ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী রনিকে তুলাধোনা করলেন-আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক

দ্মা সেতুর দুর্নীতির সঙ্গে কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে বরখাস্ত করার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অভিযোগ করেছেন, একজন নোবেলবিজয়ী পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছেন। তবে বর্তমান সরকারের আমলেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠকে এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা পটুয়াখালী-৩ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ গোলাম মাওলা রনিকে তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনাও করেছেন। বিতর্কিত এই সাংসদকে 'মীরজাফর' আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলের এমপি হয়েও দলের বিরুদ্ধে অপরাধ যারা করছেন, তারা শাস্তি পাবেন।


দলের অন্য সাংসদরাও রনিকে কড়া ভাষায় তিরস্কার করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাকে 'স্টুপিড' বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ যাতে না হয়, সে জন্য একজন নোবেল লরিয়েট লবিং করছেন। এমন তথ্যও আমাদের
কাছে এসেছে। তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান। তিনি শুরু থেকেই হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করার জন্য লবিং করছেন। তবে তার কথা বিশ্বব্যাংক শোনেনি।
সকাল ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার এই বৈঠকে ১৯ জন সাংসদ বক্তব্য রাখেন।
বৈঠকে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্বব্যাংক বিএনপির যোগাযোগমন্ত্রীর দুর্নীতির ডকুমেন্টই দিয়েছে। আমাদের কোনো মন্ত্রীর নামে বিশ্বব্যাংকে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, 'কোথায় কী দুর্নীতি হয়েছে, তার তথ্য-প্রমাণ চেয়ে আমি বিশ্বব্যাংককে চিঠি দিয়েছি। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর না পেলে বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও দাতাগোষ্ঠীকে আহ্বান জানাব সেতুতে অথার্য়ন করতে।' মালয়েশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অর্থায়ন নিয়ে কথা চলছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
বৈঠক শেষে প্রবীণ সাংসদ তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে সাংসদরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, বর্তমান সরকার আমলেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। কেউ দুর্নীতি করলে তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
চিফ হুইপ আবদুস শহীদ সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ ছাড়াও বৈঠকে সমসাময়িক রাজনীতি, বিরোধী দলের ভূমিকা, সরকারের উন্নয়ন ও নির্বাচনী ইশতেহারসহ বিভিন্ন বিষয়ও উঠে এসেছে। এ সময় বিরোধী দলের সংসদে না আসার সমালোচনা করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একাধিক সাংসদ সমকালকে জানান, বৈঠকে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের 'মন্ত্রিত্ব পাওয়া' নিয়ে চ্যানেল আইয়ে গোলাম মাওলা রনির দেওয়া বক্তব্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও অনেক সাংসদ রনির কঠোর সমালোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী রনিকে উদ্দেশ করে বলেন, 'রনি, তোমার চৌদ্দগুষ্টি বিএনপি। তুমি আন্দালিব রহমান পার্থের সঙ্গে ব্যবসা কর। এতকিছুর পরও তোমাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে এমপি বানিয়েছি।' তিনি আরও বলেন, রনির শ্বশুরগোষ্ঠীও বিএনপি করে। ও চিন্তা করছে, ও পরে বিএনপিতে যোগ দেবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে শ্বশুররা তাকে শেল্টার দেবে। এরা তো 'মীরজাফর'। এদের বিচার হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অবশ্য এতে ওর কী যায়-আসে। ও ব্যবসা করে পার্থর (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ) সঙ্গে। বৈঠকে উপস্থিত শেখ হেলালকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওর শ্বশুরও বড় নেতা।'
বেসরকারি টেলিভিশন 'চ্যানেল আই'তে গত সোমবার রাতে প্রচারিত টক শো 'তৃতীয় মাত্রা'য় সাংসদ রনি বলেন, 'একটি দৌড় প্রতিযোগিতায় জিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন সৈয়দ আবুল হোসেন।' এ বক্তব্য নিয়ে ফেসবুক ও ব্লগে আলোচনার ঝড় ওঠে। ফেসবুকে অনুষ্ঠানের ভিডিওটি বহুসংখ্যক 'শেয়ার' হয়েছে।
এর আগে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সাংসদ তোফায়েল আহমেদ টক শোতে দলীয় নেতাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি রনির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, অনেক জুনিয়র এমপি দেখা যাচ্ছে টেলিভিশনে টক শোতে অংশ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। রনির 'অতি উৎসাহী বক্তব্য' এবং এলাকায় দলের বিরুদ্ধে তার কর্মকাণ্ডের তিরস্কারও করেন তিনি।
এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও উত্তেজিত হয়ে বলেন, 'ওটা (রনি) একটা স্টুপিড। সব সময় সে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে।'
এ ব্যাপারে রনি সমকালকে বলেন, 'সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তার কাছে টক শোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, আমি বলি জি্ব বলেছি।'
খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাব দিতে হবে : বৈঠকে শেয়ারবাজার এবং পদ্মা সেতু নিয়ে একাধিক সাংসদ কথা বলতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী এগুলোর বদলে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাব দিতে এমপিদের পরামর্শ দেন।
আরও তিন মন্ত্রীর সমালোচনা : বৈঠকে এলজিআরডি মন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফছারুল আমিনেরও সমালোচনা করেন সরকার দলীয় সাংসদরা।
ইসরাফিল আলম দলীয় সাধারণ সম্পাদকের সমালোচনা করে বলেন, সকাল-বিকাল-রাত কোনো সময়ই ফোন দিলে তাকে পাওয়া যায় না। স্থানীয় নেতারা তার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা এসে না পেয়ে মন খারাপ করে ফিরে যান। এভাবে দল চলতে পারে না। অবৈধ ভিওআইপি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এ নিয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান, ডাক ও টেলিযোগোযোগ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন তাদের নিয়ে বসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় স্বাস্থ্য খাত ও শিক্ষক নিয়োগে দলীয় নেতাকর্মীদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকজন সাংসদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন।
 

No comments

Powered by Blogger.