বিদ্যুতের দাম ১৫ থেকে ২৪ শতাংশ বাড়ছে by নাজমুল ইমাম

সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসছে আজ। দু'দফায় বিতরণ সংস্থা ভেদে গড়ে ১৫ থেকে ২৪ শতাংশ পর্যন্ত খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। আজ ঘোষণা দেওয়া হলেও প্রথম দফায় দাম বৃদ্ধির ঘোষণা কার্যকর হবে গত ১ ডিসেম্বর থেকে। অর্থাৎ আগামী মাসে গ্রাহককে বর্ধিত মূল্যে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হবে। দ্বিতীয় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়বে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। সাধারণ গ্রাহকদের সামর্থ্যের কথা বিবেচনায় রেখে এবারও ১০০


ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের (লাইফ লাইন গ্রাহক) জন্য বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হচ্ছে না। এ ছাড়া কৃষি এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুতের দামও অপরিবর্তিত থাকবে। এ জন্য যেসব সংস্থায় এ জাতীয় গ্রাহক সংখ্যা বেশি, তাদের জন্য আর্থিক সহায়তার (ভর্তুকি) ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে যেসব সংস্থায় এ জাতীয় গ্রাহক সংখ্যা কম তাদের গ্রাহকের বিদ্যুতের দাম বেশি বাড়বে। আজ বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একযোগে সারাদেশে পাঁচ বিতরণ সংস্থার গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হবে। বিইআরসি সূত্র জানায়, আরইবির গ্রাহকদের জন্য দু'দফায় গড়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ
বাড়ছে। এর মধ্যে গত ১ ডিসেম্বর থেকে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আরেক দফায় ৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। ওজোপাডিকো এবং পিডিবির গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম এর চেয়ে কিছুটা বেশি বাড়বে। সবচেয়ে বেশি বাড়বে ডেসকোর (ঢাকা) গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম। ডিপিডিসির (ঢাকা ও আশপাশ এলাকা) বিদ্যুতের দামও এর কাছাকাছি থাকবে। এ দুই সংস্থার বিদ্যুতের দাম ২৩-২৪ শতাংশ বাড়বে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত বিইআরসি এ হিসাবে মূল্য ঠিক করেছে। তবে মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ার আগে আজ সকালে কমিশন আরেক দফা বসবে। সেখানে বর্ধিত মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছুটা হেরফের হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সব সংস্থায় বাণিজ্য ও শিল্প গ্রাহকের দাম এক হচ্ছে :বর্তমানে বিতরণ সংস্থা ভেদে শহর ও গ্রামের গ্রাহকদের বিদ্যুতের দামে পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে অন্যান্য সংস্থার চেয়ে আরইবির গ্রাহকদের বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হয়। আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এবার বিইআরসি এ বৈষম্য কিছুটা কমিয়ে আনবে। আগামীতে পর্যায়ক্রমে গ্রামের চেয়ে শহরের গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। তবে এবার সব সংস্থার বাণিজ্য ও শিল্প গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য একই করা হচ্ছে। মূল্য আলাদা হলে উৎপাদন মূল্যে হেরফের হয়। এ কারণে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনসহ স্টেকহোল্ডারদের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের দাম এক করার দাবি ছিল।
আবাসিকে দুই স্ল্যাবে দাম বাড়ছে : আবাসিক গ্রাহকদের জন্য তিনটি স্ল্যাব বা ধাপ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম স্ল্যাব হচ্ছে শূন্য থেকে ১০০ ইউনিট। দ্বিতীয় স্ল্যাব হচ্ছে ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট (কিলোওয়াট/ঘণ্টা)। ৪০১ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা তৃতীয় স্ল্যাবে পড়েন। এবারও তিনটি স্ল্যাবই রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্ল্যাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। প্রথম স্ল্যাবে বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য ২ টাকা ৬০ পয়সা। এ স্ল্যাবে বিদ্যুতের দাম অপরিবর্তিত থাকবে। একইভাবে সেচ, কৃষি, অনাবাসিক (ধর্মীয়, সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) গ্রাহকের বিদ্যুতের মূল্য বাড়ছে না। বিইআরসির এক কর্মকর্তা জানান, কোন স্ল্যাবের গ্রাহক কত এবং তারা কী পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, সে সম্পর্কে তাদের কাছে তথ্য না থাকায় এবারও তিনটি স্ল্যাবই রাখা হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে এ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেলে স্ল্যাব সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে তিনি জানান।
তিন কোম্পানির জন্য থাকছে ভর্তুকি : ঢাকার দুটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডেসকো এবং ডিপিডিসির তুলনায় আরইবি, পিডিবি ও ওজোপাডিকো বেশি জায়গাজুড়ে বিদ্যুৎ বিতরণ করে; কিন্তু গ্রাহকের ঘনত্ব কম। যেখানে ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৯০০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন রয়েছে, সেখানে ওজোপাডিকোর রয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন। বিশাল এ বিতরণ লাইন রক্ষণাবেক্ষণে কোম্পানির ব্যয় বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া বিতরণ কোম্পানির অধিকাংশ আবাসিক গ্রাহক 'লাইফ লাইন' সীমানার মধ্যে (১০০ ইউনিট পর্যন্ত) বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। যাদের বিদ্যুতের দাম এবারও বৃদ্ধি করা হচ্ছে না। বিতরণ সংস্থাটি 'লাইফ লাইন' গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এখন ৩ টাকা ৪ পয়সায় বিদ্যুৎ কিনে ৪ টাকা ৬০ পয়সায় বিদ্যুৎ দিচ্ছে। পিডিবি ও আরইবির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এ কারণে সংস্থা তিনটির আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এ জন্য ২৪ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্য বাড়ানোর সময় এ তিনটি সংস্থার বিদ্যুতের মূল্য ডিপিডিসি ও ডেসকোর তুলনায় কম বাড়ানো হয়। এরপরও 'লাইফ লাইন' গ্রাহক সংখ্যা বেশি হওয়ায় সংস্থা তিনটিকে ভর্তুকি দিতে হতে পারে। এ বিবেচনায় বিইআরসির আদেশে সংস্থা তিনটির জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা রাখতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হবে। এর মধ্যে পিডিবির জন্য ১১৩ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিতে বলা হবে। একইভাবে আরইবি ও ওজোপাডিকোর জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে নির্দিষ্ট করে অনুরোধ জানানো হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সমিতিগুলো ছাড়াও পিডিবি এবং ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ওজোপাডিকো) এ তিন ধরনের গ্রাহক সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে আরইবির ৭০টি সমিতি দেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এ দায়িত্বে আছে ওজোপাডিকো। রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জ এলাকা বাদে দেশের অন্যান্য এলাকায় পিডিবি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এ তিনটি সংস্থায় এ তিন ধরনের গ্রাহক সংখ্যা বেশি। ডিপিডিসি রাজধানীর একাংশ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় এবং ডেসকো রাজধানীর বাকি অংশসহ টঙ্গী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এ সংস্থা দুটি অপেক্ষাকৃত সচ্ছল।
গত ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে ৫ শতাংশ হারে সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.