মুক্তির ইতিহাস স্বাধীনতা সংগ্রাম by মামুন মিজানুর রহমান

৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর স্টুডিও থিয়েটার হলে উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় স্বপ্নদল পরিবেশিত ও জাহিদ রিপন নির্দেশিত মূকাভিনয় 'স্বাধীনতা সংগ্রাম'। বিস্তারিত লিখেছেন মামুন মিজানুর রহমান
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে শুরু হয়েছে 'বিজয় উৎসব'। এ উৎসবে শিল্পকলা একাডেমীর সব কয়টি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার


নাটক। এসব আয়োজনের মধ্যে মূকাভিনয় প্রদর্শিত হয় একটিই। স্বপ্নদলের পরিবেশনায় 'স্বাধীনতা সংগ্রাম' মূকাভিনয়টির পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। মূকাভিনয়ের মাধ্যমে এ নাটকে তুলে ধরা হয়েছে আবহমান বাংলার লোক-ঐতিহ্য। লোকখেলা, নৌকাবাইচ, জারি-সারি-পুতুলনাচ ও বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির নানা উপাদান।
নাটকের শুরুতেই দেখা যায়, এ দেশে বিরাজ করছে ধর্মীয় সম্প্রীতি। সব ধর্মের মানুষ একত্রে পালন করছে আমাদের লোকসংস্কৃতি। কিন্তু হঠাৎ যুদ্ধ এসে এই জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। যুদ্ধের পর এই সংস্কৃতিকর্মী এ দেশের সাধারণ মানুষ ছিনিয়ে আনে বিজয়। যুদ্ধ শেষে নতুন দেশটিতে আবার দেখা যায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভেতর দিয়ে সংস্কৃতিচর্চায় মানুষের বেঁচে থাকা। 'স্বাধীনতা সংগ্রাম' মূকাভিনয়টি বাংলাদেশের গ্রামীণ শান্ত প্রকৃতি ও জনমানসে মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে বিজয় অর্জনের ইতিহাস তুলে ধরেছে। পাশাপাশি এতে রয়েছে হানাদারদের এ দেশীয় সহযোগীদের নৃশংসতা। মূকাভিনয়টি ২০০৪ সালে গাজীপুরে মুক্তমঞ্চে আয়োজিত এক পথনাটক উৎসবে প্রথম মঞ্চস্থ হয়। বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই প্রযোজনা মঞ্চে আনা হয়েছে নতুনভাবে। নতুনভাবে নির্মাণের ফলে এতটাই পরিবর্তন এসেছে যে, ঢাকার এই দ্বিতীয় প্রদর্শনীকে উদ্বোধনী প্রদর্শনীই বলা যায়। ২০০৪ সালে নাটকটি যেমন ছিল, এখন বক্তব্য ও পরিবেশনায় অনেকটাই সরে এসেছে। এখন থেকে এই মূক প্রযোজনাটি নিয়মিত মঞ্চে আনবে স্বপ্নদল।
দর্শকপূর্ণ মিলনায়তনে সেদিন ছিল না কোনো উচ্ছ্বাস। আগের রাতটিতে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর প্রয়াণে ঢাকার সংস্কৃতি অঙ্গনে তখন গভীর শোকের আবহ। এই মৃত্যু গভীর ছায়া ফেলেছে 'স্বাধীনতা সংগ্রাম' মূকাভিনয়ের প্রদর্শনীতেও। প্রদর্শনীর শুরুতে বক্তব্য দেন কবি রবীন্দ্র গোপ এবং স্বপ্নদলের কর্ণধার ও নাটকের নির্দেশক জাহিদ রিপন। দুজনের বক্তৃতাই ছিল মৃত্যুশোকে ভারাক্রান্ত। স্বপ্নদল এই প্রযোজনা উৎসর্গ করে কবীর চৌধুরীর স্মৃতির উদ্দেশে।
নাটকে খুব সরল ভঙ্গিমায় তুলে ধরা হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে। অভিনয়ের কুশলতা ছিল এতটাই যে সংলাপ না থাকলেও নাটকের প্রতিটি দৃশ্য বুঝতে অসুবিধা হয়নি কারোই। আলোক নির্দেশনা ও পোশাক নির্বাচন ছিল চমৎকার।
এ নাটকে অভিনয় করেছেন শ্যামল, সুকন্যা, সামাদ, শিশির, শাহিন, মোস্তাফিজ, সোনালী, মিতা, রহিম, শুভ, মাধুরী, পুনম, ইউসুফ, চঞ্চল প্রমুখ। ১৩ ডিসেম্বর শিল্পকলা একাডেমীতে উদ্বোধনী প্রদর্শনীর পরদিনই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মুুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নাটকটির আরো একটি প্রদর্শনী হয়। মূকাভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের লোকায়ত জীবনকে তুলে ধরায় এবং অভিনয়ে কোথাও ছন্দপতন কিংবা অতি অভিনয় না থাকায় 'স্বাধীনতা সংগ্রাম' নিশ্চয়ই শিল্পসফল। সে কারণেই বোধ করি, নাটকটির প্রদর্শনী শেষে শিল্পকলায় হাততালির পরিমাণ ছিল একটু বেশিই।

No comments

Powered by Blogger.