খালেদা জিয়ার গণসংযোগ আজ পথসভা শুরু গাবতলীতে, শেষ বাড্ডায়- বাধা দিলে কঠোর কর্মসূচী তরিকুল ॥ শান্তিপূর্ণ না হলে প্রতিরোধ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আজ সারাদেশের সব মহানগরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের গণসংযোগ কর্মসূচী। রাজধানীতে এ কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
অন্য ৬ মহানগরে নেতৃত্ব দেবেন ১৮ দলীয় জোটের অন্য নেতারা। বেলা ১১টায় গাবতলীতে প্রথম পথসভার মধ্য দিয়ে শুরু হবে রাজধানীতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গণসংযোগ। আর বিকেলে বড্ডায় পথসভার মধ্য দিয়ে তাঁর গণসংযোগ কর্মসূচী শেষ হবে। এ কর্মসূচীতে জনতার ঢল নামবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে আজকে কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় কিনা এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দল উভয়ের মধ্যেই টেনশন রয়েছে। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচী পালনে সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেছেন, গণসংযোগ কর্মসূচীতে বাধা দিলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীর জানিয়েছেন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করলে সহযোগিতা, নইলে প্রতিরোধ করা হবে। কোন অবস্থাতেই ১৮ দলকে বিশৃঙ্খলা করতে দেয়া হবে না।
সকাল ১০টার পর গুলশানের বাসা থেকে রওনা দিয়ে খালেদা জিয়া বেলা ১১টায় প্রথম পথসভা করবেন গাবতলীর পুরনো বিউটি সিনেমা হল প্রাঙ্গণে। এরপর কাওরান বাজারের কাঁচাবাজার, যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়ক, সবুজবাগের বালুর মাঠ এবং বাড্ডার ভাটারা মাঠে পথসভা করবেন খালেদা জিয়া। আর পুরান ঢাকার ধোলাইখালে নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি। এ ছাড়া তিনি যখন যে এলাকা দিয়ে যাবেন তখন সে এলাকার রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা জনতাকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাবেন।
গাবতলীতে পথসভা করে কল্যাণপুর, আগারগাঁও সড়ক ও ফার্মগেট হয়ে গণসংযোগ করতে করতে কাওরান বাজারের কাঁচাবাজারে যাবেন খালেদা জিয়া। সেখানে পথসভা শেষে এফডিসি সড়ক হয়ে মগবাজার রেলক্রসিং, মগবাজার মোড়, রমনা থানা সড়ক, বেইলি রোড সড়ক, কাকরাইল মসজিদ, মৎসভবন, হাইকোর্ট হয়ে কার্জন হল সড়ক, নগরভবন, গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মাজার সড়ক, নর্থ সাউথ সড়ক, রায়শাবাজার সড়ক হয়ে ধোলাইখালে যাবেন তিনি। এরপর সেখান থেকে দয়াগঞ্জ সড়ক হয়ে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে পথসভা করবেন বিরোধীদলীয় নেতা। সেখান থেকে সায়েদাবাদ, মানিকনগর, বৌদ্ধ মন্দির হয়ে সবুজবাগের বাসাবো বালুর মাঠে পথসভা করবেন। খালেদা জিয়া এরপর বাসাবো হয়ে খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে মালিবাগ মোড়, মৌচাক, রামপুরা সড়ক দিয়ে বারিধারা মার্কিন দূতাবাস অতিক্রম করে বাড্ডার ভাটারা মাঠে সর্বশেষ পথসভায় বক্তব্য রাখবেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁর দিনব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচী শেষ হবে।
গত ২৮ নবেম্বর নয়াপল্টনের জনসভা থেকে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ৯ ডিসেম্বর সারাদেশে রাজপথ অবরোধ ও ২৫ ডিসেম্বর গণসংযোগ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া। সে মোতাবেক ৯ ডিসেম্বর সারাদেশে রাজপথ অবরোধ পালন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। এরপর ১১ ও ১৩ ডিসেম্বর হরতালও পালন করে তারা। তবে হরতালের আগের দিন ১০ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, গণসংযোগ কর্মসূচী সফল করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচীতে জনতার ঢল নামবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণসংযোগ কর্মসূচীতে সরকার বাধা দিলে সঙ্গে সঙ্গে নতুন কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, রাজধানীতে বুধবার বেলা ১১টায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গাবতলীতে প্রথম ও বাড্ডায় পথসভা করে গণসংযোগ কর্মসূচী শেষ হবে। গণসংযোগকালে তিনি ৬টি স্পটে গেলেও মূলত ৫টি স্পটে বক্তব্য রাখবেন। আর ধোলাইখালে তিনি শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
তরিকুল বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, দ্রব্যমূল্য কমানো, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এ গণসংযোগ কর্মসূচী পালন করা হবে। আমরা আশা করি, জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধে সরকার দাবি মানতে বাধ্য হবে। গণসংযোগ কর্মসূচী সফল করতে প্রশাসন ও নগরবাসীর কাছে সহযোগিতা চান তরিকুল। পাশাপাশি সাময়িক অসুবিধার জন্য জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানান, ঢাকার বাইরের মহানগরীগুলোতে বিএনপি ও ১৮ দলের অন্য শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহণে গণসংযোগ কর্মসূচী পালিত হবে।
তরিকুল বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সিলেটে এমকে আনোয়ার, রাজশাহীতে নজরুল ইসলাম খান, রংপুরে লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান, খুলনায় ড. আবদুল মঈন খান এবং বরিশালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ১৮ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে বুধবার গণসংযোগ কর্মসূচী পালন করবেন।
তরিকুল বলেন, গণসংযোগ কর্মসূচী সফল করতে ইতোমধ্যে ১৮ দলের মহাসচিব পর্যায়ে কয়েক দফা বৈঠক করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীতে প্রচারপত্র বিলি করায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এ ছাড়া বিএনপি ও ১৮ দলের সাংগঠনিক প্রস্তুতিও চলছে। আমরা আশা করি খালেদা জিয়ার এ গণসংযোগে জনতার ঢল নামবে এবং গোটা ঢাকা মহানগরী সরকারবিরোধী সেøাগানে মুখরিত হয়ে উঠবে। তিনি দেশবাসী ও জোটের নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচী সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের জয় সুনিশ্চিত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আর ফিরে যাওয়া যাবে না আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের এমন বক্তব্যের জবাবে তরিকুল বলেন, কোন সরকারই তত্ত্বাবদায়ক সরকার দিতে চায় না। তবে জনগণের চাপে সরকার নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, আমরাও এক সময় এ কথা বলেছিলাম। এরশাদও বলেছিলেন, ক্ষমতা ছাড়বেন না। আবার পাকিস্তানের ইয়াহিয়াও বলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা থাকতে পারেনি। এ সরকারও পারবে না। আশা করি সরকার তার বিরুদ্ধে গণ অনাস্থা দেখে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেশকে নৈরাজ্যের হাত থেকে রক্ষা করবে। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলে আমরা আশাবাদী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, দলের সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও জামায়াত নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
গণসংযোগে বাধা দিলে সরকার ভুল করবে- নজরুল ॥ গণসংযোগ কর্মসূচীতে বাধা দিলে সরকার ভুল করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলের মুক্তি দাবিতে জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নজরুল বলেন, গণসংযোগ কর্মসূচী হবে শান্তিপূর্ণ। তাই এ কর্মসূচীতে সরকার বাধা দিলে এর দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার দলের স্বার্থে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করছে। নির্বাচন কমিশন ও দুদক সরকারের শেখানো বুলি শোনাচ্ছে। তাদের উল্টা-পাল্টা কথা শুনলেই বোঝা যায়, এটা শেখানো কথা। তিনি বলেন, যে মামলায় মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে মামলায় বাদীর স্বাক্ষর নাই, এটা দেখার পরেই সেই মামলা কেন বাতিল করা হচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.