অভিষেকের মঞ্চ তৈরি by সঞ্জয় সাহা পিয়াল,

সেদিন মজা করেই দুটো ট্রফির একটি মুশফিকের হাতে তুলে দিয়েছিলেন স্যামি। ফলও পেয়েছিলেন পরের দিন টি২০ ট্রফিটা সত্যি সত্যিই মুশফিকের হাতে ছেড়ে দিয়ে। গতকালও চট্টলায় যখন দুই টেস্ট সিরিজের ট্রফিটা কালো কাপড়ে মুড়িয়ে টেবিলে রাখা হলো, রসিক স্যামি তখনও রাশভারী সংবাদ সম্মেলনে হাসির রোল তুলে দিলেন কাপড়ের মধ্যেই মুখ ঢুকিয়ে ট্রফি দর্শন করে। ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ একজন মনে করিয়ে দিলেন, 'ট্রফিটা মুশফিকের হাতেই দিয়ে দিন...।' এবারও বড় হৃদয়ের পরিচয় দিলেন স্যামি। 'অসুবিধা কী, মুশফিকই ট্রফিটা নিক...।' হেসে বললেও এটা যে স্যামির কৌশলী এবং ভয়ঙ্কর রঙ চড়ানো মিথ্যা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।


উপস্থিত সাংবাদিক ছাড়াও সাগরিকার প্রতিটি ঘাস জেনে নিয়েছে '৬১' ট্র্যাজেডির পর এই টেস্ট সিরিজ থেকে কী চাইছেন স্যামি। মুশফিকের চাওয়ার কথাও জানা আছে সবার। মোহাম্মদ আশরাফুল, অলক কাপালি আর রাজ্জাকের মতো সিনিয়রকে ছাড়াই এ ম্যাচ নামতে যাচ্ছেন মুশফিক। যেখানে ভালো করলে খুব ভালো, আর খারাপ করলেই সুইয়ের মতো প্রশ্ন ধেয়ে আসবে অধিনায়কের দিকে। পরিবর্তনের এমন চ্যালেঞ্জিংয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আজই সম্ভবত অভিষেক হতে যাচ্ছে অলরাউন্ডার নাসির হোসেন এবং ইলিয়াস সানির। যাদের একজন হবেন দেশের ৬০তম টেস্ট ক্রিকেটার, অন্যজন ৬১তম। এর বাইরেও অভিষেকের অপেক্ষায় স্কোয়াডে থাকবেন আরও দু'জন। শুভগত হোম আর স্পিনার সোহরাওয়ার্দী শুভ।
শুধু দু'জনের মাথায় সবুজ ক্যাপ পরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়েই অভিষেক অনুষ্ঠান সারবেন না মুশফিক, তার নিজেরও আজ অন্যরকম এক অভিষেক হতে যাচ্ছে। ২০০৫ সালে লর্ডসে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল মুশফিকুর রহিমের। আজ চট্টলার সাগরিকায় অভিষেক হতে যাচ্ছে অধিনায়ক মুশফিকের। অভিষেকের এমন লগ্নে তাই যথেষ্টই রোমাঞ্চিত তিনি। 'দেশের হয়ে খেলাটাই একটা গর্ব, সেখানে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়াটা আরও সম্মানের। তার ওপর আবার আজ অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্ট। সব মিলিয়ে দায়িত্বটাও বড়। আমি চেষ্টা করব পারফরম্যান্স ধরে রাখার।' চট্টগ্রামের এ মাঠেই সর্বশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক। এ মাঠে যখন আজ অভিষেকের মঞ্চ তৈরি তখন অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী অধিনায়ক। 'এখানে এলেই কেন জানি ভালো ভালো ব্যাপারগুলো মনে পড়ে যায়। আমার বিশ্বাস দলের প্রত্যেকে যদি নিজেদের খেলাটা খেলতে পারে তাহলে টেস্টেও এখান থেকে ভালো কিছু পাব।'
নবাগতদের জন্য অভিষেকের বেদি তৈরি করে দিয়ে অধিনায়কও যথেষ্ট আশাবাদী। 'এটা ঠিক, গত আগস্টে জিম্বাবুয়েতে সর্বশেষ টেস্ট খেলা দলের পাঁচ ক্রিকেটার নেই এই দলে; কিন্তু এমনই অনেক পরিবর্তন নিয়েও কিন্তু আমরা টি২০ জিতেছি, একটা ওয়ানডেও জিতেছি। নতুনরা দেখিয়েছে তারাও পারে। আজ না হয় কাল তো তাদের অভিষেক হতো, সেদিনও হয়তো একই প্রশ্ন আসত। আমার বিশ্বাস, এই নতুনরা যদি তাদের প্রতিভা অনুযায়ী মাঠে খেলতে পারে, তাহলে অনেক সিনিয়রদের চেয়েও ভালো করবে। একটু অপেক্ষা করুন, দেখবেন তারাই দলের জন্য দারুণ কিছু উপহার দেবে।' নতুনদের নিয়ে বলার সময়ও মুশফিক নিশ্চিত করেননি ঠিক কোন কোন ক্রিকেটারের অভিষেক হতে যাচ্ছে আজ। তবে গতকালের অনুশীলনে নাসির আর সানির ওপর কোচের বাড়তি নজরেই পরিষ্কার হয়ে যায় ওয়ানডেতে ধারাবাহিক পারফর্ম করা নাসির এবং রাজ্জাকের জায়গায় সানিকে বিবেচনা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। যদিও এর বাইরে শুভগত হোম আর শুভও আছেন, যারাও কি-না টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায়। তবে হয়তো এ ম্যাচে নয়, ওই দু'জনকে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।
যাদের নিয়ে মুশফিক গতকাল বুক ফুলিয়ে কথা বলেছেন, সে নাসির এবং সানির মধ্যে অভিষেকের ছোঁয়া লেগেছে। 'এখনও তো জানি না, একাদশে আছি কি-না? তবে টেস্ট স্কোয়াডে থাকাটাও একটা বড় ব্যাপার। এটা ভাবতে ভালো লাগে যে, অনেকেই তো ক্রিকেট খেলে; কিন্তু ক'জনই বা আমার মতো টেস্ট স্কোয়াডে থাকতে পারে।' অভিষেকের জন্য অধৈর্য নন ইলিয়াস সানি। সানির মতো নাসিরও বিকেল পর্যন্ত দল জানেননি। তবে সবসময় মুখে হাসি লেগে থাকা নাসিরের কাছে ওয়ানডে কিংবা টেস্টের পার্থক্যও অবশ্য খুব বেশি নয়। 'ওয়ানডেতেও দেশের হয়ে খেলছি, টেস্টেও তাই...।' অভিষেকের প্রাকমুহূর্তেও নাসির ছিলেন নাসিরের মতোই। ভারী ভারী ভাবনাগুলো তিনি একেবারেই মাথায় আনতে চান না। কেউ কেউ বলেন এটাই ভালো।

No comments

Powered by Blogger.