কাজ থেমে নেই, তবু চলছে রাজনৈতিকীকরণের চেষ্টা

রকার বলেছে, পদ্মা সেতুর কাজ থেমে নেই; কিন্তু বিষয়টিকে রাজনৈতিক ইস্যু করার চেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রেস নোটে বলা হয়, পদ্মা সেতুর প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে বিশ্বব্যাংককে আশ্বস্ত করেছে।প্রেস নোটে বলা হয়, সেতু নির্মাণের দরপত্রপ্রক্রিয়া স্থগিত রাখাসহ নদী শাসনের প্রাক-যোগ্যতা যাচাইকাজের জন্য দরপত্র মূল্যায়নের প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংক অনুমোদন না করে স্থগিত করে রেখেছে। পদ্মা সেতুর তদারকির কাজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য দরপত্র কার্যক্রমও আপাতত স্থগিত। এ ছাড়া মাওয়ার দিকের সংযোগ সড়কের দরপত্রের ব্যাপারেও কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে বিশ্বব্যাংক।


তবে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) অর্থায়নে জাজিরার দিকের সংযোগ সড়কের দরপত্র মূল্যায়ন চূড়ান্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের পুনর্বাসন কার্যক্রমও চলছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রেস নোট দেওয়া হয়।
প্রেস নোটে বলা হয়েছে, মূল সেতু নির্মাণের দরপত্র ও প্রাক-যোগ্য ঠিকাদার নির্বাচিত করার তালিকা নিয়ে প্রথম সমস্যা দেখা দেয়। প্রাক-যোগ্যতা মূল্যায়ন কমিটির নেতৃত্বে আছেন প্রকৌশলী অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। সদস্যরা হলেন ড. শফিউল্লাহ, ড. আইনুন নিশাত ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ড. দাউদ। এ কমিটির কাছে কারিগরিভাবে অযোগ্য বিবেচিত হওয়া একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অধিকতর যাচাই-বাছাই নিয়ে তিন মাস সময় নষ্ট করার পর গত জুলাই মাসে বিশ্বব্যাংক পাঁচটি দরদাতাকে প্রাক-যোগ্য করে। তবে ওই সব প্রতিষ্ঠান শেষ পর্যন্ত অনুমোদিত তালিকায় আসেনি। এ ছাড়া সেতুর নির্মাণকাজ পর্যবেক্ষণের জন্য পরামর্শক নিয়োগসংক্রান্ত আরো একটি দরপত্র ছিল। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক তদন্ত করে দেখে, একটি কানাডীয় কম্পানি নীতিবহির্ভূত কাজ করেছে। সরকার বিশ্বব্যাংককে তখন জানিয়ে দেয়, কানাডার তদন্তে কত দিন সময় লাগবে তা যেহেতু বলা যাচ্ছে না, সেহেতু ওই প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে বাকিগুলোর মধ্য থেকে পরামর্শক নিযুক্তির দরপত্র চূড়ান্ত করা যেতে পারে।
প্রেস নোটে আরো বলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসাবেলা গুরেরো ঢাকা সফরে এসে জানান, বিশ্বব্যাংকের কাছে মূল সেতু নির্মাণের প্রাক-যোগ্য ঠিকাদার নির্বাচন নিয়েও কিছু অভিযোগ আছে এবং বিশ্বব্যাংক সেগুলো খতিয়ে দেখছে। তিনি আরো জানান, অভিযোগগুলো সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক শিগগিরই সরকারকে জানাবে। তবে ইতিমধ্যে সেতুর বিষয়ে যেসব কাজ চলছে সেগুলো সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হচ্ছে।
প্রেস নোটে বলা হয়, গত ২২ সেপ্টেম্বর ব্যাংক ফান্ডের বার্ষিক সভা উপলক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন ওয়াশিংটনে যান, তখন বিশ্বব্যাংক লিখিতভাবে অভিযোগ করে, মূল সেতুর প্রাক-যোগ্য ঠিকাদার তালিকা বিবেচনার সময় দুর্নীতি হয়ে থাকতে পারে বলে তারা মনে করছে। সে জন্য বিশ্বব্যাংক সরকারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে। বিশ্বব্যাংক আরো বলে, সরকার তদন্ত করতে আগ্রহী হলে তারা সেসব তথ্য সরবরাহ করবে। প্রেস নোটে বলা হয়, অর্থমন্ত্রীর দেশে ফেরার পর শীর্ষপর্যায়ের আলোচনা শেষে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, বিশ্বব্যাংকের কথিত দুর্নীতি তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নিযুক্ত করা হবে এবং তদন্তকাজে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা চাওয়া হবে। একই সঙ্গে সরকার বিশ্বব্যাংককে জানিয়ে দেয়, টেন্ডার-প্রক্রিয়ায় প্রাক-যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলো সব সময় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে থাকে এবং পরবর্তী সময়ে অনেক ক্ষেত্রে সেসব অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয়। বিশ্বব্যাংককে আরো জানানো হয়, ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ যেসব কার্যক্রম শুরু ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত কোনো দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে ভবিষ্যতেও দুর্নীতির কোনো সুযোগ থাকবে না, পাওয়া গেলেও শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার এও বলে, টেন্ডার-প্রক্রিয়া স্থগিত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
প্রেস নোটে বলা হয়, সরকার ঠিকাদারদের প্রাক-যোগ্যতা মূল্যায়ন সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের বিষয়ে দুদককে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। সরকার আশা করে, বিশ্বব্যাংক তদন্তে দুদককে সহায়তা করবে। তদন্তের প্রতিবেদনও অচিরেই পাওয়া যাবে। তবে অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতির প্রমাণ পেলে শক্ত অবস্থান নেওয়া হবে।
পদ্মা সেতুর তদারকি কাজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য দরপত্র কার্যক্রম আপাতত স্থগিত জানিয়ে প্রেস নোটে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংককে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, কানাডার অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে বাদ দিয়ে ঠিকাদার নিয়োগের কাজটি এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
তথ্য মন্ত্রণালয় জানায়, নদী শাসনের প্রাক-যোগ্যতার জন্য কাজের দরপত্র মূল্যায়নের যে প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে, সেখানেও কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে সরকার বিশ্বব্যাংকের এই পদক্ষেপকে যথাযথ বলে মনে করে না এবং এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া মাওয়ার দিকের সংযোগ সড়কের দরপত্রের ব্যাপারেও কার্যক্রম দ্রুত চালু করার জন্য বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে আইডিবির সাহায্যে জাজিরার দিকের সংযোগ সড়কের দরপত্র মূল্যায়ন চূড়ান্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আইডিবির সম্মতি নিয়েই তা চূড়ান্ত করা হবে এবং শিগগিরই এর কার্যাদেশ দেওয়া হবে। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্ত ভূূমির মালিকদের পুনর্বাসনসহ অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত আছে এবং থাকবে। এ বিষয়ে অর্থায়ন বর্তমান চুক্তি অনুযায়ীই বহাল আছে।
দেশে অবকাঠামো খাতে ঘাটতি ব্যাপক উল্লেখ করে প্রেস নোটে বলা হয়, মন্ত্রিসভা অতিসত্বর একটি অবকাঠামো তহবিল গঠনের বিষয় চূড়ান্ত করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রেস নোটে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মনে করেন, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিদ্যমান জটিলতা শিগগিরই নিষ্পত্তি হবে এবং পদ্মা সেতুর বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়নের প্রস্তাব মালয়েশিয়ার
পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। বাংলাদেশ সফররত মালয়েশিয়ার বিশেষ দূত এস সেমি ভেল্লু গতকাল বৃহস্পতিবার এ কথা জানান। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ প্রস্তাব দেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, মালয়েশিয়া সরকার প্রকল্পের নকশা ও নির্মাণ পরিকল্পনা সরবরাহের জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। মালয়েশিয়ার দূত প্রাথমিকভাবে সেতুটি নির্মাণে সহজ শর্তে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
পদ্মা সেতুটি নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিশ্বব্যাংক অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর মালয়েশিয়া এই প্রস্তাব দিল। তবে সরকার দুর্নীতির অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবাসন প্রকল্প এবং রাজধানীতে ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বাংলাদেশে অবকাঠমো উন্নয়ন সম্পর্কে আলোচনা করেন দুই নেতা। এ সময় পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
প্রস্তাবিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ সহজ হবে, যা জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে ২ শতাংশ অবদান রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, এলজিআরডি ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আসলামুল হক এমপিসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে। সূত্র : বাসস।

No comments

Powered by Blogger.