শেখ হাসিনা ও অমর্ত্য সেন বাংলা একাডেমীর ফেলোশিপ পেলেন-যুদ্ধাপরাধীরা যেখানেই থাক বিচার হবেই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। যুদ্ধাপরাধীরা যেখানেই থাকুক, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্বপ্ন পূরণে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ সমাজএবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অপরিহার্য। গতকাল শুক্রবার বাংলা একাডেমীর ৩৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা ও ফেলোশিপ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।


অনুষ্ঠানে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এএফ সালাহউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অমর্ত্য সেনের হাতে ক্রেস্ট এবং সনদপত্র তুলে দেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা, অধ্যাপক
রফিকুল ইসলাম ও অমর্ত্য সেনের হাতে 'বাংলা ব্যাকরণ বই' তুলে দেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত বাঙালি জাতির গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাঙালিদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা একাডেমী সব আন্দোলন-সংগ্রামে জাতির প্রেরণার উৎস। বিশ্বে আমরাই একমাত্র জাতি মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তিনি একটি লক্ষ্যেই দেশের জন্য কাজ করেছেন তা হলো_ জাতির স্বপ্ন পূরণ, যে জন্য লাখ লাখ মানুষ ও জাতির জনক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে দুই প্রবাসী বাংলাদেশির সহায়তায় তার সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন তিনি। ফেলোশিপ গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে তাকে সম্মানিত করায় বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, 'আমি মনে করি আমি একজন সাধারণ বাঙালি নারী। আমি এ বিরল সম্মান লাভের কথা কখনোই ভাবিনি।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্রেস্ট প্রদানকালে অধ্যাপক এএফ সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, শেখ হাসিনা বাঙালির মর্যাদা রক্ষার নিরলস প্রচেষ্টায় তাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গৌরবের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য বাংলা একাডেমী, পশ্চিম বাংলার বিশেষজ্ঞ ও কলকাতা আকাদেমিকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, দীনেশ চন্দ্র সেন প্রমুখ ১৯০১ সালে খাঁটি বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে তারা সফল হননি। 'বিশ্বকবির আরাধ্য সেই কাজ বাংলা একাডেমী বিগত আড়াই বছরে সম্পন্ন করেছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের।' বাংলা একাডেমীকে আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা ও গবেষণার পীঠস্থান এবং বাঙালি জাতিসত্তার প্রাণকেন্দ্র অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী একাডেমীর আরও উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ ভাষা। অন্য ভাষা থেকে শব্দ, ধ্বনি ও প্রকাশভঙ্গি গ্রহণে এর ক্ষমতা প্রশংসনীয়। তিনি আরও বলেন_ শিক্ষা, বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা, ভাষা ও সংস্কৃতি এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করছে। বিশেষ করে নারীর অগ্রগতি এদেশের জন্য অসাধারণ সাফল্য। অন্যান্যের মধ্যে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
তাসনিম হায়দার চৌধুরীর বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শহীদ অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর বড় ছেলে মরহুম তাসনিম সুমন হায়দার চৌধুরীর গুলশানের বাসভবনে যান। প্রধানমন্ত্রী তাসনিম চৌধুরীর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং মরহুমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার কফিনের পাশে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। শেখ হাসিনা তাসনিম চৌধুরীর মা তহমিনা মনোয়ারা চৌধুরী, তার স্ত্রী এবং অন্য আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত চেয়ে দোয়া করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে সাংবাদিক বেবী মওদুদ এমপি এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মেয়ের জামাই তাসনিম চৌধুরী মঙ্গলবার রাতে ৪৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে সিঙ্গাপুর যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে মঙ্গলবার রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

No comments

Powered by Blogger.