লড়েই মরেছেন

ত ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকে গণঅভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর থেকে আমৃত্যু লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে আসছিলেন কর্নেল মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি। কথা রেখেছেন আরব বিশ্বের শৌর্যবীর্যের এই প্রতীক। লড়াই করেই মরেছেন, আত্মসমর্পণ করেননি তিনি। গত ২২ আগস্ট ত্রিপোলির বাব আল আজিজিয়া প্রাসাদ থেকে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর জন্মশহর সিরতে থেকেই প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যান ৬৯ বছর বয়সী ক্ষমতাচ্যুত এই শাসক। এ সময়ে একবারও জনসমক্ষে দেখা যায়নি তাকে। তবে অডিও বার্তার মাধ্যমে দফায় দফায় লিবিয়ার জনগণকে 'ন্যাটোর দখলমুক্ত' করতে আমৃত্যু লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান করেন কর্নেল গাদ্দাফি।


তার সমর্থক সিরিয়াভিত্তিক একটি টেলিভিশন চ্যানেল এসব অডিওবার্তা প্রচার করে। ২২ আগস্ট ত্রিপোলি দখলের পর এনটিসি যোদ্ধারা অগ্রাভিযান শুরু করে গাদ্দাফির জন্মশহর সিরতের দিকে। সিরতের পথে বনি ওয়ালিদ শহরের অদূরেই তাদের গতিরোধ করে গাদ্দাফি বাহিনী। ন্যাটো বিমান হামলার সহায়তায় দেড় মাসের বেশি সময়ের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে গত সপ্তাহে বনি ওয়ালিদ দখলে নেয় এনটিসি যোদ্ধারা। এর আগে বনি ওয়ালিদের অদূরে রাস লানুফ ও বিন জাওয়াদ এনটিসির
দখলে আসে। ২২ আগস্টের পর থেকেই গাদ্দাফির জন্মশহর সিরতেতে চলছিল ন্যাটোর বিমান হামলা। বনি ওয়ালিদ দখলের পর এক সপ্তাহ ধরে সিরতের দখল নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এনটিসি যোদ্ধারা। তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তোলে গাদ্দাফি বাহিনী। এনটিসি কিংবা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব তখনও নিশ্চিত ছিল না গাদ্দাফি সিরতে শহরেই আত্মগোপনে আছেন। প্রায় দুই মাসে গাদ্দাফির অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ ছড়ানো হয়। একবার বলা হয়, গাদ্দাফি প্রতিবেশী দেশ নাইজারে চলে গেছেন। আবার বলা হয়, তিনি বনি ওয়ালিদ কিংবা সিরতেতেই আছেন। আবার বলা হয়, নাইজার সীমান্তের কাছে লিবিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে আছেন ৬৯ বছরের এই লৌহমানব। সর্বশেষ এ সপ্তাহে এক খবরে বলা হয়, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গাদ্দাফির অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং তিনি লিবিয়ার মরুভূমিতেই আছেন।
গত মঙ্গলবার থেকে স্পষ্ট হয়ে আসছিল, সিরতে শহরে গাদ্দাফি বাহিনীর প্রতিরোধ দুর্বল হয়ে আসছে। এনটিসির তরফে বলা হচ্ছিল, যে কোনো মুহূর্তে সিরতে তাদের যোদ্ধাদের দখলে চলে আসবে। অবশেষে গতকাল স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে সিরতের কেন্দ্রস্থলে পেঁৗছে যায় এনটিসি যোদ্ধাদের সামরিক যান। এরপর অপরাহ্নেই ব্রেকিং নিউজ, 'গাদ্দাফি ক্যাপচারড' বা গাদ্দাফি ধরা পড়েছেন। এনটিসি কমান্ডারদের বরাতে খবরটি প্রচার করলেও আসলেই গাদ্দাফি ধরা পড়েছেন কি-না তাৎক্ষণিকভাবে সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিবিসি, এএফপিসহ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো।
অতঃপর আলজাজিরা
গাদ্দাফি ধরা পড়েছেন কী পড়েননি সে বিষয়ে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের সংশয় প্রকাশের মধ্যেই বোমা ফাটানো ব্রেকিং নিউজ আলজাজিরা টেলিভিশনে 'গাদ্দাফি কিলড' বা গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন। নিজস্ব সূত্রের বরাতে নিশ্চিত করেই খবরটি প্রচার করে আলজাজিরা। এর কিছুক্ষণ পরই এনটিসির তথ্যমন্ত্রী আবদেল হাফিজ গোগা রণাঙ্গনের কমান্ডারদের বরাত দিয়ে বিশ্ববাসীকে গাদ্দাফি নিহত হওয়ার খবরটি জানান। এরপর থেকেই মোবাইল ফোনে তোলা গাদ্দাফির রক্তাক্ত মৃতদেহের একটি ছবি প্রকাশ করে এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এসব ছবি ছিল অনেকটাই অস্পষ্ট। এ ক্ষেত্রেও সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল আলজাজিরা। গাদ্দাফির মৃতদেহের সবচেয়ে ভালো ছবি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন আলজাজিরা প্রতিনিধি। আলজাজিরা টেলিভিশন ও এর ওয়েবসাইটে কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃতদেহের ওই ছবি দেখে বিশ্ববাসী নিশ্চিত হলো গাদ্দাফি আর বেঁচে নেই।
গ্রেফতারের পর মৃত্যু
এনটিসির সামরিক কমান্ডার আবদুল হাকিম বেলহাজ জানান, গাদ্দাফি আহত অবস্থায় ধরা পড়ার পর মারা গেছেন। এনটিসির এক কর্মকর্তা জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে গাদ্দাফির মৃতদেহ অতি গোপনীয় স্থানে রাখা হয়েছে। মিসরাতায় এনটিসি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদেল কাফি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, 'গাদ্দাফির মৃতদেহ আমাদের ইউনিটের গাড়িতে আছে এবং নিরাপত্তাজনিত কারণেই আমরা মৃতদেহটি গোপন স্থানে নিয়ে যাচ্ছি।' এর আগে এনটিসি কর্মকর্তা আবদেল মজিদ জানান, গাদ্দাফি দু'পায়েই আঘাতপ্রাপ্ত হন। মোবাইল ফোনে তোলা গাদ্দাফির মৃতদেহের ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছিল না, আসলেই তিনি মৃত না জীবিত। এদিকে এনটিসির এক কমান্ডার বলেছেন, গাদ্দাফির তথ্যমন্ত্রী (মুখপাত্র) মুসা ইব্রাহিম গতকাল সিরতে শহরে গ্রেফতার হয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.