খুঁজে পায়নি কেউ। বেগম মুজিব তাঁর আলমারির গোপন স্থানে তালাবদ্ধ করে এ বইগুলো রেখেছেন। প্রধান মন্ত্রী দেশে আসার পর এ বই গুলো তার হাতে আসে এবং তিনি খুব যতœ সহকারে বইগুলো আগলে রেখেছেন। বইটির কিছু তথ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতি থেকে নেয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তাঁর পিতার ইচ্ছানুযায়ী যদি বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়তেন, তাহলে বাঙালী জাতি এমন পরম বন্ধু পেত না। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের উন্নতির কথা বিবেচনা না করে দেশের স্বার্থে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন।’
বাংলা একাডেমীর মহা-পরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘১৯৫৬ সালে আমি তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ভুখা মিছিল হয়েছিল এবং জগন্নাথ কলেজের ছাত্র ইকবাল গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তখন তাকে দেখতে আসেন। ১৯৬৭ সালে পকিস্তান সরকার রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষেধ করা সত্ত্বেও জগন্নাথ কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি লিখতে জানি না।’ কিন্তু তিনি একজন খ্যাতনামা সাহিত্যিকের মতোই লিখেছিলেন। সাধারণ এক পরিবারের সন্তান হয়েও দেশপ্রেমের টানে বাঙালীকে একত্রিত করে আন্দোলন চালিয়ে ছিলেন।’
অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ সেলিমের সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ট্রেজারার অধ্যাপক মোঃ সেলিম ভূঁইয়া, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন, ড. ফিরোজ আহমেদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এফএম শরীফুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম সিরাজুল ইসলাম।

No comments

Powered by Blogger.