আটক উলফা নেতাদের ভারতে পুশব্যাকঃ লুকোচুরির অর্থ কী?

বেশ ক’দিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল রাজধানীর উত্তরা থেকে উলফার দুই শীর্ষ নেতাকে আটক করা হয়েছে। সবার জানা, উলফা হচ্ছে আসামের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তাদের বিরুদ্ধে ভারত সরকার নানা ধরনের নির্যাতনমূলক অভিযান চালিয়ে আসছে। উলফাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেও নিবৃত্ত করা যায়নি। ১৯৭১ সালে আমরা যেমন পাকিস্তানিদের নির্যাতনের মুখে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলাম, কোনো কোনো উলফা নেতার একই কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়াটা অস্বাভাবিক বিষয় নয়।
এর আগে অনুপ চেটিয়া নামে উলফার অন্যতম শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হয়ে বাংলাদেশের জেলে বন্দি আছেন। ভারতের সঙ্গে বন্দি প্রত্যার্পণে প্রয়োজনীয় চুক্তি না থাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের সাজা শেষ হওয়ার পর তাকে মুক্তি দিয়ে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার প্রশ্ন উঠছে না। তবে তার বিষয়টা নিয়ে তত্কালীন সরকার কোনো রাখঢাক করেনি। কিন্তু বর্তমান ঘটনা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল।
উলফা সূত্র সংবাদপত্রে জানিয়েছে, গত ১ নভেম্বর রাতে ঢাকায় চিত্রবন হাজারিকা ও শশধর চৌধুরী নামে তাদের দুই নেতাকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃগ্ধখলা বাহিনীর সদস্যরা আটক করেছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা হয়নি। আইনশৃগ্ধখলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সবাই প্রশ্নটি এড়িয়ে গেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও মুখ খোলেননি। অথচ আসামের গৌহাটি থেকে বিবিসি সংবাদদাতার খবর হলো, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে উলফা নেতাদের বাংলাদেশে আটক করে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। আসামের আদালতে তাদের হাজির করে ১৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য আমাদের স্বরাষ্ট্র সচিব সম্পূর্ণ অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের গুজবের ডালপালা বিস্তৃত হয়েছে।
এমনিতেই বর্তমান সরকারের ভূমিকা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। অতীত ইতিহাসের কারণে শাসক দল আওয়ামী লীগের ভারতপ্রীতির কথাও গোপন বিষয় নয়। একতরফাভাবে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, এশিয়ান হাইওয়ের নামে ভারতকে করিডোর দেয়াসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের ভূমিকা মানুষকে সন্দিহান করে তুলেছে। তাই এখন উলফা নেতাদের বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা আবারও সরকারের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, অস্বীকার করার উপায় নেই।
ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ব্দুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাটা জরুরি, সন্দেহ নেই। আসামসহ সেভেন সিসল্টার্স নামে পরিচিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭টি ভারতীয় রাজ্যে কী ঘটছে সেটা সম্পূর্ণ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কোনোভাবেই তার সঙ্গে আমাদের জড়িয়ে পড়া সমীচীন হবে না। উত্তর-পূর্ব ভারতের আগুনের শিখা যেন বাংলাদেশে ছড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের পূর্ববর্তী সরকারগুলো এ ব্যাপারে সচেতন থাকলেও বর্তমান সরকার অজ্ঞাত কারণে যে কোনো মূল্যে দিল্লিকে খুশি করতে উতলা হয়ে উঠেছে। দিল্লিকে খুশি করতে গিয়ে উলফাসহ সেখানে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ক্রোধ ডেকে আনা যে চরম নির্বুদ্ধিতার কাজ হবে এই সহজ কথাটি সরকার কেন বুঝতে চাইছে না তা তারাই ভালো জানে। বিশেষ করে এখন বিষয়টি যেদিকে মোড় নিয়েছে তাতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন না উঠে পারে না। এ ধরনের বিষয় নিয়ে লুকোচুরি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুললে এর দায় যার ঘাড়েই বর্তাক, ভুগতে হবে কিন্তু আমাদের সবাইকে।

No comments

Powered by Blogger.