কুমিল্লা সিটি নির্বাচন-কালোটাকার ব্যবহার! by আনোয়ার হোসেন ও গাজীউল হক

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের বেশির ভাগই স্থানীয়ভাবে বিত্তশালী বলে পরিচিত। তাই নির্বাচনের দু-এক দিন আগে কালোটাকা ব্যবহারের আশঙ্কা করছে স্থানীয় ভোটার ও সচেতন মহল। এরই মধ্যে কালোটাকার ব্যবহার শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন কোনো কোনো প্রার্থী ও ভোটার। প্রার্থীরা বিত্তশালী: আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আফজল খান তাঁর হলফনামায় পেশা হিসেবে ‘ইট ব্যবসা’র কথা উল্লেখ করেছেন।
তবে তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগে ঠিকাদারি করতেন। এ ছাড়া কুমিল্লা পৌরসভায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা ঠিকাদারি কাজ করছেন।
সম্মিলিত নাগরিক কমিটির মেয়র পদপ্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ঠিকাদারি ও আবাসন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। হলফনামায় তিনি পেশা হিসেবে ‘ব্যবসা’ উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নূর-উর রহমান ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আনিসুর রহমানের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জাতীয় পার্টি-সমর্থিত প্রার্থী এয়ার আহমদও ঠিকাদারিতে জড়িত।
এ ছাড়া অনেক কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধেই পৌর এলাকায় দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, মাদক ব্যবসা, বহুতল ভবন ও মার্কেটের নকশা অনুমোদন করিয়ে বিত্তবৈভব করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অধুনা থিয়েটারের সভাপতি শহীদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান মেয়র পদপ্রার্থীদের প্রায় সবাই বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রক্ষমতার নেতিবাচক দিকগুলো ব্যবহার করে অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। নির্বাচনে এ টাকা ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে।’
টাকা ছড়ানোর অভিযোগ: স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার জন্য কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন প্রার্থীরা।
মেয়র পদপ্রার্থী নূর-উর রহমান অভিযোগ করেন, মেয়র পদপ্রার্থী মনিরুল হক টাকা ছড়াচ্ছেন। প্রার্থী আফজল খানের পক্ষে ভোটারদের টাকা দিচ্ছেন সাংসদ আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে কোথায়, কাকে টাকা দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে নূর-উর রহমান কারও ঠিকানা দিতে পারেননি।
প্রার্থী আনিসুর রহমান অভিযোগ করেন, মনিরুল হক করমর্দন করার নামে গত বুধবার নগরের হযরত পাড়া, সংরাইশ ও সুজানগরে ভোটারদের টাকা দিয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে মনিরুল হক বলেন, ‘টাকা দিয়ে ভোট কেনা যায় না। কেউ এমন দেখলে ছবি তুলে তা নির্বাচন কমিশনে দিতে পারে।’
কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাংসদ আ হ ম মুস্তফা কামাল মঙ্গলবার নগরের ধনপুর, ঢুলিপাড়া, রাজাপাড়া, চৌয়ারা বাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি সেখানে ভোটারদের টাকা দিয়েছেন। মুস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি টাকা দিইনি। কর্মীদের বলেছি, কেউ টাকা নিয়ে এলে পুলিশে ধরিয়ে দিতে।’
নগরের ছোটরা ও মফিজাবাদ কলোনি এলাকায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী বিল্লাল হোসেন ভোটারদের টাকা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে বিল্লাল বলেন, ‘নির্বাচন টাকার খেলা। না দিলেও প্রতিপক্ষ বলে টাকা দিয়েছি।’
১৫ নম্বর ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধেও গদার মার কলোনি ও কাটাবিল এলাকায় ভোটের নিশ্চয়তার বিনিময়ে টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
টাকার ব্যবহার বাড়তে পারে: ভোটার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশঙ্কা, নির্বাচনের দু-তিন দিন আগে কালোটাকার ব্যবহার বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে, নির্বাচনের আগের রাত গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থী ও প্রশাসনের কাছে ওই রাত ‘চাঁদরাত’ হিসেবে আখ্যা পেয়েছে।
কুমিল্লার সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক শাহ মো. আলমগীর খান প্রথম আলোকে বলেন, কালোটাকা অতীতে ছিল, এখনো আছে। ভোটের কয়েক দিন আগে টাকা ব্যবহারের আশঙ্কা থাকে সবচেয়ে বেশি। টাকার ব্যবহার হলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন হবে না।
জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন প্রথম আলোকে বলেন, অনেকেই মুখে অভিযোগ করছেন। কিন্তু লিখিত অভিযোগ ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া তো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। তিনি জানান, নির্বাচনের দুই দিন আগে নগরের সব স্থানে র‌্যাব-পুলিশ অবস্থান নেবে। কালোটাকা বহনকারী সন্দেহ হলেই যে কাউকে তল্লাশি করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.