পবিত্র কোরআনের আলো-শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা পাওয়ার পথ হলো আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা

৯৯. খুযিল আ'ফওয়া ওয়া'মুর বিলউ'রফি ওয়া আ'রিদ্ব আ'নিল জা-হিলীন। ২০০. ওয়া ইম্মা ইয়ানযাগান্নাকা মিনাশ্ শাইত্বা-নি নায্গুন ফাছতায়ি'য্ বিল্লাহি; ইন্নাহূ ছামীউ'ন আ'লীম। ২০১. ইন্নাল্লাযীনাত তাক্বাও ইযা মাচ্ছাহুম্ ত্বা-য়িফুম মিনাশ্ শাইত্বা-নি তাযাক্কারূ ফায়িযা হুম্ মুবসিরূন। ২০২. ওয়া ইখ্ওয়া-নুহুম ইয়ামুদ্দূনাহুম ফিল গায়্যি ছুম্মা লা-ইউক্বসিরূন। [সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ১৯৯-২০২] অনুবাদ


১৯৯. (হে নবী!) আপনি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করুন এবং মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিন, আর মূর্খ লোকদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
২০০. যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা কখনো আপনাকে প্ররোচিত করে, তবে সঙ্গে সঙ্গে আপনি আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবেন। নিশ্চয়ই তিনি স্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
২০১. যারা দায়িত্বনিষ্ঠ মানুষ তাদের যখন শয়তানের কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে, তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। ফলে তৎক্ষণাৎ তাদের (জ্ঞানের) চোখ খুলে যায়। (অর্থাৎ তারা তখন ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে ফারাক খুঁজে পেতে সক্ষম হয়।)
২০২. তাদের শয়তানরূপী ভাই-বন্ধুরা তাদের বিভ্রান্তির দিকেই টেনে নিয়ে যেতে চায়। ফলে তারা আর সেখান থেকে ফিরে আসতে পারে না।

ব্যাখ্যা
১৯৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুলকে অন্তত তিনটি নীতি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমত, ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করা। দ্বিতীয়ত, মানুষকে সৎকাজের আদেশ প্রদান করা এবং তৃতীয়ত, মূর্খজনদের এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করা।
ক্ষমাপরায়ণতা মানুষের সর্বাধিক মহৎ গুণ। সব ধর্মের মৌলবাণীতেই এ নীতি অনুসরণের উপদেশ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে যত নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে এ নীতি অনুসরণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে আমরা দেখতে পাই। মূর্খদের এড়িয়ে চলার নীতিটি কৌশলগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। মূর্খদেরও হেদায়েতের পথে টেনে আনার চেষ্টা নবী-রাসুল ও সংস্কারকদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু মূর্খদের পেছনে লেগে থাকা বা তাদের অশালীন কর্মকাণ্ডের দ্বারা প্রভাবিত অথবা স্তব্ধ হয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা মোটেও উচিত নয়। মূর্খদের হেদায়েত করার লক্ষ্য থেকেও তাদের এড়িয়ে চলার নীতিই উত্তম নীতি।
২০০ নম্বর আয়াতের বক্তব্যের দ্বারা শুধু নবীকে উদ্দেশ করে নয়, বরং সব মুসলমানকে উদ্দেশ করেই এই শিক্ষা সামনে আনা হয়েছে যে শয়তান কখনো কোনো পাপকাজ বা মন্দ ভাবনার প্রতি প্ররোচনা দিলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। ক্ষমাপরায়ণ হওয়ার নির্দেশ দান প্রসঙ্গে এ বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করে বোঝানো হচ্ছে, যে ক্ষেত্রে ক্ষমা প্রদর্শনের মহত্ত্ব আছে, সেখানেও যদি শয়তানের প্ররোচনায় কারো রাগ উঠে যায়, তবে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় চাওয়া।
২০১ নম্বর আয়াতে মুত্তাকি বা দায়িত্বনিষ্ঠ মানুষদের কথা বলা হয়েছে। মুত্তাকি মানুষদের শয়তানের প্ররোচনা স্পর্শ করতে পারে। সে অবস্থায় তারা তা প্রশমিত করে এভাবে যে তারা আল্লাহর কথা স্মরণ করে, তাঁর কাছে জবাবদিহিতার কথা স্মরণ করে। তারা আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে এবং তিনি যে সব কিছু দেখছেন, তা হৃদয়ঙ্গম করে। ফলে তাদের জ্ঞানের চোখ খুলে যায়। এভাবে তারা গুনাহ থেকে বেঁচে যায় এবং কখনো গুনাহ হয়ে গেলেও তওবা করার তাওফিক হয়।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.