শুধুই চিঠি চালাচালি

ত্তরাঞ্চলে বিসিকের (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন) ৭টি শিল্পনগরী সম্প্রসারণের জন্য নেওয়া প্রকল্পটি চিঠি চালাচালিতে আটকে আছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানোর পর বিসিকের পক্ষ থেকে আবার নতুন করে ডিপিপি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কবে নাগাদ প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে উত্থাপন করা হবে এবং তা অনুমোদিত হবে সে ব্যাপারে বিসিকের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।


সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তাবিত বিসিক শিল্পনগরীগুলো হলো_ বগুড়া, রংপুর, পাবনা, নীলফামারীর সৈয়দপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী এবং দিনাজপুর। গত বছরের ১৭ মে বগুড়া শিল্পনগরী পরিদর্শনকালে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া উত্তরাঞ্চলের ওই ৭টিসহ সারাদেশে বিসিকের মোট ২৫টি ইউনিট সম্প্রসারণের কথা জানিয়েছিলেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা সে সময় মন্ত্রীকে এ অঞ্চলে বিসিকের পুরনো শিল্পনগরীগুলোতে প্লট সংকটের কথা জানিয়ে বলেছিলেন, জায়গা না পাওয়ার কারণে আবাসিক এলাকায় একের পর এক কলকারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে।
বিসিক সূত্র জানায়, প্রায় ৫ বছর আগে ২০০৫ সালে উত্তরাঞ্চলে ৫টিসহ সারাদেশে ১৫টি শিল্পনগরী সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিসিকের পক্ষ থেকে ১৩৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। সে সময় ওই প্রকল্পের অধীনে উত্তরাঞ্চলে বগুড়া, রংপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নীলফামারীর সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়। পরে ২০০৬ সালের শেষ দিকে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য বিসিকের পরিকল্পনা বিভাগ থেকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাঠানো হয়। প্রায় ৪ বছর ঝুলে থাকার পর গত বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় প্রকল্পটি উত্থাপিত হয়। তবে সেটি অনুমোদন না দিয়ে আরও ১০টি শিল্পনগরী সম্প্রসারণের প্রস্তাব করে নতুন প্রকল্প গ্রহণের জন্য আবার বিসিকে ফেরত পাঠানো হয়।
উত্তরাঞ্চলে বিসিকের সবচেয়ে বড় শিল্পনগরী রয়েছে পাবনায়। ১৯৬২ সালে ১০৩ দশমিক ৩০ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত ওই শিল্পনগরীতে ৪৬৮টি শিল্প প্লটের সবই বরাদ্দ শেষ হয়ে গেছে। সেখানে নতুন করে শিল্প স্থাপনের মতো আর একটি প্লটও নেই। প্রায় একই অবস্থা রাজশাহীতেও। ১৯৬০ সালে ৯৫ দশমিক ৭১ একর জায়গা নিয়ে নির্মিত বিভাগীয় ওই শিল্পনগরীতে ৩২৯টি প্লটের একটিও আর ফাঁকা নেই। একই বছর ২০ দশমিক ৬৮ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত রংপুর বিসিক শিল্পনগরীতে ৮৩টি প্লটের বরাদ্দ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। ১৯৬৪ সালে দিনাজপুরে প্রতিষ্ঠিত বিসিক শিল্পনগরীর ২০৪টি প্লটের মধ্যে ১৮৯টি, ১৯৯০ সালে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর নির্মিত বিসিক শিল্পনগরীর ৯০টি প্লটের সবক'টি এবং ১৯৯৮ সালে ১০ একর জায়গায় নির্মিত সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীর ৭৬টি প্লটের মধ্যে ৩টি বাদে সবগুলো বরাদ্দ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ষাটের দশকে শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বগুড়ায় ১৯৬৪ সালে বিসিকের উদ্যোগে ১৪ দশমিক ৫ একর জায়গায় প্রথম ৭৯টি শিল্প প্লট তৈরি করা হয়। সত্তর দশকের মাঝামাঝি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটার কারণে বগুড়া বিসিক শিল্পনগরীর সব প্লটের বরাদ্দ দ্রুত শেষ হয়ে যায়। উদ্যোক্তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮০ সালে আরও ১৮ দশমিক ৬৭ একর জায়গা সম্প্রসারণ করা হয়। সেটির বরাদ্দও মাত্র দশ বছর অর্থাৎ ১৯৯০ সালের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এভাবে দু'দফায় নির্মিত মোট ২৩৩টি প্লটে ৮৫টি শিল্প ইউনিট গড়ে ওঠে।
উত্তরাঞ্চলে বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের পরিকল্পনা শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক খাদিজা বেগম সমকালকে বলেন, এ সংক্রান্ত একটি ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছিল।
তবে আরও কিছু তথ্য সংযোজনের জন্য তা ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমরা কাজ করে যাচ্ছি আশা করি ঈদের পর পরই অর্থাৎ নভেম্বরের মাঝামাঝি আমাদের কাজ শেষ করতে পারব।'

No comments

Powered by Blogger.