গণসংযোগেও তাঁরা সমানে সমান

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আর মাত্র আট দিন বাকি। যদিও ছয়জন মেয়র প্রার্থী রয়েছেন নির্বাচনে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত শামীম ওসমান, ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ও বিএনপি সমর্থিত তৈমূর আলম খন্দকারকে নিয়েই আগ্রহ সারা দেশের মানুষের। তিনজনই সারা দিন ঘাম ঝরাচ্ছেন নানা কৌশলে ভোট আদায়ে। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। গণসংযোগেও কেউ পিছিয়ে নেই। কখনো কখনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মুখোমুখি হলে উভয়ই হাসিমুখে কুশল বিনিময় করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবারও নারায়ণগঞ্জে গণসংযোগ করেছেন তাঁরা।


শামীম ওসমানের গণসংযোগ : এ কে এম শামীম ওসমান গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার বন্দরের ২৪নং ওয়ার্ড কদম রসুল এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম সাগর। বিকেলে তিনি ১৭নং ওয়ার্ডের পাইকপাড়া, জল্লারপাড় ও আশপাশ এলাকায় গণসংযোগ, উঠোন বৈঠক ও পথসভা করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, জেলা বারের সভাপতি আনিসুর রহমান দীপু। শামীম ওসমানের সহধর্মিণী সালমা ওসমান লিপি সকালে জালকুড়ি ও বিকেলে শহরের খানপুর এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা ও উঠোন বৈঠক করেন। এ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ১৫টি দলে ভাগ হয়ে শামীম ওসমানের পক্ষে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেন।
গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের পক্ষে কর্মিসভা করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী জাফর উল্লাহ, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বাহাউদ্দিন নাসিম, অসীম কুমার উকিল, মৃণাল কান্তি দাস, সুজিত রায় নন্দি, নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমান এমপি প্রমুখ। সকালে চাষাঢ়া হীরা মহলে কর্মিসভা করেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুল ইসলাম। এসব সভায় বক্তারা সন্ত্রাসমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়তে শামীম ওসমানকে দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। ব্ক্তারা বলেন, অতীতে শামীমের ব্যবহারে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করে দেবেন। তাঁরা বলেন, নারায়ণগঞ্জের পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্যই শামীম ওসমানকে দরকার। শামীমের অতীত উন্নয়নের রেকর্ড সেই কথাই বলে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারশেন নির্বাচনে শামীম ওসমানকে সমর্থন দিয়েছে। ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাবিবুল বশর মাইজ ভাণ্ডারী সমর্থন দিয়ে হীরামহলে শামীম ওসমানের সাফল্য কামনা করে দোয়া করেন।
আইভীর গণসংযোগ : ডা. সেলিনা হায়াত আইভী সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন মহল্লায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন। তিনি ভোটারদের কাছ থেকে দোয়া ও ভোট চান। গতকাল তাঁর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এস এম আকরামও যোগ দেন। আইভী শহরের আমলাপাড়া, নয়ামাটি ও টানবাজার এলাকায় সকালে ও বিকেলে জালকুড়ি এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় বক্তব্য দেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক নিজামউদ্দিন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জি এম আরাফাত প্রমুখ।
জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এস এম আকরাম কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের সিদ্ধান্তহীনতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে আজ আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছে। এখন আইভীর সরে যাওয়ার সময় নেই। গত তিন সপ্তাহ ধরে দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ আইভীর জন্য পরিশ্রম করছেন। আইভীই নির্বাচনে জিতবেন। আকরাম আরো বলেন, 'স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের কোনো প্রভাব কাজে আসে না। আর আমারও তো জনগণের কাছে একটি কমিটমেন্ট আছে। নিজের পছন্দের ব্যাপার আছে। জনগণ যাকে ভালো মনে করবে তাঁকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।'
ডা. আইভী গণসংযোগকালে বিভিন্ন পথসভা করেন। এ সময় তিনি বলেন, 'আমি নারায়ণগঞ্জের কী উন্নয়ন করেছি, তা নারায়ণগঞ্জবাসী ভালো করেই জানেন। নারায়ণগঞ্জকে শান্তির শহর গড়ার লক্ষ্যে তিনি দোয়াত কলম প্রতীকে সবাইকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।'
তৈমূরের গণসংযোগ : বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার গতকাল সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকায় আনারস প্রতীক নিয়ে ব্যাপক গণসংযোগ করেন। ৯নং ওয়ার্ডের জালকুড়ি বাসস্ট্যান্ড, জালকুড়ি বাজার, মাঠপাড়া, নাইনটারপাড়া, মাতবর বাজার এলাকায় গণসংযোগ শেষে সিদ্ধিরগঞ্জে ১নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা ছমির মুন্সীর বাড়িতে উঠোন বৈঠকে মিলিত হন তৈমূর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, বদরুজ্জামান খান খসরু, মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন, আবদুল হাই রাজু, জান্নাতুল ফেরদৌস, এ টি এম কামাল, ব্যারিস্টার পারভেজ, ছমির মুন্সী, মাজেদুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, আলী হোসেন, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী নুরুন্নাহার, শ্যামল আনোয়ার, আবদুল কাদির প্রমুখ।
বৈঠকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান হলেন সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন। বাকি সদস্যরা হলেন মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন, আবদুল হাই রাজু, ছমির মুন্সী, অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। তবে ঢাকায় অবস্থান করার কারণে তৈমূর গতকাল বিকেলে কোনো গণসংযোগ করেননি।

No comments

Powered by Blogger.