আ. লীগের ১৯তম কাউন্সিল-জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির আহ্বান জানাবেন হাসিনা by পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য

আওয়ামী লীগের আসন্ন ১৯তম জাতীয় সম্মেলন থেকে আগামী সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাবেন দলের প্রধান শেখ হাসিনা। পাশাপাশি সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে দলীয় নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীর উদ্দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার জন্য জাতীয় জাগরণের আহ্বান জানাবেন তিনি।
আগামী ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে দেওয়া শেখ হাসিনার ভাষণের খসড়াটি এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে দলীয় সূত্র ভাষণের এ বিষয়গুলো কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শেখ হাসিনা ধানমণ্ডির নিজ অফিসে গিয়ে সম্মেলনের নানা দিক সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে জানতে চান ও তাঁদের পরামর্শ দেন। নিজ অফিসে সাড়ে তিন ঘণ্টা অবস্থানকালে তিনি সম্মেলনের প্রত্যেক বিভাগের প্রস্তুতি নিয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। সম্মেলন উপলক্ষে ১০টি উপকমিটির প্রত্যেকের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, পদাধিকার বলে আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা নিজেই।
পরে শেখ হাসিনা সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে সম্মেলনের সব কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা চূড়ান্ত করা হয়। আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের জন্য কাল বৃহস্পতিবার কর্মসূচির বিষয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তোলা হবে।
সূত্রে জানা যায়, চূড়ান্ত করা অনুষ্ঠানসূচি অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে নির্মিত মঞ্চে সকাল ১১টায় আসবেন শেখ হাসিনা। মঞ্চ তৈরি হচ্ছে নৌকার আদলে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সেখানে প্রথমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হবে। শেখ হাসিনা এরপর কবুতর ও বেলুন উড়াবেন। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক জেলার নেতারা দলীয় পতাকা উত্তোলন করবেন।
এরপর বঙ্গবন্ধুসহ সব শহীদের উদ্দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। এরপর পবিত্র কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করা হবে। এরপর বর্তমান সরকারের চার বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বড় পর্দায় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। পরে ভাষণ দেবেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। এরপর সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার ভাষণের মাধ্যমে প্রথম পর্বের কাজ শেষ হবে।
দ্বিতীয় পর্বে থাকবে সাধারণ সম্পাদকের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ ও শোক প্রস্তাব। এরপর সাত বিভাগ থেকে সাতজন তাদের নিজ নিজ এলাকার সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করবেন। এরপর নতুন কমিটি নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করে বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। পরে একজন কাউন্সিলর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব করবেন এবং দুজন কাউন্সিলর তাতে সমর্থন দেবেন। এরপর নির্বাচন কমিশন নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করবে। গতকাল চূড়ান্ত করা কর্মসূচি অনুসারে এভাবেই চলবে কাউন্সিলের কার্যক্রম।
শেখ হাসিনা ধানমণ্ডি অফিসে গেলে সেখানে আগে থেকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ডা. দীপু মনি, আ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ড. আবদুর রাজ্জাক, আহমদ হোসেন, মিছবাহ্ উদ্দিন সিরাজ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবদুল মতিন খসরু, নূহ-উল আলম লেলিন, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, ফজিলাতুনেচ্ছা ইন্দিরা, হাবিবুর রহমান সিরাজ, বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাব্লু, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, অসীম কুমার উকিল, মৃণাল কান্তি দাস প্রমুখ।
এদিকে গতকাল এর আগে সাজেদা চৌধুরী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে সম্মেলন উপলক্ষে নির্মাণাধীন মঞ্চ দেখতে যান। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি বলন, বিএনপির গণসংযোগ কর্মসূচিতে সরকার কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি করবে না। কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হতে পারে- বিরোধী দলের নেতাদের এমন আশঙ্কাকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিরোধী দলের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ আগেও বাধা দেয়নি, এখনো দেবে না। সাজেদা চৌধুরীর সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, হাবিবুর রহমান সিরাজ, মির্জা আজম, এনামুল হক শামীম, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.