রবীন্দ্র উৎসবে প্রাণের উচ্ছ্বাস

বীন্দ্র উৎসবের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। এদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেশি-বিদেশি শিল্পীদের পরিবেশিত নানা আয়োজনে মুখর ছিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। সুরের ধারা আয়োজিত উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজনের মধ্যে ছিল নাচ, গান, অর্কেস্ট্রা, নাটক, সেমিনার। ছুটির দিন থাকায় সকাল থেকেই নানা বয়সী মানুষ ভিড় জমান উৎসবস্থল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়


দিনের অনুষ্ঠানমালা। শুরুতেই ছিল কবিগুরুর গান। গান্ধর্বলোক অর্কেস্ট্রার অপূর্ব রবীন্দ্রসঙ্গীত ছিল সর্বশেষ পরিবেশনা।
গান্ধর্বলোক অর্কেস্ট্রায় মুগ্ধ দর্শক-শ্রোতা : রাত সাড়ে ৮টার দিকে শুরু হয় গান্ধর্বলোক অর্কেস্ট্রার পরিবেশনায় রবীন্দ্রসঙ্গীত। সঙ্গীত পরিচালক হুদায়ানন্দের পরিচালনায় এতে বিশ্বের ১৭টি দেশের ৩৫ জন শিল্পী পাশ্চাত্যের যন্ত্রানুষঙ্গে পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। সাতটি গান দিয়ে সাজানো হয় পুরো আয়োজনটি। নামের
শেষাংশ 'ঠাকুর' শব্দটি 'হামিং'য়ের মতো সুরে সুরে গেয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শিল্পীরা। 'আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর', 'আমি কান পেতে রই', 'আমার মাথা নত করে', 'ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়', 'মন মোর মেঘের সঙ্গী', 'আলোকের এই ঝর্ণাধারায়' ও 'অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো'_ এ গানগুলো এতে পরিবেশিত হয়।
নানা আয়োজন : সকালের অধিবেশনের শুরুতেই সম্মেলন কেন্দ্রের মিল্কিওয়েতে একক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন উহাই সিং মারমা, অশোক সাহা, এটিএম জাহাঙ্গীর, মানসী সাধু ও নাইমা নাজ। আরেকটি অধিবেশনে মিল্কিওয়েতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কলকাতার জনপ্রিয় শিল্পী সাশা ঘোষাল। তিনি একে একে পরিবেশন করেন ৭টি গান। বিকেলে একই স্থানে আরও পাঁচটি ভিন্ন আয়োজনে দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেয় রবিরশ্মি, রবিরাগ, সুরতীর্থ ও চট্টগ্রামের সঙ্গীত ভবন। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন পাপিয়া সারোয়ার, ইফফাত আরা দেওয়ান, সাদী মহম্মদ, মিতা হক, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, লিলি ইসলাম, লাইসা আহমেদ লিসা, মহীউজ্জামান চৌধুরী ময়না, রানা কুমার সিনহা, বুলবুল ইসলাম, মহাদেব ঘোষ, শ্রাবণী সেন, সুস্মিতা আহমেদ, নন্দিতা ইয়াসমীন, মেজবাবুল আলম মঞ্জু, নীলোৎপল সাধ্য, কিশোয়ার কামাল, জয়িতা, জয়ী, ইদ্রিস ও মিহির নন্দী। আবৃত্তি করেন আসাদুজ্জামান নূর ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। রিদম ফিউশন পরিবেশন করেন তপন ও সজীব।
শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনা, পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় সকালে হল অব ফেমে নৃত্য পরিবেশন করে 'নৃত্যনন্দন'। 'আলোকের এই ঝর্ণাধারায়' শিরোনামের এই আয়োজনে কবির নাটক ও গানে নৃত্যের পরিবর্তনশীলতা ফুটিয়ে তোলা হয়। এ ছাড়া মণিপুরি, উড়িষ্যা, কত্থক, ভরতনাট্যমসহ বেশকিছু ধারায় এ নৃত্য পরিবেশন করা হয়। শান্তিনিকেতনের 'সপ্তক' আলোচনা আর অভিনয়ের সংমিশ্রণে পরিবেশন করে কবির 'বাল্মীকি প্রতিভা', 'চিত্রাঙ্গদা', 'কালমৃগয়া' ও 'মায়ার খেলা' নাটকের গানগুলো।
উৎসবের অংশ হিসেবে সম্মেলন কেন্দ্রের সেমিনারকক্ষে শুক্রবার চারটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। 'রবীন্দ্রনাটক' শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শফি আহমেদ। স্বপন মজুমদারের সভাপতিত্বে এতে আলোচক ছিলেন আফসার আহমেদ। 'রবীন্দ্রসঙ্গীত' শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন আলপনা রায়। ড. করুণাময় গোস্বামীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন লুভা নাহিদ চৌধুরী ও সুব্রত মজুমদার। 'রবীন্দ্র কবিতা' শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অমিয় দেব। পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ফখরুল আলম ও আবুল মোমেন। 'রবীন্দ্র চিত্রকলা' শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কেতকী কুশারী ডাইসন ও সুশোভন অধিকারী। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও আবুল মনসুর।
বাংলা একাডেমীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমী দু'দিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিন আগামীকাল রোববার সকাল ১০টায় একাডেমীর সেমিনারকক্ষে সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে রবীন্দ্র-মূল্যায়ন শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. কেতকী কুশারী ডাইসন, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং গবেষক মীনা দাঁ।
ইমদাদ হোসেন স্মরণসভা : শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ভাষাসংগ্রামী ও মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী ইমদাদ হোসেন স্মরণে শোকসভা আয়োজন করে কণ্ঠশীলন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পী ইমদাদ হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহপাঠী শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।
সভাপতির বক্তব্যে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী শিল্পী ইমদাদ হোসেনের অনাড়ম্বর জীবনযাপন, দেশ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন।

No comments

Powered by Blogger.