মেলবোর্ন টেস্ট- টেস্টের আগে ‘চিঠি বিতর্ক

আবহাওয়া বাগড়া না দিলে বক্সিং ডে টেস্ট শুরু হয়ে গেছে। এই লেখা যখন পড়ছেন, বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তরও জেনে গেছেন অনেকেই।
তবে টেস্টের আগের দিন মাঠের ক্রিকেট ছাপিয়ে বেশি আলোচনায় ছিল সেই প্রশ্নগুলোই। মাহেলা জয়াবর্ধনের সঙ্গে টস করবেন কে, মাইকেল ক্লার্ক না শেন ওয়াটসন? পাঁজরের চোট কাটিয়ে নুয়ান কুলাসেকারা শেষ পর্যন্ত একাদশে আসতে পারবেন তো! লঙ্কানদের নিয়ে অবশ্য এর চেয়েও বড় প্রশ্ন, মহা গুরুত্বপূর্ণ টেস্টের আগে ‘চিঠি বিতর্ক’ দলের মনোযোগ কতটা নাড়িয়ে দিল!
টেস্ট-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জয়াবর্ধনে দাবি করেছেন, ‘এতটুকুও না।’ ‘চিঠি বিতর্ক’ ব্যাপারটা বোধহয় আগে জেনে নেওয়া দরকার। ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির ক্রিকেটারদের প্রাপ্য অর্থ দলের অন্য সব সদস্য, মাঠকর্মী ও কিউরেটরদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চেয়ে বোর্ডের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন জয়াবর্ধনে। লঙ্কান অধিনায়কের যুক্তি ছিল, ক্রিকেটারদের সঙ্গে তাঁরাও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন ওই টুর্নামেন্টে। কিন্তু ‘প্রচলিত ধারার বাইরে যাওয়া যাবে না’ বলে জয়াবর্ধনের অনুরোধ বাতিল করে দেয় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি)।
এতে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু গোপন ওই চিঠি ছাপা হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিরর পত্রিকায়। ক্ষুব্ধ জয়াবর্ধনে এবার ম্যানেজার চারিথ সেনানায়েকের মাধ্যমে আরেকটি চিঠি পাঠান ওই পত্রিকায়। লঙ্কান অধিনায়কের ওই চিঠি ছাপা হয় ২১ ডিসেম্বরের ডেইলি মিররে, ‘শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের কাছে পাঠানো একটি গোপন চিঠি ১৯ ডিসেম্বরের ডেইলি মিরর পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে আমি ভীষণ হতাশ। এটি ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফদের বিব্রত করেছে।’ এই চিঠির শেষ দিকে জয়াবর্ধনে লিখেছিলেন, গোপন চিঠি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ক্রিকেট শ্রীলঙ্কার ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন তিনি।
এই লাইনটাই বিপাকে ফেলেছে তাঁকে। এসএলসির কার্যনির্বাহী কমিটি জানিয়েছে, অধিনায়ক ও ম্যানেজার দুজনই চুক্তির বরখেলাপ করেছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। বক্সিং ডে টেস্টের আগে অধিনায়ককে ঘিরে এমন বিতর্ক শ্রীলঙ্কা দলে স্বাভাবিকভাবেই একটু অস্বস্তির জন্ম দিয়েছে। জয়াবর্ধনে অবশ্য এটিকে পাত্তা দিতেই রাজি নন, ‘আমার মনে হয় না, এতে আমাদের মনোযোগ নড়ে যাবে। এমন কিছু তো এই প্রথম হলো না! আর সত্যি বলতে, আমি বুঝতে পারছি না, আমি দোষটা কী করলাম। গোপন দলিল তারা ফাঁস করেছে, আমি স্রেফ জিজ্ঞেস করেছি, “এটা কীভাবে হলো?” আমার আশা, শিগগিরই ব্যাপারটার সমাধান হবে। তারা বুঝবে, আমি কোনো অন্যায় করিনি। আপাতত আমার মনোযোগ এই সফরে, দলের হয়ে সেরাটা দিতে চাই। আমার তো মনে হয়, ছেলেদের বেশির ভাগ এসব কিছু জানেই না।’
প্রথম টেস্টে হেরে যাওয়ার পর মেলবোর্ন টেস্ট শ্রীলঙ্কার জন্য ফিরে আসার লড়াই। এমসিজি তাদের একটু তাতিয়েও দিতে পারে। ১৯৯৫ সালের পর এই প্রথম মেলবোর্নে টেস্ট খেলতে নামছে শ্রীলঙ্কা। ১৯৯৫ সালের বক্সিং ডে টেস্টকে ক্রিকেট ইতিহাসে স্থায়ী জায়গা দিয়েছে মুত্তিয়া মুরালিধরনের সেই ‘নো বল’ বিতর্ক। সেবারই আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার প্রথমবারের মতো থ্রোয়িংয়ের দায়ে ‘নো’ ডেকেছিলেন মুরালিকে। এই মাঠে শ্রীলঙ্কান দলের প্রতি দর্শকদের বিরূপ আচরণেরও ইতিহাস আছে। জয়াবর্ধনে অবশ্য এটিকে থোড়াই কেয়ার করছেন। এবারও এমন কিছু হলে বরং সেটিকে উল্টো অনুপ্রেরণা বানাতে চান তিনি, ‘এখানে আমাদের অনেক বৈরী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে, ১৯৯৫ সালে, এর পরেও। তবে এসব আমাদের বিচলিত করে না। বরং আমাদের বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে।’ ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.