বিনাশুল্কে ভারতকে করিডোরের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন - খালেদা : রোডমার্চে ব্যাপক অংশগ্রহণে জনগণকে অভিনন্দন

দেশের উত্তরাঞ্চল অভিমুখে দু’দিনের রোডমার্চ ও সমাবেশগুলোতে সব স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ও ব্যাপকভাবে অংশ নেয়ায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া জনসাধারণের প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা ও গোপনে ভারতকে ট্রানজিটের নামে করিডোর সুবিধা দেয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিককে এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। রোডমার্চ সফল করায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়ে গতকাল গণমাধ্যমে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এসব কথা বলেন।


খালেদা জিয়া বলেন, রোডমার্চ কর্মসূচির বিপুল সাফল্য এবং এর মাধ্যমে উত্তাল গণজাগরণের বহিঃপ্রকাশ দেখে শাসক দলের শীর্ষ পর্যায়, তাদের দোসর এবং অনুগ্রহলোভী প্রচারবিদদের ভারসাম্যহীন প্রতিক্রিয়ায় এটা পরিষ্কার—তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। জনগণও তা স্পষ্ট বুঝতে পারছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অশালীন, অরাজনৈতিক ও রুচিহীন ভাষায় ব্যক্তিগত আক্রমণ ও কুত্সা রটনায় নেমে পড়েছেন। অসত্য প্রচারণায় তিনি রাজনৈতিক পরিবেশকে কলুষিত করছেন এবং ব্যক্তিগত বিদ্বেষের পর্যায়ে নামিয়ে আনছেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলেও বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে তিনি রুচিহীন ও কুত্সাপূর্ণ বাকসন্ত্রাস ও প্রায় একতরফা অপ্রমাণিত-অসত্য প্রচারণার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে সম্পূর্ণ কলুষিত করে ফেলেছিলেন। এর পরিণাম কারও জন্যই শুভ হয়নি। আমি আশা করেছিলাম, একটি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হিসেবে রূঢ় অভিজ্ঞতা তার মধ্যে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনবে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমার ধারণা সঠিক প্রমাণিত হয়নি।
খালেদা জিয়া বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকবেই। তবে এর প্রকাশ হতে হবে শালীন, সুরুচিপূর্ণ ও ব্যক্তিগত বিদ্বেষের ঊর্ধ্বে। প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্য জনসমাবেশে ব্যক্তিগত কুিসত আক্রমণ করে ক্রমাগত যেসব মন্তব্য করে চলেছেন তা দায়িত্বশীল, সুরুচিপূর্ণ, রাজনৈতিক পরিভাষা এবং পদমর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না, তা বিবেচনার ভার আমি সচেতন দেশবাসীর ওপরই ছেড়ে দিলাম। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণাত্মক বিদ্বেষ প্রচারের মাধ্যমে তারা এরই মধ্যে জাতীয় সংসদকে রুচিশীল মানুষের অংশগ্রহণের অনুপযোগী স্থানে পরিণত করেছেন। সন্ত্রাস, হামলা, মামলার পাশাপাশি বিরোধী দলের বিরুদ্ধে একতরফা অপপ্রচারে ব্যবহার করছেন নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াকে। পরিবেশ আরও কলুষিত হবে এবং রুচিতে বাধে বলে আমরা সব সময় তাদের অসত্য প্রচারণা ও কুত্সার জবাবও দিই না। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য তাদের নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এরই মধ্যে বুঝে ফেলেছেন।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, বিরোধী দল ছাড়া বর্তমান সরকার এরই মধ্যে মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীদের হুমকি এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমি পরিষ্কার বলতে চাই, ভীতি ছড়িয়ে এবং অপপ্রচারণার ধূম্রজালে তাদের সীমাহীন অপকর্মকে আড়াল করা যাবে না। ট্রানজিট সম্পর্কে তিনি বলেন, রোডমার্চ চলাকালেই সরকার অনেকটা গোপনে ভারতকে ট্রানজিটের নামে করিডোর সুবিধা দিয়েছে। বিনা শুল্কে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে মাল পরিবহন শুরু হয়েছে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রাপ্তির বিষয় সুরাহা না করে দেশবাসীকে অন্ধকারে রেখে এই গোপন চুক্তি বাস্তবায়নের আমি তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
রোডমার্চে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত আমাদের যাত্রাপথে প্রবীণ, তরুণ-তরুণী, নারী ও শিশু-কিশোরসহ সব স্তরের মানুষ পথে নেমে এসে উত্সবমুখর পরিবেশে যেভাবে আমাদের বিপুল প্রাণের সাড়ায় বরণ করে নিয়েছেন এবং ব্যর্থ ও অত্যাচারী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। গোটা উত্তর জনপদে যে প্রবল জনজাগরণ আমি দেখেছি তাতে আমি আনন্দিত। এতে দেশ ও মানুষের স্বার্থরক্ষার সংগ্রামে আমার নিজের এবং আমার সহকর্মীদের শক্তি, সাহস ও মনোবল অনেক বেড়ে গেছে। আমি রোডমার্চ ও সমাবেশে অংশগ্রহণকারী বিএনপি, চারদলীয় জোট ও সমমনা বিভিন্ন দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার সব নেতাকর্মী—যারা নিরলস পরিশ্রম করে কর্মসূচিকে অভূতপূর্ব ও কল্পনাতীত সাফল্যমণ্ডিত করেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। রোডমার্চ কর্মসূচিতে যোগদানের উদ্দেশে আসার পথে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নেতা, কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষকে শাসক দলের সন্ত্রাসীদের বাধা দেয়া ও হামলার ঘটনার আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি তাদের এ কথা মনে রাখতে বলব, জনগণের সংগ্রাম কখনও ব্যর্থ ও পরাজিত হয় না। বাধা দিতে গেলে তা আরও প্রবল হয়ে ওঠে। এছাড়া তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাইকে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান।

No comments

Powered by Blogger.