সুর সজীবতায় মুখরিত প্রাণ by রবিউল ইসলাম জীবন

তানভীর আলম সজীব একাধারে গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। আধুনিক গানের পাশাপাশি নজরুলসংগীতেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন রবিউল ইসলাম জীবন, ছবি তুলেছেন তারেক আজিজ নিশক ১৯৯৩ সালে বাবা এস এম নুরুল আলমের হাত ধরে নিউ ইয়র্কে যান তানভীর আলম সজীব। উদ্দেশ্য পড়াশোনা করা। 'নেটওয়ার্কিং' বিষয়ে ভর্তি হন সেখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি চলতে থাকে


সংগীতচর্চাও। সেখানকার বাঙালিদের কিংবা ভারতীয়দের অনুষ্ঠান মানেই সজীবের সরব উপস্থিতি! বাংলাদেশ এবং কলকাতা থেকে সেখানে যারা গান করতে যেতেন তাঁদের অনেকের সঙ্গেই কি-বোর্ড বাজাতেন সজীব।
শুধু কি তাই! এভাবেই একদিন মান্না দে'র সঙ্গে পরিচয়। সুযোগ পান তাঁর সঙ্গে বাজানোর। এরপর টানা আড়াই বছর সেখানকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মান্না দে'র সঙ্গে বাজিয়েছেন তিনি। শুধু নিউ ইয়র্ক নয়, কানাডাসহ আরো অনেক জায়গায় মান্না দের সঙ্গে বাজিয়েছেন বাংলাদেশের সজীব। একই সময়ে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফরিদা পারভীন, বেবী নাজনীন, চিত্রা বসু, অজয় চক্রবর্তী, পূর্ণদাস বাউল, হৈমন্তী শুক্লাসহ আরো অনেক শিল্পীর সঙ্গেও সঙ্গত করেছেন কি-বোর্ডে। স্মৃতি হাতড়ে সজীব বলেন, 'এমন গুণী শিল্পীদের সঙ্গে বাজাতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত! মান্না দে'র সঙ্গে বাজানোটা আমার সংগীত জীবনের সেরা ঘটনাগুলোর একটি।' ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এভাবেই কেটেছে সজীবের। সুযোগ পেলেই গাইতেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। সজীবের গান পছন্দও করতেন সেখানকার শ্রোতারা। '৯৮-এর দিকেই একটি স্টুডিওতে কাজ শুরু করেন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। মাঝে তিন মাস টানা সেখানকার বিভিন্ন স্থানে মঞ্চস্থ হয় 'আমিনা সুন্দরী' নামের একটি পালা। সেই পারার দলটির গায়েন হিসেবেও কাজ করে অনেকের নজরে আসেন সজীব। এরই ফাঁকে নিউ ইয়র্কের মুক্তধারা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয় তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম 'সাধারণ একদিন'।
এর কিছুদিন পরই সুরের সন্ধানে সজীব পাড়ি জমান টরন্টোতে। সেখানে গিয়ে বদলে ফেলেন পড়াশোনার মূল ধারাটাই। 'নেটওয়ার্কিং' বাদ দিয়ে পড়া শুরু করেন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। সম্পন্ন করেন বিএ। ২০০২-০৩ সালের দিকে যোগ দেন 'টাসা' নামের একটি ব্যান্ডে। এর কিছুদিন পরই 'আরবাট টারবান' নামে সেই ব্যান্ডের একটি অ্যালবাম বের হয়, যেখানে নিজের লেখা ও সুর করা দুটি বাংলা গান করেন সজীব। গানগুলো সেখানকার শ্রোতাদের মনেও দাগ কাটে।
মাঝে সজীবের পরিচয় হয় পণ্ডিত রবিশংকরের ছাত্র শম্ভু দাসের সঙ্গে। 'শান্টি' নামে শম্ভু দাসের একটি ব্যান্ড ছিল। সেই ব্যান্ডেও কাজ করেন সজীব। এরপর যোগ দেন আরো দুটি ব্যান্ডে।
২০০৫ সালে দেশে বেড়াতে আসেন সজীব। এসেই মন পড়ে যায় স্বদেশের মায়ায়। সিদ্ধান্ত নেন_কানাডায় আর নয়! পরের বছর সব ছেড়ে চলে এলেন নিজের মাটিতে। কিছুদিন পরই বেঙ্গল মিউজিক থেকে প্রকাশ পায় একক অ্যালবাম 'বাড়ি কোথায় বল'। সেই অ্যালবামের জন্য 'চতুর্থ সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস'-এ সেরা নবাগত শিল্পীর পুরস্কার লাভ করেন। মাঝে বিভিন্ন নাটক ও চলচ্চিত্রের আবহ সংগীতসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন। প্রয়াত তারেক মাসুদের 'রানওয়ে' চলচ্চিত্রের আবহ সংগীত সজীবেরই করা। কাজ করেছেন এনামুল করিম নির্ঝরের 'নমুনা'সহ আরো কিছু চলচ্চিত্রে। গান তৈরি করেছেন বাংলাদেশের মমতাজ, কলকাতার মিস লায়লাসহ আরো কয়েকজন শিল্পীর।
গত বছর প্রকাশ করেন নজরুলের গানের একক অ্যালবাম 'মন উচাটন'। এই অ্যালবামের জন্যও মেলে স্বীকৃতি। পেয়ে গেলেন 'সপ্তম সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস'-এ শ্রেষ্ঠ নজরুলসংগীত শিল্পীর (জনপ্রিয় শাখায়) পুরস্কার।
এখনো চলচ্চিত্রের কোনো গানে কণ্ঠ দেননি সজীব। কেন? সজীব বলেন, 'সে রকম সুযোগ এলে অবশ্যই গাইব। গাওয়ার পাশাপাশি কাজ করতে চাই সংগীতপরিচালক হিসেবেও।'
কিছুদিনের মধ্যেই লেজার ভিশনের ব্যানারে বাজারে আসবে সজীবের নতুন একক 'বেছেই দিলাম'। নিজের সুর ও সংগীতে সজীব এ অ্যালবামটি সাজিয়েছেন ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়ের কথায়। মিঙ্ড অ্যালবাম 'ঝালমুড়ি-১' 'ইউ' এবং 'বন্ধুতা'তেও গেয়েছেন সজীব। বর্তমানে সজীব নিজের আরো তিন-চারটি এককের কাজ করছেন। এগুলোর একটি শচীন দেব বর্মণের গান নিয়ে, একটি নজরুলের এবং দুটি নিজের মৌলিক। তৈরি করছেন মমতাজের পুরো একটি অ্যালবাম।
গান নিয়ে ভাবনার কথা জানতে চাইলে সজীব বলেন, 'আরো শিখতে হবে। এখানে শেখার কোনো শেষ নেই।' রুটিন-মাফিক কাজ করাই পছন্দ সজীবের। বলেন, 'আর্লি উঠি, আর্লি কাজ করি। রাত জাগি না। রুটিন লাইফটা আমার খুব পছন্দ।' গান করার সময় কোন বিষয়টি গুরুত্ব দেন? 'সুর এবং তাল'। এসব না জেনে গান করা ঠিক নয়। গানের কথাটা বুঝেই আমি সুর নিয়ে বসি_বলেন সজীব। সুর-সংগীত এবং গাওয়ার পাশাপাশি কথাও লেখেন। বিষয়টাকে কিভাবে অনুভব করেন? 'লেখাটা হঠাৎ করেই আসে। ভালো হলে রেখে দিই সুর করার জন্য। কখনো যদি সঙ্গে সঙ্গে সুর চলে আসে করে ফেলি। অনেক কবিতা এবং অনেকের লেখা পড়তাম। সেখান থেকেই আমার লেখার অভ্যাসটা গড়ে উঠেছে।'
গত বছর 'কয়ার থার্টি ওয়ান' নামে একটি কয়ার দল গঠন করেছেন সজীব। এখানে সংগীতের সবই করা হয় কণ্ঠের সাহায্যে। গলা দিয়েই কাজ করা হয় যন্ত্রের, সুরের এবং গাওয়ার। এরই মধ্যে দলটি নিয়ে অংশ নিয়েছেন একটি অনুষ্ঠানে। পরিকল্পনা করছেন আরো ব্যাপকভাবে শ্রোতাদের সামনে আসার।

No comments

Powered by Blogger.