রাজকীয় নয়, সাধারণ জীবন by একরামুল হক শামীম

 'নদীর এপার কয় ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপারেতেই সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।' কবি কোন পরিপ্রেক্ষিতে কবিতার এই চরণগুলো লিখেছিলেন তা জানা নেই, তবে এই কথাগুলো জীবনের অনেকক্ষেত্রেই মিলে যায়। অতি সাধারণ জীবনযাপন করতে করতে ক্লান্ত মানুষটি চায় অসাধারণ একটি জীবনযাপন করতে।
নানা কায়দা-কানুন করে অসাধারণত্বের উপাদান খুঁজতে থাকে মানুষটি। কিন্তু সেই মানুষটি অসাধারণ জীবনযাপন করে আসছেন। তিনি ভাবেন, কী ক্লান্তিময় জীবন! পরিবর্তন দরকার! মাঝে মধ্যে সাধারণ জীবনযাপন করতে পারলে কতই না ভালো হতো।
এরকম পাওয়া না পাওয়ার দ্বন্দ্ব মানুষের জীবনে থাকবেই। ব্রিটেনের সাম্প্রতিক একটি জরিপ অবশ্য একটু ভিন্ন সুর উপস্থাপিত করেছে। রাজকীয় জীবনযাপন নাকি সাধারণ জীবনযাপন এমন প্রশ্নের মুখে বেশিরভাগ ব্রিটিশ নারী সাধারণ জীবনযাপনের দিকে। অবশ্য বিষয়টাকে একটু ঘুরিয়ে বলা হলো। জরিপটা হয়েছিল প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে যাওয়া ক্যাথেরিন মিডলটনকে (কেট) নিয়ে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের হবু রাজার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে সাধারণ ঘরের মেয়ে কেটের, ব্রিটিশ নারীরা কি এতে ঈর্ষান্বিত? এমন প্রশ্নের মুখে ব্রিটিশ নারীরা বলেছেন, তারা ঈর্ষান্বিত নন। তাদের মতে, কেট দেখতে সুন্দরী, সম্পদশালী এবং বিয়ে করতে যাচ্ছেন একজন প্রিন্সকে, তবে এতে করে ঈর্ষান্বিত হওয়ার মতো কিছু নেই।
জরিপটি পরিচালনা করেছে ইউগভ। এজন্য তারা ব্যবহার করেছে নারীদের টার্গেট করে পরিচালিত যুক্তরাজ্যের ওয়েবসাইট মাইডেইলি ডট কো ডট ইউকে'কে। ৩০ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত এই জরিপ চলে। এতে অংশগ্রহণ করেন এক হাজারের বেশি ব্রিটিশ নারী। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৬ শতাংশ নারী কেট মিডলটনের ব্যাপারে ঈর্ষান্বিত নন, কারণ তারা মনে করেন বিয়ের পর কেট আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন না। রাজপরিবারের পুত্রবধূ হিসেবে তাকে অনেক নিয়মের বেড়াজালে থাকতে হবে। সে ইচ্ছামতো ঘুরতে যেতে পারবে না, ইচ্ছামতো পোশাক পরতে পারবে না। এমনকি তার দিকে মিডিয়ার চোখ থাকবে। এমন হলে কি আর জীবনকে উপভোগ করা যায়! জরিপে অংশ নেওয়া কেউ কেউ মনে করছেন, কেটের সামনে গুরুত্বপূর্ণ সময় অপেক্ষা করছে। সে বেড়ে উঠেছে সাধারণ পরিবারে, এখন তাকে রাজপরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কেটের জন্য নিশ্চিতভাবে কোনো রূপকথার গল্প অপেক্ষা করছে না।
তবে জরিপে অংশ নেওয়া ১০ ভাগ নারীর কেট মিডলটনের প্রতি ঈর্ষা রয়েছে। কেটের জায়গায় নিজেদের দেখতে পেলে তারা আনন্দিত হতেন। এই ১০ ভাগের এক-তৃতীয়াংশের আকর্ষণ অবশ্য কেট মিডলটনের সম্পদের পেছনে।
ব্রিটেনের এই সাম্প্রতিক জরিপে তাহলে কী প্রমাণ হলো! ব্রিটিশ নারীরা রাজকীয় জীবনযাপনের চেয়ে সাধারণ জীবনযাপনকেই পছন্দ করছেন? নাকি ব্যাপারটা অন্য কিছু। কেউ কেউ তো আবার ঠিকই সম্পদের প্রতি আকর্ষণবোধ করছেন। আর বেশি সম্পদ মানেই তো বিলাসবহুল জীবন। ব্যাপারটি কি এমন যে, প্রিন্স উইলিয়ামের সঙ্গে তো কেটের বিয়ে ঠিক হয়েই গেছে, এখন আর তার প্রতি ঈর্ষা দেখিয়ে লাভ কী হবে! এর চেয়ে আমরা আমাদের জীবনযাপনের পক্ষেই কথা বলি। ব্যাপার যাই হোক রাজকীয় বিয়ে উপলক্ষে এই ধরনের নানা জরিপ কিন্তু হয়েই চলছে।
 

No comments

Powered by Blogger.