মহাজোটের মিছিল ও যানজট-রাজধানীবাসীর এই ভোগান্তির শেষ কোথায়

মনিতেই তীব্র যানজটে রাজধানী প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। ১০ মিনিটের পথ পেরোতে সময় লাগে দুই ঘণ্টারও বেশি। তার পরও গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো রাস্তা দখল করে যদি মিছিল-মিটিং হয়, তাহলে তো কথাই নেই। সারা ঢাকায় ছড়িয়ে পড়বে তীব্র যানজট। এরপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাক রাস্তায়। জরুরি রোগীকে হাসপাতালে নিতে না পারায় রাস্তায় মৃত্যু হয় হোক_তাতে কার কী আসে যায়। রোগীর স্বজনদের এই মৃত্যু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার


থাকে না। এ যেন আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীবাসীকে এমনি অবস্থায়ই পড়তে হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মহাজোটের মহা-মিছিলের কারণে রাজধানীতে সৃষ্টি হয়েছিল এক মহা-যানজটের। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে যানজট এতটাই তীব্রতা পেয়েছে যে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাই ব্যাহত হয়ে পড়েছে। এতে সময়ের অপচয় যেমন হয়, তেমনি ১০ মিনিটের পথ পেরোতে দুই ঘণ্টা বা ১২০ মিনিট লাগায় জ্বালানিরও অপচয় হয় প্রায় ১২ গুণ। সম্প্রতি একটি দৈনিক পত্রিকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী এবং অর্থনীতি বিশ্লেষকদের উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাজধানীতে কেবল যানজটের কারণে কর্মজীবী মানুষের প্রতিবছর কমপক্ষে ৮০ লাখ শ্রমঘণ্টা এবং প্রায় ৩৫ লাখ বাণিজ্যিক ঘণ্টা নষ্ট হয়ে থাকে। আর্থিক বিবেচনায় যা ২০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। কিন্তু এই হিসাবের চেয়েও বাস্তব ক্ষতি আরো অনেক বেশি। জ্বালানির অপচয়ও আর্থিক মূল্যে বিবেচনা করলে কয়েক হাজার কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে। আবার অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়ানোর ফলে ঢাকার পরিবেশেরও অতিরিক্ত ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া যানজটের কারণে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ব্যাহত হওয়া, জরুরি রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হওয়া, অতিরিক্ত ভাড়া ও দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রভাব পড়া এমনি আরো অনেক ক্ষতিরই শিকার হচ্ছে ঢাকার মানুষ। কিন্তু কেন এ রকম যানজট? বিশেষজ্ঞদের মতে, এর জন্য যানবাহনের সংখ্যা যতটা না দায়ী, তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী রাস্তায় কোনো ধরনের নিয়ম-শৃঙ্খলা না থাকা। কারণ পৃথিবীতে অনেক শহর আছে, যেখানে ঢাকার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি যান চলাচল করে; অথচ সেসব শহরে এ রকম যানজট হয় না। যত্রতত্র পার্কিং, যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহনের একত্রে চলাচল, কার আগে কে যাবে প্রতিযোগিতা করে রাস্তা আটকে দেওয়া, যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাসগুলোর রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো, ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণ থাকা_এমনি বহু কারণে ঢাকায় যে যানজট তা কি কেবল বিশাল বাজেটের ফ্লাইওভার নির্মাণ করে সারানো যাবে? এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অনেক সংশয় রয়েছে। যাহোক, তার পরও বর্তমানে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল এবং এঙ্প্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ চলছে। এগুলো সম্পন্ন হলে হয়তো ঢাকা শহরের যানজট কিছুটা কমবে। কিন্তু এর আগে কি ঢাকার মানুষ দমবন্ধ হয়ে মারা যাবে? বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল পরিবেশদূষণজনিত কারণে ঢাকায় প্রতিবছর ২০ হাজারের মতো মানুষ মারা যায়। এই মৃত্যুর মিছিল কি দীর্ঘ হতেই থাকবে? তদুপরি গোদের ওপর বিষফোড়ার মতো মিছিল-মিটিংয়ের অত্যাচারগুলো মানুষের ওপর না চাপালেই নয়? আমাদের বিবেচনায়, তীব্র যানজটের এই নগরীতে রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত করে এমন কোনো কর্মসূচি চলতে দেওয়া উচিত নয়। এটি বিরোধী দলের জন্য যেমন সত্যি, সরকারি দলের জন্যও একইভাবে সত্যি। আমরা আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে সুস্থ মানসিকতার পরিচয় দেবে।

No comments

Powered by Blogger.