বিএনপি : মেহেরপুর-১ সদর ও মুজিবনগর-একদিকে মাসুদ অরুণ অন্যদিকে ইলিয়াস ও আনছারুল

জন্ম বিরোধপূর্ণ মেহেরপুর জেলা বিএনপি এখনো দুই ভাগে বিভক্ত। দুটি পক্ষই কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করে, তবে পৃথকভাবে। দলে একটি আদর্শ জন্ম দিয়েছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আহম্মদ আলী। সেই আদর্শ এখন দলে নেই। আহম্মদ আলীর ছেলে মাসুদ অরুণ সে আদর্শ থেকে অনেকটাই দূরে। বর্তমানে তাঁকে কেন্দ্র করেই দলে বিভক্তি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তৎকালীন সভাপতি মাসুদ অরুণ সংস্কারবাদী দলে চলে যাওয়ায় এ বিভক্তি।


প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই দলটিতে বিরোধ ছিল। তবে এত বিরোধ এর আগে দেখা যায়নি। দেখা যায়নি দুটি কার্যালয়। যার একটির নেতৃত্বে আছেন মাসুদ অরুণ, অন্যটির ইলিয়াস-আনছারুল। এ দুই গ্রুপ কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করছে।
বিগত পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুণের একক সিদ্ধান্তের কারণে আরো চারজন নেতা ইলিয়াস গ্রুপে যোগ দেন। তাঁরা ইলিয়াস গ্রুপের সঙ্গে হাত মেলানোয় মাসুদ অরুণ গ্রুপ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। তবে তাঁদের তিনজনকে ধরে রাখতে পারেনি ইলিয়াস গ্রুপ। ইলিয়াস জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি। ইলিয়াস-আনছারুল গ্রুপের নেতৃত্ব দেন পৌর বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি আনোয়ারুল হক কালু ও জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মখলেসুর রহমান স্বপন।
পুরনো দলীয় কার্যালয় দখলে আছে মাসুদ অরুণ গ্রুপের। বিদ্রোহী ইলিয়াস হোসেন গ্রুপ থানা সড়কে দলের সাবেক সহসভাপতি আলমগীর হোসেনের একটি বাড়িতে গত সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে কার্যালয় খুলে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
দলে ভাঙন ও পৃথক কার্যালয় পরিচালনা সম্পর্কে বিএনপির সহসভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, 'ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মাসুদ অরুণ ১৯৯৮ সালে তাঁর বাবা বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আহম্মদ আলীর হাত ধরে বিএনপিতে আসেন। অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মাসুদ অরুণ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর দলের কোনো ত্যাগী নেতা-কর্মীকে তিনি মূল্যায়ন করেননি। সব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির লোকজনকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংস্কারবাদী বনে যান তিনি। দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর নামে মামলা হলে আটকের ভয়ে পালিয়ে থাকেন। দুঃসময়ে দলের নেতা-কর্মীদের আমরাই ধরে রাখি।'
বর্তমানে দলীয় নেতা-কর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে সাবেক ওয়ার্কার্স পার্টির কর্মী ও বর্তমান পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাসকে পৌর মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে একক সিদ্ধান্তে মনোনীত করায় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হোসেন, সাবেক পৌর মেয়র আবদুর রহমান, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আলমগীর খান সাতু, যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খায়রুল বাশার ২০১০ সালের ২২ অক্টোবর তাঁদের গ্রুপে যোগ দেন।
আলাউদ্দিন আহমেদ বাদে অন্য তিনজন পরে মাসুদ অরুণ গ্রুপে আবার ফিরে যান। এ প্রসঙ্গে বিএনপির সহসভাপতি আলমগীর খান সাতু বলেন, 'মেহেরপুর জেলা বিএনপিতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো বিকল্প নেতা এখনো তৈরি হয়নি। এ জন্য ফের মাসুদ অরুণের পক্ষে চলে এসেছি। সৎ ও ত্যাগী কোনো নেতা রাজনীতিতে থাকছেন না।
আমাদের হয়তো রাজনীতি থেকে সরে যেতে হবে।' তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা স্বীকার করেন, দলে মাসুদ অরুণের বিকল্প নেই। এক ডাকে তিনি তাৎক্ষণিক কর্মসূচি দিয়ে দু-এক হাজার মানুষ জড়ো করতে পারেন।
পৌর বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আনোয়ারুল হক কালু বলেন, "মাসুদ অরুণ বন্ধু মানুষ। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে তাঁর আদর্শ ছিল মানবতার পক্ষে। এ জন্য নির্বাচনে স্লোগান ছিল 'ধানের শীষে ভোট দিন, রক্ত দিয়ে শোধিব ঋণ'। কিন্তু নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরই তাঁর আদর্শের বিপরীত চিত্র দেখা যায়। তিনি অনেক রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের টাকা নিতেও তাঁর আদর্শে বাধেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি পলাতক ছিলেন।
কঠিন দুঃসময়ে দলকে ধরে রাখতে হয়েছে আমাদের।" তা ছাড়া কেন্দ্র তাঁদেরই সমর্থন দিচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ প্রসঙ্গে মাসুদ অরুণ বলেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নেতা-কর্মী দীর্ঘদিন থেকে বিরোধিতা করে আসছেন। মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের এমপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি আমজাদ হোসেন তাঁর সঙ্গে থাকায় গাংনীর আমজাদবিরোধীরা মেহেরপুর বিএনপিতে তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা করছে। মাসুদ অরুণ দাবি করেন, তাঁর পদ-পদবি না থাকলেও জনগণ সঙ্গে আছে। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আছে এ জন্যই নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় নমিনেশন পেয়েছিলেন বলে জোর দাবি করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.