গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার: ঢাকা ও চট্টগ্রামে আরও পাঁচ লক্ষাধিক মিটার বসানোর উদ্যোগ- গ্রাহকের খরচ কম, জ্বালানিরও সাশ্রয় by অরুণ কর্মকার

তিতাস গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারে আবাসিক গ্রাহকদের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে প্রায় এক-চতুর্থাংশ। হিসাব করে গ্যাস ব্যবহার করায় তাঁদের এই অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। এতে তাঁরা খুশি। অন্যদিকে, গ্যাসের ব্যবহার কম হওয়ায় দেশের জ্বালানির সাশ্রয় হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় খাতের তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার মোহাম্মদপুর ও লালমাটিয়া অঞ্চলের আবাসিক গ্রাহকদের জন্য যে সাড়ে চার হাজার প্রি-পেইড মিটার বসিয়েছে, সেখান থেকে এই সাশ্রয়ের হিসাব পাওয়া গেছে।
এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আরও পাঁচ লক্ষাধিক আবাসিক গ্রাহকের জন্য প্রি-পেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি আলাদা প্রকল্পের অধীনে দুই লাখ আট হাজার ৬০০ মিটার বসানোর কাজ আগামী বছর শুরু হবে। আরও তিন লাখ কিংবা এরও বেশি মিটার বসানোর কাজ শুরুর সময় আগামী মাসে (জানুয়ারি, ২০১৩) ঠিক হবে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও তিতাসের নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের আইরিন সুলতানা বলেন, বাসায় প্রি-পেইড মিটার বসানোর পর তাঁরা ডাবল বার্নারে প্রতি মাসে গড়ে ৩৫০ টাকার গ্যাস ব্যবহার করছেন। গ্যাস ব্যবহার করছেন হিসাব করে। তবে, আগের চেয়ে খুব কম গ্যাস ব্যবহার করছেন, তা-ও নয়। ফলে তাঁদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আগে ডাবল বার্নারের জন্য মাসে নির্ধারিত ৪৫০ টাকা বিল দিতেন। ফলে টাকারও সাশ্রয় হচ্ছে।
লালমাটিয়া ডি ব্লকের মোবারক হোসেন বলেন, প্রি-পেইড কার্ডে এক হাজার টাকা রিচার্জ করলে তিন মাস চলে যায়। তবে শীতকালে গ্যাসের ব্যবহার কিছুটা বেড়েছে। তাঁর ধারণা, এর পরও খরচ মাসে ৪০০ টাকার নিচেই থাকবে। তিনি বলেন, প্রি-পেইড মিটার লাগানোর পর শুরুর দিকে তিনি মাসে ৪৫০ টাকা রিচার্জ করতেন। কিন্তু এক মাসে ওই টাকার গ্যাস ব্যবহূত হয়নি। পরে এক হাজার টাকা রিচার্জ করে দেখলেন, তিন মাস চলছে।
তিতাসের সূত্র জানায়, সাধারণত ডাবল বার্নার ব্যবহারকারী একজন আবাসিক গ্রাহক প্রতি মাসে গড়ে ৮৭ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করেন—এই হিসাব করে মাসিক বিল ৪৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে (প্রতি ঘনমিটার পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা প্রায়)। কিন্তু প্রি-পেইড মিটারে গড়ে ৭৫ ঘনমিটারের বেশি গ্যাস ব্যবহূত হচ্ছে না। ফলে প্রচুর পরিমাণ জ্বালানির সাশ্রয় হচ্ছে। এভাবে সাশ্রয় বাড়ানো গেলে বর্তমানে আবাসিক খাতে যে পরিমাণ গ্যাস (মোট ব্যবহারের প্রায় ১২ শতাংশ) সরবরাহ করা হয়, তা অপরিবর্তিত রেখেই অনেক নতুন গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া সম্ভব।
প্রি-পেইড মিটার পদ্ধতিতে গ্রাহকের আঙিনায় একটি মিটার বসিয়ে গ্রাহককে নির্দিষ্ট নম্বরযুক্ত একটি কার্ড দেওয়া হয়। গ্রাহক নির্ধারিত ব্যাংকে গিয়ে ওই কার্ডের নম্বরে টাকা রিচার্জ করেন। গ্রাহক কত টাকার গ্যাস ব্যবহার করলেন বা তাঁর আর কত টাকা অবশিষ্ট রইল, তা তিনি প্রতিদিন মিটারেই দেখতে পারেন। ওই টাকা ফুরানোর আগে রিচার্জ করতে হয়।
রিচার্জ করা টাকা শেষ হলে মিটার বন্ধ হয়ে যায়। তবে টাকা রিচার্জ করলে মিটার আবার চালু হয়। প্রি-পেইড মিটারে গ্যাস ব্যবহার করা বেশ কয়েকজন গ্রাহক বলেন, এই ব্যবস্থা আর্থিকভাবে যেমন সাশ্রয়ী, তেমনি ব্যাংকে গিয়ে গ্যাসের বিল দেওয়ার চেয়ে রিচার্জ করা সহজ।
প্রি-পেইড মিটার সম্প্রসারণের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে টিজিটিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল আজিজ খান প্রথম আলোকে বলেন, তিতাসের নিজস্ব অর্থায়নে দুই লাখ প্রি-পেইড মিটার বসানোর কাজ এ বছরই শুরুর পরিকল্পনা ছিল। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সমস্যার কারণে তা কিছুটা পিছিয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে এগুলো বসানোর কাজ শুরু হবে। এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ২৭০ কোটি টাকা।
আবদুল আজিজ খান বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে আট হাজার ৬০০ প্রি-পেইড মিটার বসানোর কাজও আগামী বছর শুরু হবে। জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সহায়তায় আরও তিন লাখ প্রি-পেইড মিটার বসানো হবে। প্রকল্পটি শুরুর সময় ও ব্যয় নির্ধারণের জন্য জানুয়ারিতে জাইকার একটি কারিগরি দল ঢাকায় আসছে। বিশ্বব্যাংকও গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার বসানোর কাজে সহায়তার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে।

No comments

Powered by Blogger.