হারিয়ে যাচ্ছেন এসএ গেমসের সোনাজয়ীরা

গত এসএ গেমসের ঘটনা। তায়কোয়ান্দোতে সোনা জেতার পর জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে কেঁদেছিলেন শারমিন ফারজানা (রুমি) ও শাম্মী আখতার।
আরেকটি এসএ গেমসের আগমনী বার্তা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তার আগে আবারও কাঁদলেন এই দুজন। তবে এবার আনন্দাশ্রু ঝরেনি। কাঁদলেন দুঃখে। আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠেয় এসএ গেমসে যে দেখা মিলবে না কারোরই!
অনেকটা বাধ্য হয়েই তাঁরা খেলা ছেড়ে দিয়েছেন। দুজনেরই অভিযোগ, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলামের (রানা) স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্ব্যবহারের কারণে খেলা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। শাম্মীর কথা, ‘এসএ গেমসে সোনা জয়ের পর ভেবেছিলাম সারা জীবন তায়কোয়ান্দো নিয়েই থাকব। যে খেলা থেকে এত সম্মান পেয়েছি, সারা জীবন সেটাই ধরে রাখব। কিন্তু পারলাম না। এত চাপ সহ্য করে কি খেলায় থাকা যায়?’ মাহমুদুল ইসলামের বিরুদ্ধে শাম্মীর আরও অভিযোগ, ‘ছুটিছাটার কথা বাদই দিলাম। খেলোয়াড়দের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য না দিয়ে তিনি সবকিছুই জোর করে চাপিয়ে দিতেন।’
গত এসএ গেমসে নাকি জোর করে শাম্মীকে কম ওজন শ্রেণীতে খেলিয়েছিলেন মাহমুদুল। ওজন কমাতে কমাতে একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে যান বলে শাম্মী অভিযোগ তুললেন, ‘শক্ত কিছু খেতে দেওয়া হতো না আমাকে। তরলজাতীয় খাবার খেতে খেতেই এমন অবস্থা হয়েছিল। কোনো চিকিৎসা-সুবিধাও পাইনি।’ খেলা ছেড়ে এখন স্বামী-সংসার সামলাচ্ছেন মাগুরার তরুণী। আর কখনো কোর্টে নামা হবে না ভেবে আফসোসই ঝরল তাঁর কণ্ঠে, ‘যখনই ভাবি আর খেলব না, খুব খারাপ লাগে। কিন্তু সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছি, তখন কী আর করব?’
অনূর্ধ্ব-৪৬ কেজি ওজন শ্রেণীতে সোনাজয়ী শারমিন ফারজানার একই ক্ষোভ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে, ‘গত এসএ গেমসের প্রস্তুতির সময় এক পুরুষ খেলোয়াড়ের লাথি লাগে আমার তলপেটে। একপর্যায়ে ব্যথা বাড়তে থাকে। এরপর সমস্যা আরও বেড়ে গেলে রানা স্যারের (সাধারণ সম্পাদক) কাছে গেলে উনি গালাগাল করেন। সেদিন থেকেই ঠিক করেছি, আর তায়কোয়ান্দো খেলব না।’ এসএ গেমসের পর শারমিন আর কোনো প্রতিযোগিতায় খেলেননি। কেন খেলেননি? প্রশ্ন করলে দীর্ঘশ্বাস ঝরে এসএ গেমসের এই সোনাজয়ীর কণ্ঠে, ‘তায়কোয়ান্দোর প্রতি আমার আর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। আমি এখন নিয়মিত হ্যান্ডবল খেলি।’
এসব অভিযোগের ব্যাপারে প্রথমে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান মাহমুদুল ইসলাম, ‘এটা কি টেলিফোনে আলাপ করার বিষয়? এগুলো নিয়ে কিছু জানার থাকলে লিখিত দেন।’ তবে পরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন। তাঁর ভাষ্য, ‘ওদের (দুই সোনাজয়ী খেলোয়াড়) কথা মোটেই সত্য নয়। তারা যা করেছে, সেটা কোনো খেলোয়াড় করতে পারে না। ওরা আমাকে না জানিয়ে ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পরে ওদের পুলিশ দিয়ে খুঁজে এনেছি। আমি একটা সোনা জেতার জন্য শুধু গালি কেন, প্রয়োজনে আরও কঠোর হব। কাজে গাফিলতি হলেই কেবল ওদের বকা দিই। আমি কি কাজের পরে কখনো বকা দিয়েছি? ওদের সঙ্গে কি আমার দুশমনি আছে?’
শুধু ফারজানা-শাম্মী নন, গত এসএ গেমসে সোনাজয়ী আরও একজন খেলোয়াড় বলতে গেলে খেলাই ছেড়ে দিয়েছেন। আরেকজন চলে গেছেন ভিন্ন খেলায়। এঁরা হলেন কারাতের জ উ প্রু, উশুর মেসবাহ উদ্দিন। জ উ প্রু ফেডারেশনের কোনো ক্যাম্পে আসছেন না এক বছরের বেশি সময় ধরে। মেসবাহ উশু ছেড়ে নাম লিখিয়েছেন ১০ মিটার এয়ার পিস্তল শ্যুটিংয়ে। গত বছর জাতীয় এয়ারগান শ্যুটিংয়ে ব্রোঞ্জ পান নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের হয়ে।
খেলা ছাড়া প্রসঙ্গে জ উ প্রু বলছেন, ‘আমাকে এখনো ফেডারেশন থেকে কোনো চিঠি দেয়নি। আমি তাই সেভাবে প্রস্তুতিও নিচ্ছি না।’ মেসবাহর কথা, ‘উশুর কোনো কার্যক্রম চলছে না, তাই আমি শ্যুটিংয়ে চলে গেছি।’
এসএ গেমসে সোনাজয়ীদের ক্যারিয়ার এগিয়ে যাওয়াই ছিল প্রত্যাশিত। অথচ তাঁরা কিনা হারিয়ে যাচ্ছেন!

No comments

Powered by Blogger.