লিবিয়া অতঃপর

লিবিয়ার জাতীয় অন্তর্বর্তী পরিষদের (এনটিসি) নেতারা বলেছেন, গাদ্দাফিবিরোধীরা বিজয়ী হলেও সে দেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ত্রিপোলি সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন গাদ্দাফিবিরোধী বাহিনীকে সতর্ক করে দিয়েছেন, চূড়ান্ত বিজয় এখনও আসেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিতে এনটিসিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। খবর এএফপি, বিবিসি ও ক্যাথলিক অনলাইনের।


এনটিসি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল বলছেন, নতুন সংবিধান প্রণয়নের আগ পর্যন্ত লিবিয়ার নতুন নেতৃত্বকে কঠিন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। গত বুধবার ত্রিপোলিতে তিনি বলেন, তারা এক রাজনৈতিক লড়াইয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। কী ধরনের শাসন ব্যবস্থা কায়েম হবে সেটা স্পষ্ট নয়। জিবরিল বলেন, 'আমরা একটি জাতীয় যুদ্ধ থেকে রাজনৈতিক যুদ্ধে প্রবেশ করেছি এবং এটা লিবিয়ান রাষ্ট্র হিসেবে মজবুত করার আগে কাম্য নয়।' তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দেশ এক বিশৃঙ্খল অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ত্রিপোলিতে সাবেক বিদ্রোহী সেনাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এনটিসি সরকারের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি লিবিয়ায় সুশীল সমাজকে বাস্তবতার নিরিখে গড়ে তুলতে চান। কিন্তু এ যুদ্ধে দরকার অর্থ, ক্ষমতা, সংগঠন ও অস্ত্র। এদিকে ত্রিপোলি সফরের সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন লিবিয়ার নতুন নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিজয় দাবি করার পরিস্থিতি এখনও আসেনি। সংঘাত এখনও চলছে।
এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হিলারি ক্লিনটন বলেন, নতুন লিবিয়াকে সংঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সবকিছুই করবে। ওই সংবাদ সম্মেলনে এনটিসি প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিবরিল বলেন, অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য শিগগিরই বিধি-বিধান জারি করা হবে।
গাদ্দাফির ৪২ বছরের
শাসনামল
থেকে লিবিয়া মুক্ত হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির অবস্থা এখন জটিল। আঞ্চলিক এবং গোত্র বা উপজাতিগত দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এরপর আছে গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ। যারা চাইবে লুটপাটের মাধ্যমে দ্রুত ধনী হওয়া। যুদ্ধে পশ্চিমাদের বিনিয়োগ ও অংশগ্রহণ লিবিয়ার জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাদ্দাফি-উত্তর লিবিয়ায় ক্ষমতার মূল লড়াই হবে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের সঙ্গে ইসলামপন্থিদের। ধর্মনিরপেক্ষ নেতাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জিবরিল নিঃসন্দেহে প্রভাবশালী এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। গাদ্দাফির এক সময়কার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এ নেতা গৃহযুদ্ধের বেশির ভাগ সময় বিদেশে অবস্থান এবং এনটিসির পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে কাজ করেছেন। এনটিসির প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা আবদুল জলিল নন, ক্ষমতার লড়াইয়ে জিবরিলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন অত্যন্ত প্রভাবশালী ইসলামপন্থি নেতা আবদেল হাকিম বেলহাজ। এক সময়কার ইসলামপন্থি জঙ্গি নেতা বেলহাজ বর্তমানে ত্রিপোলির সামরিক কাউন্সিল প্রধান। তবে জিবরিল তার সঙ্গে বেলহাজের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা অস্বীকার করে বলেন, সুশীল রাষ্ট্রের কাজ হলো আইন ও অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো।

No comments

Powered by Blogger.