সমান তালে একনাগাড়ে by সুদীপ কুমার দীপ

খানিকটা খেলার ছলেই চলচ্চিত্রে এসেছিলেন নিপুণ। পরে সেটাই হয়ে গেল পেশা। দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও জুটল। মাত্র পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে মুক্তি পেয়েছে ৪২টি ছবি। আগামী ৩০ ডিসেম্বর মুক্তি পাচ্ছে নিপুণ অভিনীত নতুন ছবি 'আদরের জামাই'। নিপুণকে নিয়ে লিখেছেন সুদীপ কুমার দীপ বছরের শেষ মাসটা যেন হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়ে যাচ্ছে সবার। কী শীত রে বাবা! সকালে সূর্য ওঠার নামটি নেই! প্রতিদিন তিনি যেন লেট নাইট করছেন। দিনে উদয় হতে


তাই দেরি হচ্ছে। কিন্তু নিপুণের এতে কিচ্ছু যায় আসে না। নিয়মমাফিক খুব ভোরেই উঠছেন তিনি। ঠিক গত পাঁচ বছরের মতোই। ভোরে উঠেই আগে ফ্রেশ হন। এরপর জিম। সেখানে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা শরীর ঘামিয়ে তারপর শুটিং স্পটে যাওয়া। শুধু শীতকালের জন্য নয়, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্তও একই ভাবে চলছে নিপুণের। কি দেশ অথবা বিদেশ। ফিটনেসের জন্য খুব ভোরে ওঠা এবং জিম_দুটোই তাঁর চাই-ই চাই।
এত গেল ব্যক্তিজীবনের কথা। ঠিক একই ভাবে নিপুণ তাঁর ক্যারিয়ারের পেছনেও লাগিয়েছেন লম্বা ফর্দের এক রুটিন। নাটক, বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র_তিন মাধ্যমেই ভারসাম্য বজায় রাখতে নাকি এ রুটিন। নিপুণ বলেন, 'এখনকার নায়িকারা একটিমাত্র মাধ্যমে কাজ করতে গিয়েই হাঁপিয়ে ওঠেন। আর আমি সেখানে তিন তিনটি মাধ্যমে সমানভাবে তাল মিলিয়ে কাজ করছি। একবার ভাবুন তো, যদি রুটিন না অনুসরণ করি, তাহলে কিভাবে হবে?'
গত এক মাসে আসলে নিপুণের শিডিউল খাতাটা যা-তা ভাবে ব্যবহার হয়ে চলেছে। প্রথম সপ্তাহটা বরাদ্দ ছিল নাটকের জন্য। সে সপ্তাহে আমজাদ হোসেনের 'কারবালার পানি' নাটকটির শুটিং করেছেন তিনি। এর পরের সপ্তাহ ছিল বিজ্ঞাপনের জন্য। মাধবকুণ্ডসহ সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে বিজ্ঞাপনটির শুটিংও শেষ করে এসেছেন। তবে এই দুই সপ্তাহ শুধু চলচ্চিত্রের জন্য। আর তাই ধকলটাও যাচ্ছে বেশ। গতকাল থেকে কঙ্বাজারে শুরু হয়েছে রকিবুল আলম রাকিবের 'জান তুমি প্রাণ তুমি' ছবির শেষ অংশের শুটিং। মাত্র চার দিনেই নিপুণের অংশের কাজ শেষ করা চাই। নইলে শুধু নিপুণ নন, সঙ্গে পরিচালকও পড়ে যাবেন বিপাকে। কারণ আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে আবার নতুন ছবির শুটিং করতে যেতে হবে ভারতের মানালিতে। সেখানে বাপ্পারাজ প্রযোজিত ও অনন্য মামুন পরিচালিত 'কাছে এসে ভালোবাস' ছবিটির শুটিং শুরু হচ্ছে। নিপুণের বিষয়ে এই সময়ের অনেক নায়িকার অভিযোগ রয়েছে, তিনি নাকি সহজেই মায়ার জালে জড়িয়ে নেন সবাইকে। যদি একবার কোনো প্রডাকশনে কাজ শুরু করেন তো সেখান থেকে সহজে কেউ তাঁকে সরাতে পারে না। নিপুণের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ স্বয়ং বাপ্পারাজের কথায় আরো পরিষ্কার হয়ে গেছে। কয়েক দিন আগে তিনি এক সাংবাদিককে অনায়াসে বলে বসলেন, 'নিপুণ তো আমাদের ঘরের মেয়ে। ও তো আমার প্রডাকশনে থাকবেই।'
তবে নিপুণের বিরুদ্ধে এই মধুর অভিযোগ তাঁর প্রতিভার কথাই প্রকাশ করে। অবশ্য বাপ্পারাজের এমন কথায় খুব খুশি হতে পারেননি নিপুণ। তিনি বলেন, 'আর কেউ হলে কথা ছিল না। বাপ্পা ভাই! তাঁর সঙ্গে কাজ করতে গেলে তো আমার তালগোল পাকিয়ে যায়। এর ওপর এবার নিজে প্রযোজক। জানি না, কী নাকানি-চুবানি যে খেতে হবে।' নিপুণের হাতে এখন সোহেল আরমানের 'এই তো প্রেম', রকিবুল আলম রাকিবের 'জান তুমি প্রাণ তুমি', রাজু আহমেদের 'তবু তুমি আমার', অহিদুজ্জামান ডায়মন্ডের 'অন্তর্ধান', নতুন একজন পরিচালকের 'তুমি আসবে বলে ভালোবাসবে বলে'সহ প্রায় ১০টি ছবি। তবে অভিনেত্রী হিসেবে নিপুণের সার্থকতা শুধু হাতে থাকা এত ছবি দিয়েই বিচার করলে ভুল হবে। তিনিই একমাত্র অভিনেত্রী, যিনি মাত্র পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে দু-দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। সেই ২০০৬ সালে এফ আই মানিকের 'পিতার আসন' ছবিতে দ্বিতীয় নায়িকা হিসেবে শাকিবের বিপরীতে আগমন করেছিলেন। আর এখন? চলচ্চিত্রের যে কয়জন নির্ভরযোগ্য অভিনেত্রী আছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিপুণ। তাই তো শুধু শাকিবের বিপরীতেই নয়, ইমন, নিরব, ফেরদৌস, বাপ্পারাজ, সম্রাটসহ প্রত্যেক অভিনেতার বিপরীতেই কাজ করছেন তিনি। আগামী পাঁচ বছরে দর্শকদের হয়তো আরো অনেক চমক উপহার দেবেন নিপুণ।

No comments

Powered by Blogger.