জবানবন্দিতে চতুর্থ সাক্ষী-মদন সাহার ঘর ভেঙে মালামাল শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যান সাঈদী


কাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে পিরোজপুরের পারেরহাটে লোকজনসহ মদন সাহার ঘর ভেঙে মালামাল নৌকায় করে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে দেখেছেন সুলতান আহমদ হাওলাদার (৬০)। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গতকাল বুধবার দেওয়া জবানবন্দিতে সুলতান এ কথা বলেন। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের চতুর্থ সাক্ষী সুলতান। জবানবন্দিতে তিনি


পিরোজপুরে সাঈদীসহ অন্য রাজাকারদের লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের বিবরণ দেন। তিনি বলেন, ‘এক হিন্দু মেয়েকে সাঈদী ও রাজাকার মোসলেম মওলানা নিয়মিত ধর্ষণ করতেন।’
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর ও এ কে এম জহির আহমেদ। কার্যক্রম শুরুর আগেই সাঈদীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
শুরুতে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের তৃতীয় সাক্ষী মো. মিজানুর রহমান তালুকদারকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মঞ্জুর আহমেদ আনসারী। গত মঙ্গলবার মিজানুর ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তৃতীয় সাক্ষীর জেরা শেষ হলে চতুর্থ সাক্ষী সুলতান আহমদ জবানবন্দি দেওয়া শুরু করেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘জুন মাসের মাঝামাঝি আমি বাবার সঙ্গে পারেরহাট বাজারের উত্তর প্রান্তে মাছ বাজারের দিকে যাই। পথে দেখি, রিকশাস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমান সাঈদী তাঁর লোকজন নিয়ে মদন সাহার ঘর ভেঙে বড় নৌকায় মালামাল ওঠাচ্ছেন। পরে সাঈদী ওই নৌকা বোঝাই মালামাল খালের পূর্ব পাড়ে শ্বশুর ইউনুস মুন্সীর বাড়িতে নিয়ে যান।’ তিনি বলেন, হিন্দুসম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগের লোকজনের দোকান ও বসতঘর সাঈদী দেখিয়ে দেওয়ার পর পাকিস্তানি সেনারা সেগুলো লুণ্ঠন করে।
সুলতানের জবানবন্দি অনুসারে, একাত্তরের মে মাসের সম্ভবত ৭ তারিখ পাকিস্তানি সেনারা পারেরহাটে যায়। তিনি দেখেন, সাঈদী ও অন্য রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে পারেরহাট বাজারের ভেতরের দিকে যাচ্ছেন। সাঈদী হাত উঁচু করে বাজারের হিন্দুসম্প্রদায় ও মুক্তিযুদ্ধ-সমর্থনকারী আওয়ামী লীগের লোকজনের ঘরবাড়ি পাকিস্তানি সেনাদের দেখিয়ে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যে দক্ষিণ দিকে বহু লোক ছোটাছুটি শুরু করে ও দোকানপাট লুণ্ঠন শুরু হয়।
একাত্তরে পিরোজপুরের সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্র সুলতান জবানবন্দিতে আরও বলেন, ‘পরদিন বেলা আড়াইটা-তিনটার দিকে আমার বাড়ির পশ্চিম পাশের অল্প দূরে কান্নাকাটি-চিৎকারের শব্দ শুনি এবং আগুনের লেলিহান শিখা দেখি। এগিয়ে দেখি মানিক পসারি, রইছউদ্দিন পসারি, শহীদউদ্দিন পসারির নতুন বাড়িসহ ২০-২৫টি ঘরে আগুন জ্বলছে। ঝোপঝাড়ের আড়াল দিয়ে মানিক পসারির বাড়ির কাছে গিয়ে দেখি, দেলোয়ার হোসেন শিকদার বর্তমান সাঈদী, সেকান্দার শিকদার, দানেশ আলী মোল্লা, মোসলেম মওলানাসহ অন্যান্য রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা মানিকের ফুফাতো ভাই মফিজ ও কর্মচারী ইব্রাহিম ওরফে কুট্টিকে বেঁধে পারেরহাটের দিকে রওনা দিয়েছে। তারা ব্রিজ পার হয়ে খালের পশ্চিম পাড়ে বাজারের মধ্যে রওনা করলে সাঈদীকে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখি। এরপর গুলির আওয়াজ পাই এবং চিৎকার শুনি। পরদিন জানতে পারি, পাকিস্তানি সেনারা কুট্টিকে গুলি করে মেরে ফেলেছে এবং মফিজকে ক্যাম্পে রাতভর অনেক অত্যাচার করেছে। মফিজ পরে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যায়।’
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী সাক্ষীর জবানবন্দি নেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জবানবন্দি শেষ হলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কার্যক্রম মুলতবির আবেদন জানান। পরে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.