সুতা ও গাড়ির এক দাম by আনোয়ার হোসেন

সুতার সঙ্গে গাড়ির কী সম্পর্ক? কথায় বলে সরু সুতা তা তারের ওপর দিয়ে হেঁটে চলা_ কিন্তু কেউ কি তুলা থেকে তৈরি সুতার ওপর দিয়ে হাঁটতে পারে? তবে মজবুত সুতা বানানোর কৌশল এখন মানুষের করায়ত্ত। সার্কাস খেলায় পারদর্শীরা এমন সুতা পেলে দর্শকদের চমকে দিতে পারেন। স্বর্ণ দিয়েও সুতার মতো চিকন কিছু তৈরি করা যায়। এখন এ ধাতুর যা দাম, তাতে এ ধরনের সুতা যত সরুই হোক দাম মিলবে ভালোই।


কিন্তু ঘটে বুদ্ধি থাকলে তুলা দিয়ে তৈরি সুতাও সোনার মতো দামি বিবেচিত হতে পারে। সোনা না হোক, বিএমডবি্লউ ও অডি গাড়ির মতো দামি তো হতেই পারে। মঙ্গলবার সমকালে এমনই একটি খবর দেখা গেল 'সুতা আমদানির নামে আনা হয়েছে বিএমডবি্লউ ও অডি গাড়ি'। আমাদের দেশের আমজনতা এসব দামি ব্যবহারের কথা ভাবে না। তাদের দৌড় বড়জোর লক্কড়ঝক্কড় মার্কা বাসে যাত্রী হওয়া পর্যন্ত। দামি প্রাইভেট গাড়ি কে আমদানি করল, কত দামে আনা হলো সেসব নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তবে সমকালের খবরটি তাদের চোখ কপালে তুলে দিতে পারে। চট্টগ্রাম থেকে সারোয়ার সুমনের পাঠানো খবরে বলা হয়, 'চলি্লশ ফুট দীর্ঘ কনটেইনারটির চারপাশ ছিল কার্টনে ঘেরা। কনটেইনারের সামনের ভাগের কার্টনে রাখা হয়েছে ফটোকপিয়ার মেশিন। অন্য পাশে সুকৌশলে রাখা হয়েছে এলসিডি ও এলইডি টেলিভিশন। কাঠের একটি পাটাতন দিয়ে আলাদা করে রাখা হয়েছিল ফটোকপিয়ার ও টেলিভিশনগুলো। এরপর রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে আস্ত দুুটি গাড়ি।... ১৯.৮ টন সুতা আমদানির ঘোষণা দিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের এসব গাড়ি ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী সিঙ্গাপুর থেকে নিয়ে আসে সাভার ডিইপিজেডের আমদানিকারক গোল্ড টেক্স লিমিটেড।'
চট্টগ্রাম বন্দরে নাকি এমন কাণ্ড আগে ঘটেনি। কিন্তু তা হলফ করে বলা চলে কি? কতজনে এমন গুরুতর কিংবা আরও ভয়ঙ্কর অপরাধ করে পার পেয়ে গেছে, কে জানে। অপরাধ সংঘটিত হয়েছে দুটি স্থানে_ সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। আস্ত দুটি গাড়ি কৌশলে কনটেইনারে ঢোকানো হয়েছে_ সে জন্য সেখানের লেবার ও অফিসারদের হাত করতে হয়েছে। এ জন্য খরচাপাতি হয়েছে এবং তার ব্যবস্থা বাংলাদেশের পার্টিই করেছে। এ থেকে অবশ্য একটি নতুন ধারণা মেলে_ সিঙ্গাপুরেও অসৎ লোক রয়েছে, যাদের বাংলাদেশের কোনো অসৎ আমদানিকারক পারচেজ করতে পারে। সুতার চেয়ে বিলাসবহুল গাড়িতে শুল্ক হার অনেক বেশি। তার একটি অংশ ঘুষ দিতে সমস্যা নেই। এখন দেখা যাক, ঘটনাটি ফাঁস হওয়ার পর সিঙ্গাপুর সরকার তাদের দেশে তদন্ত অনুষ্ঠান করে দোষীদের বিচার করে কি-না। এ ক্ষেত্রে ভয় রয়েছে_ ওই দেশে অনেক বাংলাদেশি কাজ করে। তাদের কেউ ফেঁসে যাবে না তো? চট্টগ্রামে ঘটনার তদন্ত কোন পথে অগ্রসর হয়, তার প্রতিও আমাদের নজর থাকবে। কিন্তু এখানেও ভয় হয়, ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেবে না তো? দেখা যাবে, এমন প্রভাবশালী চক্র এ অপরাধে জড়িত, যাদের কথায় হুকুম নড়ে, হাকিমও নড়ে। এইচএম এরশাদের শাসনামলে ঢাকা বিমানবন্দরে ঘড়ির একটি চালান ধরা পড়েছিল একজন সৎ অফিসারের কারণে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার প্রাণ যায় এবং এ ঘটনার কোনো বিচার হয়নি। অথচ অপরাধ যারা করেছিল তাদের পরিচয় জানা ছিল সংশ্লিষ্ট সবার। সারোয়ার সুমন জানিয়েছেন, কাস্টম অ্যাক্টে শুল্ক ফঁাঁকি ও মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির জন্য নানা ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু শুল্ক ফাঁকিবাজ সিন্ডিকেট প্রতিটি তৎপর হয়, যাতে লঘুদণ্ডেই অপরাধী পার পেয়ে যায়। এবারেও কি সেটাই হবে? দেখা যাক, ফৌজদারি মামলা দায়ের করার বিধান এ ক্ষেত্রে বলবৎ করা হয় কি-না।

No comments

Powered by Blogger.