কাশ্মীরে নতুন পথরেখা

সম্প্রতি পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে এক সম্মেলন হয়ে গেছে। সম্মেলনটি বিশ্ববাসীর যত মনোযোগ আকর্ষণ করার কথা ছিল দুর্ভাগ্যবশত তা পারেনি। গত ৫ নবেম্বর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় এক নারী সম্মেলন।
নারী নাগরিক অধিকারকর্মীদের একটি প্রতিনিধি দল প্রথমবারের মতো কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে সম্মেলনে যোগ দেয়। এর আগে ২০০৭ সালের নবেম্বরে শ্রীনগরে ও ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে গুলমার্গে এমন সম্মেলন হয়েছিল।
সম্মেলনের অনন্য বিশেষত্ব হলোÑএ অঞ্চলের পাঁচটি এলাকা যথা আজাদ কাশ্মীর, গিলগিট-বাল্টিস্তান, লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকার নারীরা এতে অংশ নিয়েছিল। মোটামুটিভাবে তিনটি বিষয় নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে, যথাÑলিঙ্গ ও শান্তি বিনির্মাণ এবং নারীদের আখ্যান অনুধাবন, শান্তি বিনির্মাণে নারীদের ক্ষমতায়ন এবং কাশ্মীরে নারীদের নিয়ে নিরাপত্তা গড়ে তোলা ও শান্তি বিনির্মাণ করা। সম্মেলন শেষে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত যে বিবৃতি পরিবেশিত হয় তার বক্তব্য বিষয় ছিল আরও সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট। বিবৃতিতে নিয়ন্ত্রণ রেখার উভয় দিকে যাওয়া-আসার সুবিধার্থে স্মার্টকার্ড চালু করার প্রস্তাব দেয়া হয় এবং নারী শিল্পোদ্যোক্তা, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক ও সংঘাত নিরসন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যোগাযোগ ও আদান-প্রদান বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে দুটি সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের প্রস্তাব করা হয়। একটি হলো নারী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে ভাঙ্গা সম্পর্ক জোড়া লাগানো এবং কাশ্মীরের পূর্ব ও পশ্চিমাংশের মধ্যে আদর্শগত ব্যবধান দূর করার লক্ষ্যে শান্তির অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার জন্য একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা। অন্যটি হলো নিয়ন্ত্রণ রেখার উভয়দিকে মানবাধিকার, মানবিক ও অন্যান্য ইস্যুর ওপর মহিলাদের একটি টাস্কফোর্স গড়ে তোলা।
দু’দেশের শান্তি আলোচনা কার্যত থমকে থাকার প্রেক্ষাপটে সম্মেলনে ভারি আর্টিলারি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া, স্থলমাইন অপসারণ, সিয়াচেন অঞ্চলকে অসামরিকীকরণ ও একে শান্তির এলাকায় রূপান্তরের প্রস্তাব দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা হয়। এতে যেসব প্রস্তাব দেয়া হয় সেগুলো ছিল বাস্তবসাধ্য, সুনির্দিষ্ট এবং পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক।
মিরওয়াইজ ওমর ফারুকের নেতৃত্বাধীন হুররিয়াতের মধ্যপন্থী অংশের চলতি মাসেই পাকিস্তান সফর করার কথা। এ সফরে তারা শিল্প ও বণিক ফেডারেশন, আইনজীবী, শিক্ষাবিদসহ সমাজের সকল অংশের প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করে কাশ্মীর সমস্যার বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক নিয়ে তাদের মতামত জানার চেষ্টা করবেন বলে জনাব ফারুক জানিয়েছেন। ১৯৯০ সালে আততায়ীর হাতে মিরওয়াইজ মৌলভী ফারুকের মৃত্যুর পর তার ছেলে মিরওয়াইজ ওমর ফারুক পাকিস্তানপন্থী ২৩টি কাশ্মীরী উপদলকে জোটবদ্ধ করেন। গত দু’দশক ধরে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। অনেক সময় তিনি সমস্যা সমাধানের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত দিতে পারেননি। না দিতে পারার কারণ বোধগম্য। তিনি বাইরের শক্তিগুলোর ওপর আশা রাখেন অথচ তাদের কেউই কাশ্মীর নিয়ে আগ্রহী নয়। এমন একটি বৃহৎশক্তি নেই যে, এই ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট কোন প্রস্তাব দেবে। কারণ তেমন কোন প্রস্তাব দিলে দুই পক্ষই অসন্তুষ্ট হবে এবং তখন দুটো দেশই বিগড়ে যাবে সেই বৃহৎশক্তির ওপর। তারপরও মিরওয়াইজ অভিযোগ করে বলেছেন যে, ফিলিস্তিন, বর্মা, সিরিয়া ও কাশ্মীরের মতো সমস্যাগুলোর সমাধানের দায়িত্ব আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তারা সেই দায়িত্ব পালন করছে না।
১৯৬৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা পরিষদ শেষবারের মতো কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বসেছিল। কিন্তু তারপর থেকে আর একটিবারের জন্যও বসেনি। মিরওয়াইজ বার বার ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার মুখাপেক্ষী হয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করার কোন উপায় এই সংস্থাটির নেই। নিরাপত্তা পরিষদও এমন কোন ভেন্ডিং মেশিন নয় যে, রাষ্ট্রবর্গ একটা সমস্যা নিয়ে এলো এবং তার সমাধানও পেয়ে গেল। নিরাপত্তা পরিষদে রয়েছে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী পাঁচ রাষ্ট্র। সেখানে প্রতিটি রাষ্ট্র বিচারক হিসেবে কাজ করে না, বরং করে রাষ্ট্র হিসেবে এবং নিজের জাতীয় স্বার্থে পরিস্থিতি মূল্যায়নের দ্বারা চালিত হয়। এ পাঁচটি দেশ বাহ্যত এমন একটি মূল্যায়ন করেছে যে, শান্তির প্রতি হুমকি সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত কাশ্মীরের বর্তমান বিরোধ অব্যাহত থাকলে তাদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
চলমান ডেস্ক

No comments

Powered by Blogger.