হেমন্তের দেবকাঞ্চন 'ফুল' by আশীষ-উর-রহমান

কাঞ্চন ফুলের নাম করলে বসন্তের রক্তিম ফুলটির কথাই সচরাচর মনে পড়ে। তাকে নিয়ে কবিতাও আছে—ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল/ ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল’। তবে এখন রমনা উদ্যানে যে কাঞ্চন ফুটেছে, সেটি বসন্তের নয়, হেমন্তের। বর্ণেও আকাশ-পাতাল তফাত উভয়ের। বসন্তের কাঞ্চনের নাম রক্তকাঞ্চন। নাম থেকেই অনুমান করা যায় তার রং কেমন। শীতের শেষে রক্তকাঞ্চনের পাতা ঝরে যায়। এর পাতাগুলোও চমৎকার। ডগার দিকটি দ্বিধাবিভক্ত।

পাতাবিহীন বা অল্প কতক পাতাকে ছাপিয়ে শাখাগুলো ভরে ওঠে গাঢ় বেগুনি রঙের ফুলে ফুলে। ফোটেও প্রচুর। হেমন্তের কাঞ্চন শ্বেত-শুভ্র বর্ণ। এর নাম দেবকাঞ্চন। বৈজ্ঞানিক নাম Bauhinia purpurea। উভয় প্রকারের কাঞ্চনই ভারতের নিজস্ব উদ্ভিদ। তবে হিমালয়ের পাদদেশ ও আসাম দেবকাঞ্চনের আদি নিবাস। বাংলাদেশে উভয় ধরনের কাঞ্চনেরই বংশবিস্তার বহুকাল থেকে।
দেবকাঞ্চন মাঝারি আকারের গাছ। উচ্চতা গড়পড়তা ৮-১০ মিটার। এর পাতা রক্তকাঞ্চনের চেয়ে আকারে একটু বড়, গাছটিও। ফুল ছয় থেকে আট সেন্টিমিটার চওড়া, পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। ঠিক গুচ্ছ আকারে নয়, তবে একটি ডাঁটায় কয়েকটি করে ফুল ফোটে। ফুলে মিষ্টি সৌরভ। সেই সৌরভে মুগ্ধ হয়ে কীটপতঙ্গ উড়ে আসে। তাতেই পরাগায়ণ। হেমন্তের মাঝ নাগাদ শাখা ফুলে ভরে ওঠে। এ সময় পাতাও থাকে অল্প। তখন খুবই চমৎকার দেখায় গাছগুলো।
রমনা উদ্যানের দক্ষিণ পাশে ‘কিছুক্ষণ’ চত্বরের সমানে আছে দেবকাঞ্চনের সারি। এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের হাইকোর্ট-সংলগ্ন প্রাচীরের পাশেও লম্বা সারি আছে দেবকাঞ্চনের। গণপূর্ত বিভাগের আরবরিকালচার বিভাগের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক নিসর্গ অনুরাগী জিয়াউল হাসান (পাখি ভাই) জানালেন, শরতের শেষ দিক থেকেই রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দেবকাঞ্চন ফুটতে শুরু করেছে। শীতের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফুল থাকে। ফুল ফোটা শেষ হলে শিমের মতো আকৃতির ফল ধরে। ভেতরে বীজ থাকে ১২ থেকে ১৬টি। বীজ থেকে সহজেই এর চারা উৎপন্ন করা যায়।
হেমন্তের ফুলের বাহার তেমন পর্যাপ্ত নয়। শিউলীর প্রস্ফুটন অব্যাহত থাকলেও শরতের ফুল বলেই এর পরিচিতি। কুয়াশার চাদর জড়ানো হেমন্তে শিশিরভেজা দেবকাঞ্চনের শোভা চোখজুড়ানো।

No comments

Powered by Blogger.