গ্রিসে ধর্মঘটে জনতা-পুলিশ ব্যাপক সংঘর্ষ, ভাঙচুর

গ্রিস সরকাুেরর ব্যয় সংকোচন বিলের বিরুদ্ধে ডাকা ৪৮ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। গত বুধবার ধর্মঘটের প্রথম দিনে এথেন্সে পুলিশের সঙ্গে জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৪৫ জন আহত হয়। এ সময় আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর চলে। চূড়ান্ত ভোটের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার বিলটি পার্লামেন্টে তোলার কথা।
ঋণের ভারে জর্জরিত গ্রিসের দেউলিয়াত্ব ঠেকাতে এই ব্যয় সংকোচন। নতুন বিলটিতে বিভিন্ন খাতে কর বাড়ানো, মজুরি কমানো ও চাকরির ক্ষেত্র কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে গ্রিসের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সংগঠন জিএসইই এবং সরকারি কর্মীদের একটি সংগঠন এ ধর্মঘটের ডাক দেয়।
গত বুধবার গ্রিসের পার্লামেন্টে ওই বিল ১৫৪-১৪১ ভোটে প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত হয়। গতকাল ওই বিল অনুমোদনে চূড়ান্ত ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
ধর্মঘটের প্রথম দিনে পার্লামেন্টের আশপাশের সড়কগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসব সড়কে অবস্থান নেওয়া বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে দাঙ্গাপুলিশ শক্তি প্রয়োগ করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ক্ষুব্ধ জনতা আশপাশের দোকানপাট, ব্যাংক, হোটেলসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। জনতাও পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ও পাথর ছুড়ে এর পাল্টা জবাব দেয়। এথেন্সের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ধর্মঘটের কারণে সড়কে পড়ে থাকা আবর্জনার স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
ধর্মঘটে সংহতি প্রকাশ করে বিমানের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বুধবার ১২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। এর ফলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বেশ কিছু ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। পরে আবার তাঁরা কাজে যোগ দেন।
এ পরিস্থিতিতে দেশটির ক্ষমতাসীন দলের চিফ হুইপ ‘চূড়ান্ত’ সমাধানে পৌঁছার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। চিফ হুইপ ক্রিসটোস প্রোটোপাপ্পাস বলেন, ‘বুধবার কী ঘটেছে তা দেখার জন্য ইউরোপীয়দের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ, এ পরিস্থিতি চলতে পারে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই জনগণ আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে। তা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েও পড়বে।’ তিনি বলেন, এ সমস্যা এরই মধ্যে পর্তুগাল ও ইতালিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর এটা ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে ছড়িয়ে পড়বে।’
গ্রিস সরকার ঋণের ভার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। দেশটি দেউলিয়া হয়ে পড়লে ইউরো জোনে তার প্রভাব পড়বে। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (্ইইউ) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গ্রিসকে দুটি সহায়তা প্যাকেজ দেওয়ার প্রস্তাব করে। আর এ জন্য সরকারের বিভিন্ন খাতে কঠোর ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণের শর্ত দেয়। এর ধারাবাহিকতায় গ্রিস ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগ নেয়।
গ্রিস সরকারের ঋণের পরিমাণ দেশটির জিডিপির ১৬২ শতাংশে পৌঁছেছে। এরপর আইএমএফ ও ইইউয়ের শর্ত অনুযায়ী সহায়তা প্যাকেজ পেতে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির ফলে দেশটিতে বেকারত্বের হার পৌঁছেছে সাড়ে ১৬ শতাংশে।

No comments

Powered by Blogger.