সাইকের কল্যাণে হাসল বাংলাদেশ

মিরপুরের শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ইনডোরের গ্যালারি গত দুই দিনে বেশির ভাগ সময়ই ফাঁকা ছিল। কিন্তু কাল সেই গ্যালারিতেই প্রায় হাজার দুয়েক দর্শক। কারও হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার পাশে লেখা ‘সাইক সিজার’, কারও হাতে লেখা ‘গো সিজার গো’। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি তরুণের জন্যই মূলত সুলতানা কামাল চতুর্থ দক্ষিণ এশীয় আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকস দেখতে আসা এসব দর্শকের। হতাশ করেননি সাইক সিজার।
১৪.৬০ পয়েন্ট নিয়ে কাল প্যারালাল বারে সোনা জিতেছেন ২১ বছরের এই তরুণ। ১৩.৮৫ পয়েন্ট পাওয়া উজবেকিস্তানের রুসলান ইরগাসেভ জিতেছেন রুপা। ব্রোঞ্জজয়ী ভারতের দেবেশ কুমারের পয়েন্ট ১৩.৭২।
জিমন্যাস্টিকসে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সাফল্য নেই বললেই চলে। দেশের বাইরে খুব কম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যাওয়ার সুযোগ হয়। এসএ গেমসেও জিমন্যাস্টিকস নেই। দেশে প্রায় অপ্রচলিত এই খেলায় প্রথমবারের মতো সোনা জিতে তাই চমকই দেখিয়েছেন সাইক সিজার। যদিও শুরুর দিন থেকে তাঁর ওপর একটা প্রত্যাশার চাপ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু প্রথম দিনে দলগত ইভেন্টে কোনো সোনা জেতেনি বাংলাদেশ। গত পরশু দ্বিতীয় দিনে অল-অ্যারাউন্ডে ব্রোঞ্জ জিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল সিজারকে। কাল নিজেকে চিনিয়ে সোনা জিতলেন মিসিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্র।
কাল অন্য প্রতিযোগীরা যেখানে দুটি বা তিনটি ব্যক্তিগত ইভেন্টে অংশ নিচ্ছিলেন, সেখানে সাইক ছিলেন দিনের ছয়টি ইভেন্টেই। যে কারণে অন্যরা ইভেন্ট শুরুর আগে সামান্য বিশ্রাম পেলেও সাইককে পর পর নামতে হয়েছে টানা ছয়টিতে। তার পরও প্যারালাল বারে সোনা জেতার পাশাপাশি ভল্টিং টেবিলে রুপা জিতেছেন; ব্রোঞ্জ জিতেছেন ফ্লোরে। অবশেষে একটা সোনার পদক জিততে পেরে দারুণ খুশি সাইক। খেলা শেষে উচ্ছ্বসিত সাইক বলছিলেন, ‘শেষ পর্যন্ত একটা সোনা জিততে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমি এখানে আসার পর থেকে খুবই স্নায়ুচাপের মধ্যে আছি। প্রত্যেকেই আমার কাছে এসে বলছে, “তোমাকে সোনা জিততে হবে।” এটা আমাকে একটু হলেও চাপে ফেলে দিয়েছিল।’
সাইকের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোচ হিসেবে এসেছেন তাঁর বাবা কাজী সিজার আহমেদ। একেকটি ইভেন্ট শেষ করছেন সাইক, অমনি খুশিতে লাফিয়ে উঠছেন বাবা। প্যারালাল বার শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো কোর্ট শিশুদের মতো দৌড়াতে লাগলেন। এ ইভেন্টে যে সাইক সোনা জিতবেন, সে ব্যাপারে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন সিজার আহমেদ, ‘ও এই ইভেন্টে মিসিগানেও সেরা। আমি জানতাম, এখানে ও ভালো করবে। তবে এখানে বিচারকেরা ওকে ঠিকমতো নম্বর দেয়নি। আমি প্রতিবাদ করার পর নম্বর কিছুটা বাড়িয়েছে।’ ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের যেসব কাজ করার কথা, সেগুলো করতে হচ্ছিল সাইকের বাবাকেই!
সাইকের পাশাপাশি কাল পদক জিতেছেন মেয়েদের মধ্যে সাথী আক্তার। ভল্টিং টেবিলে ১১.০১ পয়েন্ট পেয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন সাথী। সোনা জেতা ভারতের দীপা কর্মকারের পয়েন্ট ১৩.৫৩, রুপা উঠেছে স্বদেশি মীনাক্ষির গলায়। তাঁর পয়েন্ট ১২.৫৩।
তিন দিনের প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে কাল। সাতটি করে সোনা ও রুপা এবং দুটি ব্রোঞ্জ নিয়ে ছয় দলের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন উজবেকিস্তান। ছয় সোনা, চার রুপা ও চার ব্রোঞ্জ জিতে রানার্সআপ ভারত। এক সোনা, দুই রুপা ও তিন ব্রোঞ্জ জেতা বাংলাদেশ তৃতীয়। শেষ দিনে সাইক সোনা জেতায় মান রইল স্বাগতিক দলের।

No comments

Powered by Blogger.