সড়কে খানাখন্দ ফাটা, পর্যটন ব্যবসায় ভাটা! by গিয়াস উদ্দিন

দেশের পর্যটন শিল্পে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু এই সড়কের তিন শতাধিক স্থানে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় এটি অনেকটাই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ৮৯ কিলোমিটার এ সড়কের থাইংখালী থেকে টেকনাফ জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ৪৩ কিলোমিটারের প্রায় অর্ধেক পথই খানাখন্দে ভরা। পাশাপাশি ১৪টি সেতু রয়েছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। এই অবস্থায় পর্যটনশিল্পের ওপর নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।


এমন নাজুক অবস্থার মধ্যেই প্রতিদিন চলছে দুই শতাধিক ভারী যানবাহন। প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীও টেকনাফ-কক্সবাজার সড়ক দিয়ে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি পর্যটকের আসা-যাওয়াতেও ব্যস্ত থাকে সড়কটি। গত ১৮ জুলাই সড়কের বিসিক এলাকায় একটি সেতুর একাংশ ধসে পড়ায় টানা পাঁচ দিন যান চলাচল বন্ধ ছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের ৪৬টি সেতুর মধ্যে রেলিং ভেঙে ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এগুলো হলো: হেচ্ছারখালের সেতু, জাদিমুরা, আলীখালী, ওয়াব্রাং, মৌলভীবাজার, লম্বাবিল, কাটাখালী মাজার, তুলাবাগান, থাইংখালী, হিজলিয়াপালং লাল, মরিচ্চ্যা বাজার লাল, রাবেতা হাসপাতালের লাল, ঢেউশাপালং ও পানেরছড়া বাজার সেতু। এসব সেতুর কয়েকটি জায়গায় জায়গায় গর্ত। কখনো কখনো সেতুগুলোর ওপর যানবাহন বিকল হয়ে আটকে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চলতি মৌসুমে ‘রুটিন মেইনটেন্যান্স’-এর নামে সড়কের পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচ করা হলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কিছু দিন আগে ইটের খোয়া ও বালু দিয়ে গর্ত ভরাটের চেষ্টা করা হলেও বৃষ্টির পানিতে তা ধুয়ে যায়।
সড়কের বেহাল দশার জন্য পর্যটকেরা কম আসছেন দাবি করেছেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ব্যবসায়ীরা। হোটেল-কটেজ ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এ বছর ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। কয়েক দিন ধরে হোটেল-মোটেলগুলো বলতে গেলে খালি পড়ে আছে।’
সেন্ট মার্টিন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সারা বছর এখানকার ব্যবসায়ীরা পর্যটনের এই মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করেন। অথচ এ বছর ব্যবসার অবস্থা এতই খারাপ, কর্মচারীদের বেতনটাও মালিকেরা দিতে পারবেন না।’
বাসচালক মো. আমিন ও ট্রাকচালক ফরিদ আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সড়কের ৮৯ কিলোমিটার যেতে সময় লাগে সাড়ে তিন ঘণ্টা। কিন্তু টেকনাফ-থাইংখালী ৪৩ কিলোমিটারেই লাগে প্রায় ৩ ঘণ্টা।’
সড়কে চলাচলকারী কয়েকজন যাত্রী বলেন, ‘টেকনাফ থেকে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকা যাতায়াত করতে হলে আগে ব্যথার ওষুধ খেয়ে বাসে উঠতে হয়।’
টেকনাফ স্থলবন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও কাঠ ব্যবসায়ী জিয়াউল করিম বলেন, ‘সরকার প্রতিবছর এ স্থলবন্দর থেকে ৭০ থেকে ৮৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে আসছে। পুরো জেলার তিন ভাগের দুই ভাগ রাজস্ব আয় ওই স্থলবন্দর দিয়ে আসে। কিন্তু এ অঞ্চলের সড়ক উন্নয়নে কোনো ধরনের অগ্রগতি চোখে পড়ে না।’
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিক মিয়া বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু মেরামত ও সড়কটি দুই লেন-বিশিষ্ট করার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটন খাতে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সড়কটি কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে একাধিক চিঠি পাঠানো হয়েছে।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) টেকনাফের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই এ সড়কের মেরামতকাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এলাকার পযর্টনশিল্প ও সীমান্ত-বাণিজ্যের কথা চিন্তা করে সেতু ও সড়ক নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ বরাবর কয়েক দফায় পাঠানো হয়েছে।’
সড়কের ১৪টি সেতু মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও থাইংখালী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৪৩ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশার কথাও তিনি স্বীকার করেন।

No comments

Powered by Blogger.