পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহ ও তাঁর রাসুল মানুষকে জীবনের পথে ডেকেছেন এবং প্রতিষ্ঠিত করেছেন

৩. ওয়ালাও আ'লিমাল্লাহু ফীহিম্ খাইরা ল্লা-ছ্মাউ'হুম; ওয়ালাও আছ্মাআ'হুম লাতাওয়াল্লাওঁ ওয়া হুম মু'রিদ্বূন।
২৪. ইয়া-আইয়্যুহাল্লাযীনা আ-মানু ছ্তাজীবূ লিল্লাহি ওয়া লির্রাছূলি ইযা- দাআ'-কুম লিমা- ইউহ্য়ীকুম; ওয়া'লামূ আন্নাল্লাহা ইয়াহূলু বাইনা ল্মারয়ি ওয়া ক্বাল্বিহী ওয়া আন্নাহূ ইলাইহি তুহ্শারূন। ২৫. ওয়াত্তাক্বূ ফিত্নাতা ল্লা-তুসীবান্নাল্লাযীনা যালামূ মিনকুম খা-চ্ছাহ্; ওয়া'লামূ আন্নাল্লা-হা শাদীদুল ই'ক্বা-ব। ২৬. ওয়া য্কুরূ ইয্ আনতুম ক্বালীলুম্ মুছতাদ্বআ'ফূনা


ফিল আরদ্বি তাখা-ফূনা আন ইয়্যাতাখাত্ত্বাফাকুমু ন্না-ছু ফাআ-ওয়া-কুম ওয়া আইয়্যাদাকুম বিনাস্রিহী ওয়া রাযাক্বাকুম্ মিনাত্ত্বায়্যিবাতি লাআ'ল্লাকুম তাশ্কুরূন। [সুরা : আল-আনফাল, আয়াত : ২৩-২৬]

অনুবাদ
২৩. তাদের মধ্যে কোনো কল্যাণকর গুণ আছে বলে যদি আল্লাহ জানতেন, তবে তাদের তিনি অবশ্যই শোনার তাওফিক দিতেন। কিন্তু তাদের শোনার তাওফিক দিলেও তারা মুখ ফিরিয়ে নেবে (যেহেতু তাদের মধ্যে কোনো কল্যাণকর গুণ নেই)।
২৪. হে ইমানদাররা! আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ডাকে সাড়া দাও, যখন তোমাদের এমন কিছুর দিকে ডাকা হয়, যা তোমাদের সত্যিকার জীবন দেবে। জেনে রেখো, আল্লাহ তায়ালা মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন; আর তোমাদের সবাইকে তাঁর কাছে একত্রিত করা হবেই।
২৫. ফেতনা বা অনাচার সৃষ্টির ব্যাপারে সতর্ক থাকো, কারণ এর পরিণতিতে শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, যারা জুলুম করে (বরং এর ছোবলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়)। জেনে রেখো, আল্লাহর শাস্তি ভয়ংকর।
২৬. আর সেই সময়কে স্মরণ করো, যখন তোমরা সংখ্যায় অল্প ছিলে, পৃথিবীতে তোমাদের অত্যন্ত দুর্বল মনে করা হতো, তোমরা সর্বদা এ ভয়ে থাকতে যে কখন (শত্রু পক্ষের) লোকেরা এসে তোমাদের ওপর চড়াও হবে। এরপর আল্লাহ তোমাদের একটা ভূখণ্ডে এনে আশ্রয় দিলেন, তাঁর সাহায্য দিয়ে শক্তিশালী করলেন এবং হালাল (বৈধ) সহায়-সম্পত্তি দান করলেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় কর।

ব্যাখ্যা : ২৩ নম্বর আয়াতে 'খাইরুন' বা 'কল্যাণকর গুণ' দ্বারা সত্যের অনুসন্ধিৎসা বোঝানো হয়েছে। আর আগে বলা হয়েছে, 'শোনা' দ্বারা বোঝানো হয়েছে 'উপলব্ধি করা'। সত্য বোঝার ও মানার তাওফিক আল্লাহ তায়ালা তাদেরই দেন, যাদের অন্তরে সত্য উপলব্ধি করার অনুসন্ধিৎসা আছে। এখানেই হলো মানুষের নিজের ভাগ্য নির্ধারণের জায়গাটা।
২৪ নম্বর আয়াতে ইসলামের দাওয়াত ও বিধানের মূল উদ্দেশ্য বিবৃত হয়েছে। ইসলাম এসেছে মানুষকে জীবনের পথ দেখানোর জন্য। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শিক্ষা যা ইসলাম ও কোরআন হিসেবে মানুষের কাছে এসেছে, এর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সফল করে তোলা। ইবাদত-বন্দেগি তো আ@ি@@@ক প্রশান্তির সর্বোত্তম মাধ্যম। সেই সঙ্গে ইসলামের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিকনির্দেশনাসহ মানবিক শিক্ষা মানবসমাজকে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির যুগোত্তীর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এই আয়াতের শেষাংশে মানুষের অন্তরে আল্লাহর অবস্থানের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তির অন্তরে সত্য লাভের বা আল্লাহকে ধারণ করার আগ্রহ আছে, তাঁর অন্তরে যদি কখনো গুনাহের ইচ্ছা জাগে, সে অবস্থায় তিনি যদি সত্যসন্ধানীর মতো সত্যকে উপলব্ধি করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চান, তবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর ও গুনাহের মধ্যে প্রতিবন্ধক হয়ে যান। এভাবে তিনি গুনাহ থেকে রক্ষা পান। অপরদিকে তাঁর অন্তরে যদি কোনো ভালো কাজের ইচ্ছা জাগে, তখন যদি তিনি আল্লাহকে উপলব্ধি না করে সেই কাজে গড়িমসি করেন, তবে তাঁর সে কাজ সম্পাদন করার সৌভাগ্য নাও হতে পারে। সে জন্য ভালো কাজের ফয়সালা অন্তরে সৃষ্টি হওয়া মাত্র তা বাস্তবায়নে নেমে যাওয়ার নির্দেশ রয়েছে।
২৫ নম্বর আয়াতে মানুষের সামাজিক দায়-দায়িত্বের গুরুত্বের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। যেমন_ফেতনা-ফাসাদের কারণে যদি সমাজে আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে, তখন সেটা কেবল পাপীদের ওপর পতিত হয় না; বরং তা সবাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
২৬ নম্বর আয়াতে দুর্বল অবস্থা থেকে ইসলামের প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ইসলাম এসেছে মানুষকে জীবনের পথ দেখানোর জন্য এবং তা প্রতিষ্ঠিতও হয়েছে সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.