ক্যাম্পিংয়ের আনন্দে তিন দিন by আমির খসরু সেলিম

ঠাৎ ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের পুরকৌশল বিভাগের ভবনটা কেঁপে উঠল। কারণ বনের ভেতর ক্যাম্পিংয়ের প্রস্তাব পেয়ে আনন্দে একসঙ্গে লাফিয়ে উঠেছিল ১৬০ শিক্ষার্থী। প্রতিদিনের রুটিন মাফিক জীবন থেকে একটু বিশ্রাম নিতে এরকম সুযোগ খুব বেশি মেলে না। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র ফোরাম ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর আয়োজন করেছিল এক ক্যাম্পিংয়ের। কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ি এলাকার ময়নামতি,


শালবন বিহার এই ঐতিহাসিক জায়গায় আয়োজিত হয় এ ক্যাম্পিং। ১ ডিসেম্বর পুরকৌশল বিভাগের সামনে থেকে দুপুর ১২টায় শুরু হয় যাত্রা। পুরো যাত্রাপথে শিক্ষার্থীরা তাদের যাত্রাক্লান্তি ভুলে মেতে ওঠে আনন্দে। যেন অনেকদিন পর সব বন্দি পাখিগুলো একসঙ্গে ছাড়া পেয়েছে। দীর্ঘযাত্রায় দুপুরের খাবারের কথা কারও মাথাতেই ছিল না। শেষ পর্যন্ত বিকেল ৪টায় সারা হয় দুপুরের খাবার। গন্তব্যস্থলে দলটি নামে সন্ধ্যা ৬টায়। দীর্ঘ যাত্রাক্লান্তিকে পাত্তা না দিয়ে ভুলে সবাই মিলে হাঁটতে থাকে শালবন বিহার থেকে একটু ভেতরে বনের মধ্যে ৭০-৮০ ফুট উঁচু একটি টিলার দিকে, ক্যাম্পিং স্পটে। টিলার ওপর পেঁৗছার পর জায়গা ঠিক করে শুরু হয় তাঁবু বানানোর কাজ। সবাই মিলে খুব সহজেই রাতের আঁধারে ৬টি কুপির আলোয় তৈরি করে ফেলে ৬টি তাঁবু। এভাবে রাতযাপন করা অনেকের কাছেই ছিল একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা। তারপরও সবাই মিলে বেশ আনন্দেই শুরু করে রান্নার কাজ। শহুরে ছেলেরা যখন শাবল- কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে চুলা বানাচ্ছিল, তখন পরিবেশের কারণে এটাই স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। ছাত্র ফোরামের কনভেনর রুকো আর কো-কনভেনর অন্তু বেশ দায়িত্বের সঙ্গে সবকিছু আয়োজন করছিলেন। তাদের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন অনিক, শিপু, রানা, আরিয়েন, সজল, মাহিন। যারা আগেও ক্যাম্পিং করেছেন তাদের কাজ ছিল নতুন যারা ক্যাম্পিংয়ে এসেছে তাদের সাহায্য করা। দু'জন বাবুর্চি আর কিছুসংখ্যক ছাত্র মিলে সেরে ফেলেন চুলো বানানোর কাজ। আর একদল ছাত্র মিলে বনের শুকনো ডালপালা দিয়ে ফায়ার ক্যাম্পের মতো করে। এর আলোতে পুরো জায়গা আধো আলোতে ভরে যায়। সবাই বেশ দক্ষতার সঙ্গে রান্না শেষ করেন। খাবারের আয়োজন করতেই বেজে যায় রাত ১টা। বেশ দীর্ঘ পরিশ্রমী সময়ের পর সবাই তখন খাবারের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ফায়ার ক্যাম্পের মৃদু আলোতে মজা করেই খাবার পর্ব শেষ হলো রাত আড়াইটায়। এরপর ঘুমানোর কথা। কিন্তু কারও ভেতর সেরকম চিহ্ন দেখা গেল না। ভীষণ কর্মব্যস্ত একটা দিনের পরও ছেলেরা ফায়ার ক্যাম্পের চারপাশে বসে গিটার হাতে গান শুরু করে দিল। প্রথম রাত এভাবেই কেটে গেল।
ক্যাম্প লিডারের অনুমতি নিয়ে সবাই গেলেন ময়নামতি, শালবন বিহার ঘুরতে। কেউ গেলেন আশপাশে টিলাগুলো ঘুরে দেখতে। নির্দেশ দেওয়া ছিল দুপুর ১টার মধ্যে ক্যাম্পে ফেরার। যারা ময়নামতিতে গেলেন তারা উঠলেন ওখানকার পুরাকীর্তি নিয়ে আলোচনায়। পুরো জায়গাটা ছিল বেশ বড়। এটি বৌদ্ধদের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র ছিল নাকি অন্য কিছু, এসব নিয়ে নানারকম আলোচনা চলল। দলটা চেষ্টা করল ময়নামতি, শালবন বিহার পরিষ্কার করার। টুরিস্টরা যেসব আবর্জনা ফেলে গেছে সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে ফেলে দেওয়া হলো প্রত্ন এলাকার বাইরে। ২ ডিসেম্বর সবাই মিলে দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হলো। মেয়েরা সন্ধ্যার আগে স্যারের সঙ্গে আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিল। বাকি দলটি ক্যাম্পে শেষ রাত অনেক মজা করে কাটানোর আয়োজন করা শুরু করে দিল। সারারাত গিটার, ঝুনঝুনি আর ডুগডুগির সুর অন্য এক ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল শালবনে। কখনও কখনও কৌতুক, কখনও ছাত্রদের নিজেদের মধ্যে খুনসুটি, কখনও গানে স্রোত চলতে থাকল। রাতটা কাটল একটা মধুর স্বপ্নের মতো।

No comments

Powered by Blogger.