অর্থনীতির ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ বিচ্ছিন্ন

র্থনীতির ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপকে বিচ্ছিন্ন বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, এক বছর আগে সিপিডির বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে অর্থনীতির সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল। সেসব সতর্কতা সরকার আমলে নেয়নি। আগামী বছরের অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের সামনে একটি 'অদ্ভুত সৃজনশীল' রয়েছে বলে জানান তিনি।ঢাকায় দক্ষিণ এশীয় চতুর্থ অর্থনৈতিক সম্মেলন (এসএইএস-৪) উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব মন্তব্য করেন দেবপ্রিয়।


গতকাল রাজধানীতে সিপিডি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রলম্বিত অর্থনৈতিক মন্দা দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে প্রভাব এবং তার মোকাবেলায় সম্মিলিত প্রস্তুতি এবং অভিন্ন আঞ্চলিক ঐক্য প্রতিষ্ঠায় নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটা চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এসএইএস-৪ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামীকাল রাজধানীর হোটেল রূপসী বাংলায় সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দু'দিনব্যাপী এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য 'বিশ্বমন্দা থেকে উত্তরণ, নতুন ঝুঁকি এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি : দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থান পুনর্বিবেচনা'। এর বাইরেও এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয় রয়েছে সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য গবেষণা সংস্থার সহায়তায় সিপিডি সম্মেলনের আয়োজন করেছে। আগামী নভেম্বরে মালদ্বীপের আড্ডু অটলে অনুষ্ঠিতব্য সার্ক সম্মেলনকে সামনে রেখে দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞদের সবচেয়ে বড় এ সম্মেলনের সুপারিশগুলো সার্ক সম্মেলনে এবং সার্ক সরকারপ্রধানদের কাছে পেঁৗছানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বক্তব্য রাখেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সংস্থার গবেষণা প্রধান ড. ফাহমিদা খাতুন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্য কিংবা রাষ্ট্রীয় ব্যয়_ এসব বিষয়ে এখন যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা বিচ্ছিন্ন এবং সমন্বয়হীনতার মধ্য দিয়ে চলছে। তিনি বলেছেন, আগামী বছরের অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের সামনে একটি 'অদ্ভুত সৃজনশীল' রয়েছে। এসব সমস্যা নিয়ে এখনই সরকারের ভাবনা থাকা উচিত।
এসএইএস-৪ বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখন দক্ষিণ এশিয়া। প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান কমে যাওয়া সত্ত্বেও বিশ্বমন্দার মধ্যে এ অঞ্চল এখনও তুলনামূলকভাবে ভালো আছে। পৃথিবীর বৃহত্তম দরিদ্র অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ার দারিদ্র্য, বৈষম্য, বঞ্চনা কিছুতেই দূর হচ্ছে না। বিশ্ব মন্দায় আঞ্চলিক বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকে আঞ্চলিক সমন্বিত প্রক্রিয়ায় আনা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে অবকাঠামো, জ্বালানি নিরাপত্তা, সড়ক যোগাযোগ এবং পানি সম্পদের মতো বিষয়গুলোকে এবারের এসএইএস-৪ সম্মেলনে গুরুত্ব দেওয়া হবে। দেবপ্রিয় বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মতো অভিন্ন অখণ্ড সত্ত্বা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ অঞ্চলের সীমানা বিরোধ, পানি নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা, বড়-ছোট প্রতিবেশীর মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়া এবং এখনও অনেক বিষয় অনিষ্পন্ন। এসব বিষয় নিয়ে সব দেশের সরকারের সঙ্গে স্থানীয় সুশীল সমাজের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। সব অর্জন অগ্রগতি সত্ত্বেও রাজনৈতিক কারণে কিছু করা সম্ভব হবে না। সম্মেলনে এ বিষয়ে উন্নয়ন উদ্যোক্তা, রফতানিকারক গবেষকদের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করা হবে।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি। এ পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং পানিসম্পদের মতো বিষয়ে আলোচনা হবে সম্মেলনে। মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন অংশীদার, বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, রফতানিকারক বিশেষজ্ঞসহ শতাধিক প্রতিনিধি সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। এবারই প্রথম ঢাকায় এসএইএস সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে এসএইএস তিনটি সম্মেলন কলম্বো, নয়াদিলি্ল এবং কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.